ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবলীলার ছাপ রাখাইনজুড়ে
১৭ মে ২০২৩ ০৯:৫৪ | আপডেট: ১৭ মে ২০২৩ ১৪:১৪
বঙ্গোপসাগর থেকে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা গত রোববার (১৪ মে) পুরো শক্তি নিয়ে আঘাতে হানে মিয়ানমারে। এদিন সন্ধ্যায় ঘণ্টায় প্রায় ২০৯ কিলোমিটার বাতাসের বেগ নিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি সমুদ্রভাগ ছেড়ে স্থলভাগে আছড়ে পড়ে। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে কয়েক ঘণ্টা তাণ্ডবলীলা চালিয়ে শক্তি ক্ষয় করে সাধারণ ঝড়ে পরিণত হয় মোখা। তবে তার আগে মোখার প্রবল রূপ দেখেছে মিয়ানমারবাসীরা। ঘূর্ণিঝড়টি স্থলে আঘাত হানার দ্বিতীয় দিন থেকে তাণ্ডবলীলার ছাপ সামনে আসছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা সহিংসতায় জর্জরিত রাখাইন রাজ্যকে আরও বিধ্বস্ত করে রেখে গেছে। রাজ্যজুড়ে ছোট-বড় শহর, অসংখ্য গ্রাম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ওই রাজ্যের রাজধানী সিত্তওয়ে এবং শহর ম্রাউক-ইউ, কিউকতাও, মিনবিয়া এবং আশেপাশের জনপদের বেশিরভাগ বাড়িঘর ও স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে।
মিয়ানমারের জান্তা সরকার নিয়ন্ত্রিত টিভি চ্যানেল মায়াওয়াদ্দি সোমবার ঘোষণা করেছে, ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে দেশব্যাপী ৮৬৪টি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। যার মধ্যে ৫৮৮টিই রাখাইনে।
মিয়ানমার নাউ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোখা সমুদ্র ছেড়ে স্থলভাগে প্রবেশ করার পর তার তাণ্ডবে কিউকতাও শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ বাড়িই ধ্বংস হয়ে গেছে। ওই শহরের কাছাকাছি অভ্যন্তরীনভাবে বাস্তুচ্যুতদের অন্তত তিনটি ক্যাম্প (আইডিপি ক্যাম্প) মোখার আঘাতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ক্যাম্পে সামরিক সরকারের সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষের আশ্রয় ছিল। এছাড়া এসব ক্যাম্পে বহু রোহিঙ্গারাও আশ্রয় নিয়েছিল।
কিউকতাও ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান কিয়াও সো লুইন মিয়ানমার নাউকে জানান, কালাদান নদীর তীরবর্তী একটি গ্রামে কয়েকটি বাড়ি কেবল টিকে আছে। বাকিগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘আইডিপি ক্যাম্পগুলো মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এই পরিস্থিতি কেবল শহরের। আমরা গ্রামের অবস্থা এখনও পুরোপুরি জানি না। সেখানে আমরা এখনও পৌঁছাতেই পারিনি।’
কালাদান নদীর পূর্ব তীরের ছোট মফস্বল কিয়ুতে। স্থানীয় এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, এই এলাকার ২৯০টি বাড়ির ১০টি ছাড়া বাকি সবগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ম্রাউক-উ শহরের পার্শ্ববর্তী ইয়োক চাউং এলাকার একটি গ্রামে অন্তত ৩০০ পরিবারের বাস। গ্রামের এক ব্যক্তি মিয়ানমার নাউকে বলেছেন, তার সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ বাড়ি ঝড়ের মধ্যে হারিয়ে গেছে, তবে কেউ হতাহত হননি। তিনি বলেন, ‘বড়, মজবুত, ইটের ঘর এবং ছোট কাঠের ঘর— সব ধরনের বাড়িই ধ্বংস হয়ে গেছে।’
ইয়োক চাউং নামক এলাকার বাসিন্দা প্রায় ১৩০০। ঘূর্ণিঝড় থেকে বাঁচতে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন তারা। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে স্কুলের একটি অংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ম্রাউক-ইউ-এর এনগা সুয়েলে নামক গ্রামে ৮০ পরিবারের বাস। ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে মঠ ও কমিউনিটি হলসহ প্রায় পুরো গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে। স্থানীয় মিডিয়া আউটলেট ওয়েস্টার্ন নিউজের একটি প্রতিবেদনে মঠের অধ্যক্ষ ভেন পাইনিয়াভান্সার বরাতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দুপুর ১টার দিকে বাতাস বইতে শুরু করে এবং বিকেল ৪টার দিকে মঠটি ভেঙে পড়তে শুরু করে। সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে, গ্রামবাসীদের থাকার জায়গা নেই।’
উল্লেখ্য, রাখাইন রাজ্যে কয়েকশ মানুষ মারা গেছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখনও শত শত মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। রাখাইনেরপ্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামগুলোর চিত্র এখনও পুরোপুরি সামনে আসেনি। এ পর্যন্ত কেবল শহর ও আশেপাশের গ্রামের চিত্র পাওয়া গেছে।
সারাবাংলা/আইই