‘নেই ভেদাভেদ যেথা মুটে আর মজুরে’
৩ এপ্রিল ২০২৩ ১১:০৬ | আপডেট: ৩ এপ্রিল ২০২৩ ১১:০৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ফুটপাতে দিন পার করা ভাসমান মানুষ, ছিন্নমূল, হতদরিদ্র, রিকশাচালক, ঠেলা-ভ্যানচালক, নিম্ন আয়ের মানুষ, শিক্ষার্থী- সবাই এক কাতারে বসে প্রতিদিন সারছেন ইফতার। প্রতিদিন ইফতারে এমন শত, শত মানুষের সমাগমে মুখর নগরীর লালদীঘিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তন।
সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য রোজার মাসজুড়ে এই আয়োজন করেছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। আর পুরো আয়োজন সামলে নিচ্ছেন কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী।
রোববার (২ এপ্রিল) পর্যন্ত প্রথম দশ রোজায় পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ ইফতারে শামিল হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জহরলাল হাজারী। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিদিন পাঁচশ’রও বেশি মানুষকে আমরা বিনামূল্যে ইফতার খাওয়াচ্ছি। এখানে শ্রেণি-পেশার কোনো ভেদাভেদ নেই। ভাসমান মানুষ, শ্রমজীবীরা যেমন আছেন, তেমনি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীরাও আছেন।’
রোববার বিকেলে পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গনে কথা হয় একদল রিকশাচালকের সাথে। এদের মধ্যে রমিজ নামে একজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার পরিবার থাকে রংপুরে। চট্টগ্রামে রিকশা চালায়। মেয়রের উদ্যোগে বিনামূল্যে ইফতার দেওয়া হচ্ছে জানতে পেরে এখানে এসেছি।’
চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রাশেদুল করিম বলেন, ‘বাবা-মা গ্রামে থাকেন। শহরে একা ইফতার করতে ভালো লাগে না। তাই টিউশনি করে বাসায় ফেরার পথে এখানে ইফতার করি। খোলামেলা পরিবেশ আর বিভিন্ন মানুষের সাথে ইফতার করে তৃপ্তি পাই।’
লাইব্রেরির পাশে থাকা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের দেখতে আসা অনেক দর্শনার্থীও ভিড় জমান এ ইফতারে। এমন একজন রহিমুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘জেলে থাকা ভাইকে দেখতে এসে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাসায় ফিরতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। কোথায় ইফতার করবো জানতে চাইলে সবাই এখানে আসতে বললো। অন্যদের সাথে এখানে ইফতার করতে পেরে আমি আনন্দিত।’
সমাজের বিত্তবান মানুষদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সাধারণ পথচারীরা বিশেষ করে গৃহহীন, এতিম ও হতদরিদ্ররা যাতে সহজে ইফতার করতে পারে তার জন্য এই মাসব্যাপী আয়োজন করেছি। ভোগ-বিলাসের পরিবর্তে দরিদ্রদের পাশে দাঁড়িয়ে রোজার শিক্ষাকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে হাজারও মানুষের হাতে ইফতার সামগ্রী ও সেহেরি পৌঁছে দিয়েছি। সমাজের বিত্তবান শ্রেণি এগিয়ে আসলে আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা রোজাদারদের জন্য সিয়াম পালন সহজ হবে।’
আয়োজনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকা নগর আওয়ামী লীগের উপ দফতর সম্পাদক কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিদিন চারজন বাবুর্চি ইফতারের বিভিন্ন আইটেম রান্না করেন। আর ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবী কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই রোজাদারদের সেবা দিচ্ছেন। কখনও ছোলা-মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি আবার কখনও বিরিয়ানি, খিচুড়ি দেওয়া হচ্ছে।’
সারাবাংলা/আইসি/আরডি/এমও