এখনও ফাঁকা ঢাকা
২৬ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:১৯
ঢাকা: ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষ হলেও রাজধানীজুড়ে এখনও রয়েছে ছুটির আমেজ। এরইমধ্যে টানা ছয় দিনের ঈদের ছুটি শেষে কর্মজীবী মানুষেরা কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করলেও ঢাকার রাস্তা এখনও স্বাভাবিক। ঈদের আগে একসঙ্গে ছুটি শুরু হয়েছে কিন্তু ছুটি শেষে মানুষ ধাপে ধাপে ফেরায় রাজধানীর রাস্তাগুলোর ট্রাফিক এখনও নিয়ন্ত্রণে। তবে আগামী রোববার থেকে রাজধানী আবার চিরচেনা রূপে ফিরবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার (২৪ এপ্রিল) সরকারি অফিস আদালত খুলেছে। ফলে সেদিন থেকেই ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে রাজধানীমুখী মানুষের ভিড় শুরু হয়, যা আজ বুধবারও বিদ্যমান। এদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে গেলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খুলছে সপ্তাহজুড়ে ধাপে ধাপে। এ কারণে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগে ১৯ ও ২০ এপ্রিল ঢাকাত্যাগী মানুষের যে চাপ ছিল, তা ঈদের পর দেখা যাচ্ছে না। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিভিন্ন এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ধারণা আগামী রোববার (৩০ এপ্রিল) থেকে চিরচেনা রূপ ফিরবে রাজধানী। আর আগামী ২ মে স্কুল-কলেজ খোলার পর হয়ত ফিরবে জ্যামের রাজধানী ঢাকার চিরচেনা রূপ।
বুধবার (২৬ এপ্রিল) পর্যন্ত রাজধানীর মতিঝিল, রামপুরা, তেজগাঁও, গুলশান, উত্তরা, গাবতলী এলাকায় ট্রাফিক স্বাভাবিক রয়েছে। কমলাপুর, গুলিস্তান ও গাবতলীতে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় থাকলেও রাজধানীর ভেতরে ট্রাফিক সিগন্যাল তুলনামূলক কম। ঈদের চারদিনের ছুটির তুলনায় বিভিন্ন রাস্তাঘাটে রিকশা, সাইকেল, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, ভ্যানগাড়ি, বাস, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারের চাপ বেড়েছে।
সকালে অফিসমুখী মানুষের চাপ থাকলেও সারাদিনে ট্রাফিক ব্যবস্থা স্বাভাবিক। রাজধানীর মতিঝিল, গুলশান, উত্তরা ও বিজয়সরণি এলাকায় গাড়ির চাপ অনেক কম, যা স্বাভাবিক সময়ে অনেকেরই কল্পনার বাইরে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক উত্তরা জোনের এডিসি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, যাওয়ার সময় একবারে অনেক মানুষ ঢাকা ছাড়ায় তাদের উপর অত্যন্ত চাপ পড়ে। কিন্তু ফেরার সময় ধাপে ধাপে ফেরায় এখন পর্যন্ত তারা কিছুটা স্বস্তিতে আছেন। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে আগামী রোববার থেকে চাপ বাড়বে।
ডিএমপির ট্রাফিক গুলশান জোনের এডিসি এ এস এম হাফিজুর রহমান জানান, আজ পর্যন্ত সড়কে চাপ স্বাভাবিক। তবে বৃহস্পতিবার থেকে এটি বাড়তে পারে এবং রোববার থেকে অসহনীয় পর্যায়ে যেতে পারে। তবে যানজট নিরসনে তারা এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ডিএমপির ট্রাফিক মতিঝিল জোনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার (এসি) এ এস ইমতিয়াজ জানান, মতিঝিল এলাকায় এখনও রাশ নেই। রাস্তায় গাড়ি কম। তবে ঢাকামুখী মানুষের ভিড়ে গুলিস্তান এলাকায় গাড়ির চাপ তুলনামূলক বেশি।
ঢাকার অন্যতম প্রবেশপথ গাবতলী, মিরপুরের দারুসসালাম ট্রাফিক জোনের অন্তর্ভুক্ত। এই এলাকায় ঢাকামুখী মানুষের ভিড় থাকলেও দিনের বেলা আন্ত:জেলা বাস ঢাকায় প্রবেশ না করায় ঢাকার ভেতরে চাপ পড়ছে না। দারুসসালাম ট্রাফিক জোনের এসি ইফতেখাইরুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের আগে একসঙ্গে অনেক মানুষ ঢাকা ছাড়ায় ১৯ ও ২০ তারিখ তীব্র চাপ ছিল। এখন রাস্তায় গাড়ির অতটা চাপ নেই। একেক অফিস একেক সময়ে খোলায় ও মানুষ আগের থেকে সচেতন হওয়ায় তারা এখন একসঙ্গে ফেরেন না রাজধানীতে। এ জন্য এখন পর্যন্ত রাস্তায় ট্রাফিকের অবস্থা স্বাভাবিক। কিন্তু আগামী রোববার ও সোমবার পরিস্থিতি আগের মত হতে পারে।’
তেজগাঁও জোনের এসি ট্রাফিক আশীষ কুমার দাস বলেন, ‘রাস্তায় ভিড় নেই বললেই চলে। সড়কে এখনও ঈদের আমেজ। ২ তারিখ স্কুল খোলার পর হয়তো আগের মত যানজট বাড়বে।’
রামপুরা ট্রাফিক জোনের এসি মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘গাড়ির চাপ এখনও অনেক কম। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এখনও সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও আগামী রোববার থেকে বাড়তে পারে।’
কয়েকদিন ঢাকার রাজপথে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের অনেকটা নির্বিকার সময কাটিয়েছেন। ঈদের চতুর্থদিন পর্যন্ত গাড়ি কম থাকায় রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক সিগন্যালের খুব কড়াকড়ি ছিল না। কিন্তু গণপরিবহন ও অন্যান্য গাড়ির চাপ বাড়ায় ট্রাফিক পুলিশদেরও কর্মতৎপরতা বেড়েছে।
অফিসগামীদের ভিড় থাকায় ফার্মগেট, বাংলামোটর, মগবাজার, পল্টন, গুলশানসহ অধিকাংশ সড়কে দীর্ঘ ট্রাফিক দেখা যায়। তবে সিগন্যালে আটকে থাকা গাড়িগুলোকে অন্যান্য দিন দীর্ঘ সময় আটকে থাকতে দেখা গেলেও আজ তেমনটা দেখা যায়নি। কয়েক মিনিট অপেক্ষার পরই ফের গাড়িগুলো ছেড়ে যাচ্ছে। তবে সব গাড়িতে যাত্রীদের ভিড় ছিল উপচেপড়া। গণপরিবহনের পাশাপাশি বেড়েছে মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিংয়ের ব্যবহারও। ঈদের ছুটি শেষে বাইকাররাও ফিরতে শুরু করেছেন ঢাকায়।
সারাবাংলা/আরএফ/ইআ