৪৮ ঘণ্টা পর স্বজনরা পেলেন দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির খোঁজ
১৮ এপ্রিল ২০২৩ ২২:৩৪
ঢাকা: নাঙ্গলকোট উপজেলার হাসানপুর রেলস্টেশনে দুর্ঘটনায় পড়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী বিরতিহীন ট্রেন সোনার বাংলা এক্সপ্রেস। প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) বগুড়ার সাদ্দাম হোসেনের দুর্ঘটনার বিষয়ে জানতো না তার পরিবারের কেউই। অচেতন অবস্থায় সাদ্দামও কোনো ঠিকানা প্রাথমিকভাবে বলতে পারেনি। তবে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নেওয়া পদক্ষেপের কারণে সাদ্দামের খোঁজ জানতে পেরেছে বগুড়ায় থাকা তার পরিবার সদস্যরা।
সোমবার (১৭ এপ্রিল) নাঙ্গলকোট থেকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অচেতন ও গুরুতর আহত অবস্থায় সাদ্দাম হোসেনকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। তবে সাদ্দামের সঙ্গে মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ কিছুই না থাকায় তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না। এমনকি অচেতন থাকার কারণে সাদ্দামও বলতে পারছিল না তার বাড়ি বা যোগাযোগ করার জন্য কোনো আত্মীয়-স্বজনের নাম।
মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠার পরে জানায় তার বাড়ি বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানার বুড়িগঞ্জ গ্রামে। কিন্তু এর বেশি কিছু বলতে না পারলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চেষ্টায় তার স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছে।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ‘সাদ্দাম হোসেনকে যখন আমাদের হাসপাতালে আনা হয় তখন তার কোনো পরিচয় জানা সম্ভব হয় নি। তার সঙ্গে কিছু না থাকার কারণে স্বজনদেরও কিছু জানানো যাচ্ছিল না। কিন্তু যেহেতু তার সেন্স ছিল না এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল তাই আমরা চিকিৎসা চালিয়ে যাই। আমাদের জরুরি বিভাগ, ক্যাজুয়েলটি বিভাগ, অর্থোপেডিক্স ও নিউরো সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা চালিয়ে যান। দুর্ঘটনায় তার মাথায় ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়।’
তিনি বলেন, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে সাদ্দামের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়। এরপরে সে জানায় তার বাড়ি বগুড়া। কিন্তু এর বেশি কিছু প্রথমে বলতে পারে নি। পরবর্তী সময়ে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ করি ও বগুড়া বিএমএ’র সঙ্গে কথা বলি। আজ সন্ধ্যার দিকে সাদ্দামের মা ও ভাই আমাকে ফোন করে। তখন তাদের আমি জানাই, সাদ্দামের চিকিৎসা চলছে। সুস্থ হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। এরপরে তারা এসে সাদ্দামকে নিয়ে যেতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘সাদ্দামের চিকিৎসায় যেসব ওষুধপত্র বা অন্যান্য আনুষাঙ্গিক জিনিস লেগেছে সেগুলো আমাদের চিকিৎসকরাই যোগাড় করে দিয়েছে। এ ছাড়াও হাসপাতালের গরীব রোগীদের জন্য আলাদা কিছু ব্যবস্থা থাকে। সেগুলো দিয়েও তার চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া হয়েছে। যাই হোক না কেনো রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাওয়াই আমাদের ধর্ম। কিন্তু তাও ভাবছিলাম, পরিবারের সদস্যের কোনো খোঁজ না পেয়ে হয়তো তার আত্মীয়রাই দুশ্চিন্তায় আছে। আর তাই তাদের খোঁজ করার চেষ্টা করি আমরা।’
আজ সন্ধ্যায় সাদ্দামের মা ও ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলার পরে তারা স্বস্তি প্রকাশ করে ও জানায় দ্রুতই তারা কুমিল্লা আসবেন-উল্লেখ করেন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী।
এর আগে, রোববার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হাসানপুর রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা মালবাহী ট্রেনে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন। এতে সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় মালবাহী ট্রেনের পেছনের কন্টেইনার। সোনার বাংলা ট্রেনের চালকসহ অন্তত অর্ধশতাধিক যাত্রী আহত হন। পরে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেন।
সারাবাংলা/এসবি/একে