Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাগরে লঘুচাপ, পরিণত হতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’য়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩ মে ২০২৩ ২১:২৩

ফাইল ছবি

ঢাকা: এপ্রিলে প্রচণ্ড দাবদাহে জনজীবন ছিল ওষ্ঠাগত। রুদ্র-রূপ ধারণ করেছিল প্রাণ-প্রকৃতি। এমনকি মে মাসেও তাপদাহের আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু মাসের শুরুতেই প্রকৃতির রূপ বদল। কিছুটা ঝড়-বৃষ্টি প্রকৃতিতে স্বস্তি ফিরিয়েছে। তবে এর পাশাপাশি ভয়ংকর খবর হচ্ছে, বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির শঙ্কা দেখা দিয়েছে সাগরে।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হতে চলেছে। আগামী ৭ মে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে যাওয়া লঘুচাপ পরবর্তী সময়ে ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে, একই সময়ে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম-জিএফএস। ঝড়টির নাম ‘মোচা’। জিএফএস জানাচ্ছে, বঙ্গোপসারে মাথা চাড়া দিচ্ছে ঘূর্ণিঝড়। এটি ভারতের উড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে। এমনকি বাংলাদেশেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। তবে এখনই স্পষ্টভাবে কিছু জানায়নি সংস্থাটি।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, আমরা এমন একটি অ্যালার্ট পেয়েছি। তবে সেটি কতটা বিপজ্জনক বা ঘনীভূত হতে পারে সে সম্পর্কে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রয়েছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর (বিএমইডি) তাদের ওয়েবসাইটে যে সতর্কবার্তা দিয়েছে তাতে এখনো স্পষ্ট নয় যে, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হবে। সংস্থাটি জানিয়েছে, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে আগামী ৭ মে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে। সেটা আরও ঘনীভূত হবে। অর্থাৎ এটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। তবে এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে কিনা এবং বাংলাদেশে এর কতটা প্রভাব পড়বে সে বিষয়ে এখনো বিএমডি কিছুই জানাতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুখ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা লঘুচাপের অ্যালার্ট পেয়েছি। কিন্তু এখনও এর ম্যাচুউরিটি বোঝা যাচ্ছে না। বিষয়টি আমরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি।‘

বিজ্ঞাপন

এদিকে, ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যে বলছে, আসছে ৬ মে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হতে চলেছে। যা দুই দিন পর অর্থাৎ ৮ মে নিম্নচাপে পরিণত হবে। তবে তা ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে কি না তা নিশ্চিত করে জানানো হয়নি।

ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর (আইএমডি) জানিয়েছে, এই নিম্নচাপটি শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে কি না তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়ে তা ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে ভারতীয় উপকূলের দিকে ধেয়ে আসতে পারে। এর আগে, জিএফএস প্রাথমিকভাবে জানিয়েছিল, ভারতের উপকূলের দিকে থাকবে ঝড়ের অভিমুখ। সংস্থাটি পরে ফের জানায়, ৮ মে ভারত মহাসাগরে তৈরি হবে ঘূর্ণাবর্ত। তারপর তা উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’ আন্তজার্তিক গণমাধ্যম ও আবহাওয়াবিদদের পর্যবেক্ষণের মূল বিষয় হয়ে উঠেছে। কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি আগামী ১৩ থেকে ১৬ মে’র মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে সরাসরি আঘাত হানার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে।’

তিনি তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল থেকে প্রাপ্ত পূর্বাভাস অনুযায়ী ৮ থেকে ৯ মে’র মধ্যে দক্ষিণ-বঙ্গোপসাগরে আন্দামান ও নিকোবার দীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়ে ১০ মে’র মধ্যে নির্দেশ করছে। ইউরোপিয়ান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করছে। সে অনুযায়ী, মোচা আগামী ১৪ মে মধ্যরাতের পর থেকে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকা দিয়ে সরাসরি স্থলভাগে আঘাত করার আশঙ্কা নির্দেশ করছে। গ্লোবাল ফোরকাস্ট (জিএফএস) পূর্বাভাস অনুযায়ী, স্থলভাগে আঘাত করার সময় ঘূর্ণিঝড়টি খুব শক্তিশালী হিসেবে আঘাত হানতে পারে। তার গতি থাকতে হবে ১৪০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার।’

ঘূর্ণিঝড় মোচা নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বলছে, যেকোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত তারা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এখনো ঘূর্ণিঝড়ের আভাস পাওয়া যায়নি। সাধারণত নিম্নচাপে পরিণত হলে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়। বিগত ঘূর্ণিঝড়গুলো যেভাবে মোকাবিলা করা হয়েছে, সেভাবেই সামনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করা হবে। সে প্রস্তুতি রয়েছে।

এদিকে, টানা কয়েকদিনের তীব্র খরতাপের পর আকাশ মেঘলা হতে শুরু করেছে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, এই পরিস্থিতি থাকবে ৫ মে পর্যন্ত। এরপর কিছুটা গরম অনুভূত হতে পারে। বুধবার (৩ মে) আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ১২ ঘণ্টায় দেশের রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুই এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।

পূর্বাভাস অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে সর্বোচ্চ ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ডিমলায়। এদিকে, দেশের চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, ফেনী, বান্দরবান, পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু কিছু জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে। আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, এই সময় সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। আর এই পরিস্থিতি বজায় থাকতে পারে আগামী তিন দিন।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

ঘূর্ণিঝড় মোচা সাগর

বিজ্ঞাপন

রিশাদ-জাহানদাদে কুপোকাত সিলেট
৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:২১

আরো

সম্পর্কিত খবর