এস এস বিদ্যুৎকেন্দ্র: জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলক সরবরাহ শুরু
২৪ মে ২০২৩ ১৭:৪৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলকভাবে সরবরাহ শুরু হয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে বুধবার (২৪ মে) দুপুরে এক নম্বর ইউনিট থেকে ১ মেগাওয়াট দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হলেও বিকেল সাড়ে তিনটার পর তা ১০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়।
এই কেন্দ্র থেকে রাতে পিক আওয়ারে সর্বোচ্চ ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।
এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের উপ-প্রকল্প পরিচালক (ইলেকট্রিক্যাল) প্রকৌশলী মো. ফয়জুর রহমান সারাবাংলাকে জানান, দুপুর থেকে পিজিসিবি জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ নেওয়া শুরু করেছে। এক মেগাওয়াট দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও ধীরে ধীরে উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়তে থাকে। রাতে পিক আওয়ারে সর্বোচ্চ ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেবে পিজিসিবি। যদিও এক নম্বর ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষ।
এর আগে, জুনে পূর্ণমাত্রায় বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল দেশের বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এস এস পাওয়ার প্ল্যান্ট। যদিও এপ্রিল থেকে সেটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমদানি করা কয়লা বোঝাই জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর পথ তৈরি করতে না পারায় উৎপাদন পিছিয়ে যায়।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীরবিক্রম বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শনে এসে জানিয়েছিলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোদমে চালু হলে দেশে উৎপাদন সক্ষমতা ৩০ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে।
গত ১৪ জানুয়ারি ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টটি জাতীয় গ্রিডের ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনের সঙ্গে যুক্ত হয়। প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে যৌথভাবে বিনিয়োগ করেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ ও চীনা প্রতিষ্ঠান সেপকো-এইচটিজি। এই প্রকল্পের ৭০ শতাংশের মালিকানা এস আলম গ্রুপের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের।
অবশিষ্ট ৩০ শতাংশের মধ্যে সেপকো ২০ শতাংশ এবং চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান এইচটিজি ১০ শতাংশের মালিক। এটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প হলেও সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির কারণে পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা নেই। এই প্রযুক্তিতে কম কয়লা পুড়িয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। বাংলাদেশের শতভাগ বিদ্যুতায়ন ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এই প্রকল্প।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও এসএস পাওয়ারের মধ্যে চুক্তি সইয়ের পর ২০১৬ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ যৌথভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং। চুক্তিতে ৪৫ মাসের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার বাধ্যবাধকতা ছিল। সে হিসাবে ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর কেন্দ্রটিতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় পরে সময় বাড়ানো হয়। চুক্তি অনুযায়ী পিডিবি ২৫ বছর ধরে এই কেন্দ্রে উৎপাদিত সব বিদ্যুৎ কিনবে।
কেন্দ্রের দুই ইউনিটের প্রতিটির উৎপাদনক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট। উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বাঁশখালী থেকে চট্টগ্রামের মদুনাঘাট পর্যন্ত সঞ্চালন লাইনের ১৯৮টি টাওয়ার বসানো হয়েছে। মদুনাঘাট সাব-স্টেশনে যে গ্রিড আছে, সেই গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হবে। সঞ্চালন লাইনটি তৈরি করেছে পিজিসিবি।
সারাবাংলা/আইসি/আরডি/এনএস