আইএমএফ কর্মসূচি নিয়ে গেলে সে দেশে বৈষম্য বাড়ে: দেবপ্রিয়
১৫ মে ২০২৩ ১৯:৫০
ঢাকা: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কোনো দেশে কর্মসূচি নিয়ে গেলে সেদেশে অনেক সময় বৈষম্য বেড়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, ‘তারা (আইএমএফ) যেসব শর্ত দেয়, তার কারণেই এটি হয়। এমনকি আইএমএফের নিজস্ব গবেষণায়ও এটি উঠে এসেছে।’
সোমবার (১৫ মে) ‘আইএমএফের সময়কালে অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের কথা জাতীয় বাজেটে কীভাবে প্রতিফলিত হতে পারে’ শীর্ষক সিপিডি-নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সংলাপে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সভাপতিত্ব করেন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল।
আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে, তার শর্তের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভর্তুকি হ্রাস। এ প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘ভর্তুকি অনেক সময় ভালো হয়, আবার খারাপও হয়। বিদ্যুৎ খাতে যে বিপুল পরিমাণে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে, তা দিয়ে সার ও ডিজেলের মতো খাতেও ভর্তুকি বাড়ানো সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘দেশের বাজেট এখন অনাথ আর আইএমএফ তার পালক পিতা। আইএমএফ যখন কোনো দেশে কর্মসূচি নিয়ে যায়, তখন সেই দেশের অর্থনীতির ওপর এক কর্তৃত্ব আরোপ করে বা আরোপের চেষ্টা করে।’
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আইএমএফ বাড়তি কর আদায়ের কথা বলেছে। এর সঙ্গে দ্বিমত করার সুযোগ নেই। কিন্তু কাদের কাছ থেকে সেই কর আদায় করা হবে, সেটাই বড় কথা। এ ছাড়া দেশে কর আদায়ের আদর্শ ব্যবস্থা নেই।’
ব্যাংকের সুদহার উন্মুক্ত বা বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছে আইএমএফ। এ প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে এটা করাই উচিত।’
তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘দেশে সুদহার বৃদ্ধির অভিঘাত পড়ে মূলত এসএমই খাতে, সে দিকেও খেয়াল রাখা উচিত। সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি অনেক সময় প্রচারের অভাবে গরিব মানুষের নজরে আসে না। সে জন্য তারা সেগুলোর সুবিধা নিতে পারেন না। এ ছাড়া খাদ্য সহায়তার জন্য যত কার্ড দেওয়া হয় তা অপ্রতুল।’
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলাই ভালো। আসল কথা হচ্ছে দরিদ্ররা বঞ্চিত। তারা কীভাবে বঞ্চিত হয় আমি দেখেছি। পদ্ধতিগত কারণে তারা বঞ্চিত। সরকারি বরাদ্দ সব সময় তাদের কাছে পৌঁছায় না। আইএমএফ এখানে কোনো ফ্যাক্টর নয় এবং আমরা আইএমএফ-এর ওপর নির্ভরশীল নই। মিশন আসবে মিশন আসবে বলে এত কথা বলারও কিছু নেই। অনেকে আবার বলেন দাতাগোষ্ঠী। কিসের দাতাগোষ্ঠী? ঋণ করে অর্থ এনে সুদাসলে ফেরত দেই।’
আইএমএফ কোনো শর্ত দেয়নি উল্লেখ করে এম এ মান্না বলেন, ‘যা দিয়েছে তা শর্ত নয়। এগুলোকে শর্ত বলা ঠিক নয়। বলা যেতে পারে রিকয়ারমেন্ট।’
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ আছে। গত মাসে সামান্য একটু কমেছে, মন্দের ভালো। মজুরিও একটু বেড়েছে।’
অর্থ পাচার ও রিজার্ভ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘হুন্ডির সঙ্গে পারি না। আর রিজার্ভ নিয়ে বাড়াবাড়ি করি না। রিজার্ভ বাড়বে, কমবে—এটাই স্বাভাবিক। ইদানীং যেহেতু পরিমাণটা বেড়ে গিয়েছিল, তাই চোখে পড়েছে বেশি। আগে তো কেউ খবরও রাখতেন না।
সারাবাংলা/জিএস/আইই