শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ ১লা বৈশাখ উদযাপনের নির্দেশ
১২ এপ্রিল ২০২৩ ২১:১৮
ঢাকা: দেশের সব প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জাতীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি গাইতে হবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটি। সেইসঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বের করতে হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা।
মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি শোভাযাত্রা বের করতে হবে।
মাউশির ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পহেলা বৈশাখের দিন শিক্ষার্থীদের অবশ্যই জাতীয় সংগীত গাইতে হবে। পাশাপাশি বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটি গাইতে হবে তাদের। এর আগে, ৪ এপ্রিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতর থেকেও একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে পয়লা বৈশাখের ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রা জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থার (ইউনেস্কো) তরফ থেকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায়।
এবারের পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা দেখছেন কিনা— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বুধবার (১২ এপ্রিল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যে রিপোর্ট করেছে, এই ধরনের কোনো ঝুঁকি নেই। তবে আপনারা জানেন নববর্ষের সময় অনেকেই অনেক কিছু বলে থাকে। সেজন্য অনেকেই রটনা রটানো ও ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা-অপচেষ্টা করবেন। তবে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবদিক দিয়ে সেগুলো মনিটরিং করছে। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত বড় কোনো নিউজ আসেনি।’
এদিকে, এবার পহেলা বৈশাখে কোনো ধরনের মুখোশ পরিধান করা যাবে না বলে জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি কোনো ধরনের ব্যাগও বহন করা যাবে না। এ ছাড়া নববর্ষ উপলক্ষে আগামী ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭ টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। নববর্ষের দিন ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে না। পাশাপাশি মোটরসাইকেল চালানোও থাকবে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
রোববার (৩ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
মুখোশ ও ব্যাগ বহন প্রসঙ্গে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরা যাবে না কোনো ধরনের মুখোশ। বহন করা যাবে না কোনো ধরনের ব্যাগ। তবে চারুকলা অনুষদ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি থেকে বিরত থাকার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
নববর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ক্যাম্পাসে নববর্ষের দিন সবধরনের অনুষ্ঠান বিকেল ৫ টার মধ্যে শেষ করতে হবে। এ জন্য বিকেল ৫টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা যাবে। ৫টার পর বের হওয়া ছাড়া কোনোভাবেই আর প্রবেশ করা যাবে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসবাসরত কোনো ব্যক্তি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র নীলক্ষেত মোড়সংলগ্ন গেইট ও পলাশী মোড় সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন।
মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রসঙ্গে নির্দেশনা প্রদান করে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, টিএসসি থেকে বের হয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর সংলগ্ন স্মৃতি চিরন্তন হয়ে পুনরায় টিএসসিতে গিয়ে শেষ হবে। নির্মাণাধীন মেট্রোরেল প্রকল্পের কারণে চলাচলের পথ সরু থাকায় ও কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘নববর্ষের দিন ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট বন্ধ থাকবে। আগতরা উদ্যানে প্রবেশের জন্য চারুকলা অনুষদের সামনের ছবির হাটের গেইট, বাংলা একাডেমির সামনের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন। এবং বের হওয়ার জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেইট, রমনা কালী মন্দির সংলগ্ন গেইট ও বাংলা একাডেমির সামনের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট ব্যবহার করতে হবে।
এছাড়াও আগতদের সুবিধার্থে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল মাঠসংলগ্ন এলাকা, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) সংলগ্ন এলাকা, দোয়েল চত্বর এলাকা ও কার্জন হল এলাকায় মোবাইল পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি পুলিশের আওতায় নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করা হবে।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম