‘অবৈধ’ শিশুপার্ক সরাতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেবেন নওফেল
১ এপ্রিল ২০২৩ ২২:৫৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজসংলগ্ন শিশুপার্ক অপসারণে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
শনিবার (১ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে জটিল রোগে আক্রান্তদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুদান বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি একথা জানান। এদিন ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোক, প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ এবং থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তদের চেক বিতরণ করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপমন্ত্রী নওফেল জটিল রোগ নিরাময় প্রসঙ্গে বলেন, ‘চট্টগ্রামে মানুষের হাঁটাহাটির অভ্যাসটা কম। দেশের অন্যান্য শহরেও দেখেছি যে, সকালে ঘুম থেকে উঠে মানুষ হাঁটতে বের হন। কিন্তু চট্টগ্রামে সেটা কম, এখানে সকালে ঘুম থেকে উঠে মানুষ পরোটা দিয়ে গরুর গোশত খেতে বসে যান। এটা পরিবর্তন করতে হবে। হাঁটাহাটির অভ্যাসটা তৈরি করতে হবে।’
জেলা প্রশাসকের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি তো বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। কিছু খোলা জায়গা করে দেন, যেখানে মানুষ হাঁটাহাটি করতে পারবে। ডিসি হিলে যদিও হাঁটাহাটির সুযোগ আছে, কিন্তু সেটা অনেকটা সীমিত।’
শিশুপার্কের প্রসঙ্গ টেনে উপমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটা বিষয় হচ্ছে, বিষফোঁড়ার মতো শিশুপার্ক নামে একটি অবৈধ ব্যবসা সার্কিট হাউজের পাশে পরিচালিত হচ্ছে। এটা থেকে মাত্র ১২ হাজার টাকা সিটি করপোরেশন পায়। আমরা খবর নিয়েছি, চিঠি দিয়েছি। তবে কোনো কিছুই হচ্ছে না। এত অল্প টাকা দিয়ে এতবড় জায়গা। জায়গাটি কিন্তু সিটি করপোরেশনেরও নয়, এটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের।’
তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন চেয়েছিল জনসাধারণের জন্য পার্ক করতে। আর ওরা করেছে শিশুপার্ক। পার্কের দরজা বন্ধ করে তারা ব্যবসা করছে। জনসাধারণের স্বার্থ ধ্বংস করে শিশুপার্ক করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দেব, যাতে এই বিষফোঁড়া এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। সিআরবিতে যে হাসপাতাল হওয়ার কথা ছিল, সাধারণ মানুষের আবেগকে সম্মান দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সেটা কিন্তু সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সুতরাং এটা করার দরকার আছে। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকাটা অনেক প্রয়োজন আছে।’
চট্টগ্রাম অঞ্চলে ক্যানসার ও হার্টের রোগী বাড়ছে মন্তব্য করে নওফেল বলেন, ‘ঢাকার অনেক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বলেছেন, চট্টগ্রামের মানুষের ক্যানসার বেশি হয়। কারণ, চট্টগ্রামের মানুষ বেশি শুটকি আর গরুর মাংস খায়। এত শুটকি আমরা খাই যে, বিদেশ থেকে শুটকি আমদানি করতে হয়। শুটকি বেশি খেলে ক্যানসার হয়। গরুর মাংস অর্থাৎ রেডমিট খুব হাইপ্রোটিন ফুড যেটা কিডনির জন্য সমস্যা।’
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রামের মানুষ কালাভুনা খায়। মাংস পুড়িয়ে এটা করা হয়। এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আমরা একদিনের আনন্দঘন খাবার প্রতিদিনই খেয়ে ফেলছি। আমরা মাছ খেতে পারি, শাকসবজি খেতে পারি। এছাড়া আমাদের হাঁটার অভ্যাস নেই। হাঁটতে হবে, ব্যায়াম করতে হবে। তাহলেই তো শরীর সুস্থ থাকবে। এসব মরণব্যাধি হবে না।’
চট্টগ্রামে একটি বিশেষায়িত ক্যানসার হাসপাতাল ও বার্ন ইউনিট প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি পদে থাকা উপমন্ত্রী নওফেল।
সাধারণ গরীব মানুষের পাশে বিত্তবানদের আসার অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, ‘আমাদের শুধু অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেলে হবে না। যারা অর্থের জন্য চিকিৎসা করাতে পারছে না তাদেরকে সহযোগিতা করতে হবে। চট্টগ্রামের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি আছেন, দেশে বিদেশে ব্যবসা বাণিজ্য করেন। আমরা তাদের অনুরোধ করব, সরকারের এই উদ্যেগের সঙ্গে শরিক হয়ে সাধারণ মানুষদের পাশে দাঁড়ান।’
রোগী কল্যাণ সমিতি মানুষের পাশে দাঁড়ায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি আছে। সেখানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সহযোগিতা করা হয়। অনেকে বলে সরকারি ফান্ডে টাকা দিলে সেগুলো সরকারি কর্মচারীরা আত্মসাৎ করে। এগুলো ভ্রান্ত ধারণা। রোগী কল্যাণ সমিতির টাকা সরকারি কোনো কাজে খরচ হয় না। তারা মেডিকেলে আসা সাধারণ রোগীদের ওষুধ কিনতে ও চিকিৎসা করতে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেই যে দানের অর্থ দিতে হবে এটা ঠিক নয়। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অবশ্যই আমরা দান করব। কিন্তু দেখতে পাই শুধুমাত্র শোভাবর্ধনের জন্য মসজিদের ছাদে, দেয়ালের বাইরে অপ্রয়োজনীয়ভাবে টাইলস লাগাচ্ছি আমরা। একটা মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য সুন্দর পরিবেশের প্রয়োজন। এ জন্য দরকার চারপাশ থেকে আলো বাতাস ঢোকার পথ।’
নওফেল বলেন, ‘আমরা সেটা বন্ধ করে এসি লাগাচ্ছি। এতে অর্থও খরচ হচ্ছে, বিদ্যুতের দামও বাড়ছে, আবার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশও সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা অপ্রয়োজনীয়ভাবে শোভাবর্ধনের জন্য দান করছি। অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় দান করে। তাদের উদ্দেশে বলব, এতগুলো গরীব মানুষ তারাও আল্লাহর বান্দা, তারা যেনো সুচিকিৎসা করাতে পারে সেখানেও আপনারা দান করুন।’
জেলা প্রশাসনের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ক্যানসার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত নগর্রীর ৯০ জন রোগীর প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে ৪৫ লাখ টাকার চেক বিতরণ করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদফতর আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের পরিচালক কাজী নাজিমুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসান, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মো. তৌহিদুল ইসলাম, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফরিদুল আলম।
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম