দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা
২৮ মে ২০২৩ ২০:২৫
ঢাকা : ঋণ গ্রহিতাদের নানামুখী ছাড় দেওয়ার পরেও বেড়েছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গত মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এটি মোট বিতরণকৃত ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর মধ্যে সর্বশেষ তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০২২ সালের মার্চ শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। সর্বশেষ এক বছরে খেলাপি বেড়েছে ১৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। রোববার (২৮ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ খেলাপি ঋণের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) শেষে দেশের ব্যাংক খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এটি মোট বিতরণকৃত ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণের মধ্যে সরকারি ব্যাংক ঋণ বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৯১ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৫৭ হাজার ৯৫৮ টাকা। বেসরকারি ব্যাংক ১১ লাখ ৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৬ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। বিশেষায়িত ব্যাংক ৩৬ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা বিতরণ করেছে এর মধ্যে খেলাপি ৪ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংক ৬২ হাজার ২৭ কোটি টাকা বিতরণ করেছে তাদের খেলাপি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪২ কোটি টাকা।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্তমতে, পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণ, সন্দেহজনক ঋণ ও আদালতের আদেশে খেলাপি স্থগিতাদেশ থাকা ঋণকেও খেলাপি হিসেবে দেখাতে হবে। আএমএফ’র হিসাবে খেলাপি দাঁড়াবে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, করপোরেট গভর্ন্যান্স ও খেলাপি ঋণকে দেশের ব্যাংক খাতের বড় দুই সমস্যা। পরিকল্পনার মাধ্যমে আমাদের ব্যাংকিং সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নৈতিকতার অনুশীলন প্রয়োগ করতে হবে। খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের আরও ভূমিকা পালন করতে হবে।
এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঋণগ্রহিতাদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের পরিবর্তে ঋণ যাতে দিতে না হয় সেজন্য একের পর এক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বিশেষকরে সুদ কমিয়ে পরিশোধেরে মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার ঋণের কিস্তির পরিমাণও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও আইএমএফ‘র শর্তের কারণে খেলাপি ঋণ যাতে না বাড়ে সে জন্য নানা শর্ত শিথিল করা হয়েছে। তারপরেও খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এতে বোঝা যায় খেলাপি ঋণের অবস্থা কতটা ভয়াবহ।’
তিনি বলেন, ‘সঠিকভাবে ঋণের হিসাব করলে দেশে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি হবে।’
সারাবাংলা/জিএস/একে