বাঁশখালীর এমপির বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের
১৩ মে ২০২৩ ২১:৫৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: অপমান-অপদস্থ করার অভিযোগ এনে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে কার্যত ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
শনিবার (১৩ মে) সকালে বাঁশখালীতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে কয়েকজন এমপির বিরুদ্ধে কড়া বক্তব্য দেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা অসিত সেন এতে সভাপতিত্ব করেন। সারাবাংলার কাছে এ সংক্রান্ত বক্তব্যের অডিও রেকর্ড সংরক্ষিত আছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের মৌলভী ছৈয়দের (বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রতিবাদ করতে গিয়ে হত্যার শিকার) ভাই মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলীর মৃত্যুর পর যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হয়নি। আমরা তার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ ছিলাম, সেখানে হামলা চালানো হয়েছিল। আমাদের আন্দোলনের বিরোধিতা করে এমপি সাহেব বলেছেন, আশরাফ আলী মুক্তিযোদ্ধা নয়, বাঁশখালীতে মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। এখনও এমপি সাহেব তার জায়গায় অটল আছেন।’
‘১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের দিন। সেদিন বলা হয়েছে, আমরা মুক্তিযোদ্ধা কি না সেটি কোরআন শরীফ ধরে বলতে হবে, যে কারণে আমরা সংবর্ধনা নিতে সেখানে যাইনি। আমাদেরকে যিনি সম্মান দেবে, আমরা তাকে সম্মান দেব, তার থেকে সংবর্ধনা নেব। অন্যথায় সংবর্ধনা নেওয়ার যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি না। এসব কারণেই আমরা উপজেলা প্রশাসনের সংবর্ধনা নেওয়া থেকে বিরত থেকেছি।’
দুই দফায় নির্বাচিত এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘এখন উনি মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করছেন। এমপি সাহেব ১০ বছরের কাছাকাছি ক্ষমতায় আছেন, কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে ডেকে এক কাপ চা খাওয়াতে দেখিনি। ২৬ মার্চ আসার আগে ১৬ ডিসেম্বরের সমস্যাটা সমাধান করা উচিত ছিল। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ৩০ লক্ষ শহীদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। দেশব্যাপী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।’
‘অথচ একইভাবে ২০১৮ সালে বাঁশখালীর এমপি পটিয়ার জনসভায় মুক্তিযুদ্ধে তিন লক্ষ শহীদ হয়েছে বলে সাত মিনিট বক্তব্য রাখেন। যা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ হন। সেদিন চিৎকার করে বলেছিলাম বাঁশখালীর এমপি ইতিহাস বিকৃতি করেছেন। মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী সাহেব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে নিয়েও কটুক্তি করেছেন। কাদের ভাইও একজন মুক্তিযোদ্ধা।’
এমপির উদ্দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাক বলেন, ‘আপনি প্রধানমন্ত্রীর সামনে মায়াকান্না করে বলেছেন- আপনি নিজের জন্য কিছু করেননি, আওয়ামী লীগের জন্য করেছেন। কিন্তু কী করেছেন সবাই জানে। আপনি কে, কে ছিলেন, কোথা থেকে কী হয়েছেন সব বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে রিপোর্ট আছে। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মা বলেন, দাদা বলেন উনি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেন না।’
“খন্দকার মোশতাকও বঙ্গবন্ধুর পিতার জানাজায় বেশি কেঁদেছিলেন। সেই খন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধু হত্যার মহানায়ক। যারা বেশি তোষামোদি করে তাদের চরিত্র সম্পর্কে শেখ হাসিনা যদি জানে না মনে করেন সেটি ভুল। কোনো ছলচাতুরিতে কাজ হবে না। শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি মন্ত্রী বানাতে পারব। নেতা বানাবে তৃণমূল আওয়ামী লীগ।’ অহমিকা দেখিয়ে আপনি নিজের জন্য নিজে গর্ত খুঁড়তেছেন।”
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ না করে আওয়ামীলীগার হওয়া যায় না মন্তব্য করে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাক মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী। আওয়ামী লীগের এমপি হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান না করলে সে মুক্তিযুদ্ধ বিদ্বেষী মানুষ হিসেবে চিহ্নিত হবে। আর মুক্তিযোদ্ধা বিরোধী হলে সে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের কেউ হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘এমপি হয়ে তিনি কাউকে ছাড় দেননি। বাঁশখালীতে আওয়ামী লীগের সেক্রেটারির কোনো দাম নেই। এমপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় কলেজের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এই বিষয়গুলো নিয়ে বাঁশখালীতে কথা বলার মানুষ নেই, সেটি ভুল ধারণা। সময় আসছে, সব বলব। আমার বন্ধুরা আমাকে নিয়ে সংশয় করে বলেন- এমপি সাহেব বিশাল ব্যাপার, তার সঙ্গে বিরোধিতা করা উচিত হচ্ছে না। আমি যুদ্ধ করা মানুষ, আমার প্রস্তুতি আছে। আমি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থে আবারও যুদ্ধ করব। আমার প্রতিক্রিয়া আমি ব্যক্ত করব। মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে থাকব। বাঁশখালীতে তৃণমূল আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধাদের কিভাবে অবহেলা করেছেন- আমি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বলব।’
একই অনুষ্ঠানে বাঁশখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আহমদ ছফা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে একত্রিত থাকতে হবে। নয়ত যারা ধিক্কার দিচ্ছে, যারা ফাটল সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, এটা যতবড় রাজনৈতিক নেতা হোক, এমপি হোক আমরা কারো কাছে জিম্মি না। সুতরাং আমাদের ঐক্যে কখনো ফাটল হবে না। কেউ আমাদের ঐক্য ভাঙতে পারবে না। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে ভাগাতে চাইবেন, আবার লাথি মারবেন এগুলো কেন? আমাদের মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজন। আমাদের সন্তান ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সবসময় এক থাকতে হবে।’
সারাবাংলা/আরডি/একে