ডিএনসিসি নয়, ‘চিফ হিট অফিসার’ নিয়োগ দিয়েছে আর্শট-রকফেলার
৪ মে ২০২৩ ২১:৪৫
ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘চিফ হিট অফিসার’ পদে কাউকে নিয়োগ দেয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করার লক্ষ্যে বুশরা আফরিনকে ‘চিফ হিট অফিসার’ হিসেবে নিয়োগ দেয়। ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামের কন্যা বুশরা আফরিনের পাশাপাশি আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আরও সাত নারীকে চিফ হিট অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে অন্যান্য দেশেও।
তবে এই ‘চিফ হিট অফিসার’— পদে নিয়োগ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রাতিষ্ঠানিক বা আর্থিক কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বৃহস্পতিবার (৪ মে) সারাবাংলাকে এ তথ্য জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মো. সেলিম রেজা।
তিনি বলেন, ‘২০২১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশন পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। তারা তাদের প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতা অনুযায়ী যাচাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বুশরা আফরিনকে নিয়োগ দিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে এই নিয়োগ আমাদের দেশের জন্য অনেক বেশি গর্বের ও আনন্দের।’
তিনি আরও বলেন, ‘বুশরা আফরিনের যে পদ তা আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ঠিক করা হয়েছে। তারা বুশরা আফরিনকে ডিএনসিসিতে সিএইচও হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। এই নিয়োগের সঙ্গে ডিএনসিসির কোনো প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক বা আর্থিক সংশ্লিষ্টতা নেই। অর্থাৎ এই পদে বুশরা আফরিন ডিএনসিসিসহ রাজধানীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করলেও তার বেতন বা অন্য সবকিছুই বহন করবে আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশন।’
মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের নানাধরনের প্রভাব আমরা ইতোমধ্যেই দেখতে পাচ্ছি। এমন অবস্থায় বুশরা আফরিনের নেতৃত্বে এই শহরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে নানা ধরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশন। আমরাও সমঝোতা চুক্তির আওতায় রাজধানীবাসীকে কিছুটা স্বস্তি দিতে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে যাব।’
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ফ্লোরিডার মায়ামিতে সিএইচও হিসেবে কাজ করছেন জেইন গিলবার্ট। এছাড়া সিয়েরা লিওন, গ্রিস, অস্ট্রেলিয়াসহ একাধিক দেশে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট সিএইচওরা।
প্রসঙ্গত, বুধবার (৩ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ডিএনসিসি ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাড্রিয়েন আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। এর আওতায় ঢাকার তাপমাত্রা কমাতে উত্তর সিটি এবং ফাউন্ডেশনটি যৌথভাবে কাজ করবে বলে জানানো হয়।
এ সময় আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এশিয়ার প্রথম শহর হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটিতে বুশরা আফরিনকে চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথাও জানানো হয়। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েব সাইট থেকে জানা যায়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে আরও সাত নারী এই পদে কাজ করছেন।
আর্শট-রকের পরিচালক ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যাথি বাঘম্যান ম্যাকলিওড বলেন, ‘তীব্র তাপপ্রবাহ বিশ্বের শহরগুলোতে একটি প্রেসার কুকারের মতো কাজ করছে। এবং ঢাকার উত্তরে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় এখানে ঝুঁকি আরো বেশি। তাই ঢাকা উত্তরে একজন চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার নেতৃত্বে এই শহরে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি বুশরা আফরিনের ভূমিকা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় শহরগুলোর জন্য একটি রোল মডেল হিসাবে কাজ করবে। আর্শট-রক ফাউন্ডেশন এই উদ্যোগের অংশীদার হতে পেরে গর্বিত এবং তারা ডিএনসিসির মানুষের সুরক্ষায় সম্ভাব্য সহযোগিতা দেবে।’
আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের পক্ষে থেকে জানানো হয়, তাদের পক্ষ থেকে নিয়োগ দেওয়া সিএইচও বুশরা আফরিন প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ঢাকা উত্তরকে নিরাপদ করার জন্য নেতৃত্বে দিবে। তাপমাত্রা কমাতে তিনি শহর-ব্যাপী নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন। ঢাকা উত্তরের জনগণের মধ্যে তাপ সচেতনতা বৃদ্ধি, সুরক্ষা প্রচেষ্টা ত্বরান্বিতকরণসহ নতুন নতুন কাজ করবেন।
এদিন অনুষ্ঠানে বুশরা আফরিন বলেন, ‘আমার শহরের প্রচণ্ড তাপ থেকে মানুষ ও সম্প্রদায়কে রক্ষা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিভিন্ন শহরের নেতা ও বিশেষজ্ঞদের একটি বৈশ্বিক সংগঠনে যোগ দিতে পেরে আমি রোমাঞ্চিত। ঢাকার একজন স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে আমি জানি তীব্র তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপের বিকল্প নেই।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে তাপমাত্রা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বিশেষ করে স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষ, বস্তিবাসী, অভিবাসী এবং নারী ও শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে আর্শট-রকের গবেষণা ফলাফল তুলে ধরে জানানো হয়, ২০৫০ সালের মধ্যে তাপপ্রবাহ বিশ্বব্যাপী প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়নের বেশি মানুষের জীবন ও জীবিকায় মারাত্মক প্রভাব ফেলবে এবং তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শহরে বসবাসকারী মানুষ। তীব্র তাপপ্রবাহ শহরগুলোর জন্য বেশি বিপদজনক এবং প্রতিবছর শহরে ক্রমাগত ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় ঢাকা শহর তাপ প্রবাহের ফলে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। পাশের গ্রাম অঞ্চলের তুলনায় ঢাকা উত্তরের তাপমাত্রা প্রায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এই চরম তাপ পরিস্থিতি নগরবাসীর জীবনকে হুমকির মুখে ফেলছে এবং শহরের বার্ষিক উৎপাদনের প্রায় ৮ শতাংশেরও বেশি শ্রম উৎপাদনশীলতা কমছে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ গরমকাল দ্বিগুণ হবে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, নারী ও শিশুদের উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম