নিউমার্কেটে আগুন: মানুষের পাশে মানুষ
১৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:২৪ | আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:০৬
ঢাকা: নিউ মার্কেটের কাঁচাবাজারের পাশ দিয়ে আসার সময় হঠাৎ কানে ভেসে এলো, ‘পানি খান ভাই, পানি খায়ে ন্যান। বিপদ আল্লাহ দেছে, আল্লাহই রক্ষা করবে। যারা রোজা রাখেননি, তারা পানি খেয়ে ন্যান। পানি খান ভাই, পানি খান।’
চলমান তাপদাহ, ৩৭/৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা, ভ্যাবসা গরম, আগুন লাগা ভবন থেকে বেরিয়ে আসা ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মধ্যে যারা মালপত্র বের করছেন, যাদের মালের ক্ষতির সঙ্গে জানের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে, তাদের উদ্দেশেই এই হাকডাক একদল হৃদয়বান মানুষের। বড় পাত্রে বরফ ও লেবু মেশানো পানি আর ওয়ানটাইম গ্লাস হাতে ডেকে ডেকে পিপাসার্ত মানুষকে পানি খাওয়াচ্ছেন তারা।
দোকানের বিক্রয়কর্মী, আগুন নেভাতে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবক, সাধারণ উৎসুক জনতা, ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের কেউ কেউ এসে পনি পান করে যাচ্ছেন। যারা এই পানি খাওয়ানোর মতো মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, তারাও নিউ মার্কেটেরই লোক। কাঁচাবাজারে তাদেরও রয়েছে দোকান-পাট। ব্যবসায়ী সহকর্মী-সহযোগীদের বিপদমুহূর্তে পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা।
এর আগে, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলার সিঁড়িতে কিছু দৃশ্যের অবতারণা হয়। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ভবনের ভেতর থেকে নৌ-বাহিনী, সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবির ইউনিফর্মড সদস্য, এমনকি কর্মকর্তা পর্যায়ের ব্যক্তিরাও দোকানিদের মালপত্র নিজেদের কাঁধে করে নামিয়ে আনছেন এবং নিরাপদ স্থানে রেখে আসছেন।
শুধু তাই নয়, আহত ও হতাশাগ্রস্ত দোকানিদের প্রাথমিক সেবা শ্মশ্রুসার পাশাপাশি মনোবল চাঙ্গা রাখতে সান্তনাও দিয়ে যাচ্ছেন তারা। আপনজনের মতো করে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। বারবার বলছেন, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে। মালের চেয়ে জানের মূল্য অনেক বেশি। বেঁচে থাকলে সব হবে। ধৈর্য ধরুন।’
কথা হয় ফায়ার কর্মী উজ্জ্বলের সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘শুধু অগ্নি নির্বাপণ নয়, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখার জন্যও আমাদের ট্রেনিং দেওয়া হয়। কারণ, বিপদ মুহূর্তে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ফিট থাকাটা সবার জন্য জরুরি।’
এর আগে, শনিবার (১৫ এপ্রিল) ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে নিউ মার্কেটের নিউ সুপার মার্কেটের তিন তলায় আগুন লাগে। এরপর তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চেষ্টা চালিয়ে সকাল ৯টা ১০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি নৌ, সেনা, বিমান বাহিনী ও বিজিবি ও আনসার সদস্যরাও কাজ করছেন।
সারাবাংলা/এজেড/ইআ