ধর্ষণের পর খুন করে খোঁজার নাটক!
২৯ মার্চ ২০২৩ ১৬:৫৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিড়াল দেওয়ার নাম দিয়ে ফুঁসলিয়ে শিশু আবেদা সুলতানা আইনীকে (১১) প্রথমে নেওয়া হয় একটি ভবনের চারতলার খালি ফ্ল্যাটে। এরপর ধর্ষণ করার সময় চিৎকার করলে তাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন সবজি বিক্রেতা মো. রুবেল (৩৫)। পরে নিজেই আইনীর পরিবারের সঙ্গে তাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজার নাটক করেন। পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে লাশ বস্তায় ভরে ময়লা-আবর্জনায় ভরা ডোবায় ফেলে দেন।
বুধবার (২৯ মার্চ) দুপুরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
এর আগে, ভোরে নগরীর পাহাড়তলী থানার আলমতারা পুকুরপাড়া মুরগীফার্ম এলাকা থেকে পিবিআই শিশু আইনীর লাশ উদ্ধার করে। শিশুটি সরাইপাড়া হাজী আবদুল আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। ওই এলাকাতেই তাদের বাসা।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ এনে তার মা পোশাককর্মী বিবি ফাতেমা সবজি বিক্রেতা রুবেলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেন। চট্টগ্রামের দ্বিতীয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শারমিন জাহান অভিযোগ গ্রহণ করে পাহাড়তলী থানার অফিসার ইনচার্জকে নিয়মিত মামলা নথিভুক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই মেট্রোর পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, ‘তিনমাস আগে বিড়ালের বাচ্চা ধরতে গিয়ে রিকশার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আহত হলে রুবেলের সঙ্গে শিশু আইনীর পরিচয় হয়। এরপর রুবেল তার বোনের বাসা থেকে বিড়ালের বাচ্চা এনে দিবে বলে জানায়। পরে তাদের আর দেখা হয়নি। তার বান্ধবী তাসলিমার সঙ্গে একবার রুবেলের বাসায়ও গিয়েছিল সে। তবে রুবেলের দেখা পায়নি। অপহরণের একদিন আগে আবারও রুবেলের সঙ্গে ভিকটিমের দেখা হয়। তখন সে বিড়াল ছানার আবদার করে। রুবেল তাকে বিকেলে আসতে বলে। তার কথামতে আইনী বিকেলে তার দেখানো জায়গায় যায়। কিন্তু ওইদিন রুবেল যায়নি।’
‘পরের দিন স্কুলে যাওয়ার সময় আবার তাদের দেখা হলে রুবেল আবারও বিকেলে আগের জায়গায় তাকে আসতে বলে। স্কুল থেকে ফিরে আই্নী সেখানে গেলে তাকে নিয়ে রুবেল তার কথিত ফুফুর চার তলার একটি খালি ফ্ল্যাটে নিয়ে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ সময় ভিকটিম শিশু চিৎকার করলে তাকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর সে ওখানেই লাশ রেখে বের হয়ে যায়। এ সময় শিশুটির দাদী বিবি খাদিজা রুবেলকে কল দিয়ে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানায়।’
‘রুবেল সঙ্গে সঙ্গে তাদের বাসায় গিয়ে পরিবারের সঙ্গে আইনীকে খোঁজার নাটক করেন। পরে এশার নামাজের সময় সুযোগ বুঝে আই্নীর লাশ বস্তাবন্দী করে তার ভ্যানগাড়ীতে করে নিয়ে ময়লা-আবর্জনায় ভরা ডোবায় ফেলে দেন। আর একটি লাল ব্যাগে করে শিশুটির পরিহিত বোরকা ও স্যান্ডেল অন্য জায়গায় ফেলেন। এরপর প্রতিদিনই সে ওই দুই জায়গায় গিয়ে রেকি করে আসতেন। বস্তা যাতে দেখা না যায় এ জন্য উপরে ঘাস দিয়ে রাখতেন।’
নাইমা সুলতানা আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) থানার সাধারণ ডায়েরির অভিযোগ পত্রটি হাতে আসে। এরপর আমরা ফিল্ডে যাই। রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজগুলো নিয়ে প্রায় দুই-তিনদিন পর্যবেক্ষণ করি। তাকে যে গলি দিয়ে নেওয়া হয়েছে সেদিকে কোনো সিসিটিভি নেই। এটা রুবেল আগে থেকেই জানতেন। আমরা তখন রুবেলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করি। তখন সে সারাদিন কোথায় কি করেছে সেগুলোর বর্ণনা দেয়। এক পর্যায়ে সে আমাদের জানায় বিকেলে তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত একটি চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিয়েছিল। তখন আমাদের সন্দেহ হয়।’
‘কারণ একজন সবজি বিক্রেতা দুইঘন্টা ধরে কোনো চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে পারে না। এরপর আমরা ওই চায়ের দোকানে গিয়ে দোকানদার আলী সওদাগরকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তিনি রুবেলের দুইঘন্টা থাকার ব্যাপারটা নিশ্চিত করতে না পারলেও আমাদের এটা জানিয়েছেন রুবেল তাকে আইনীর নিঁখোজ হওয়ার সংবাদ জানিয়েছিল পাঁচটার দিকে। এতে আমাদের সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। স্বপ্রনোদিত হয়ে একটা কথা বলে ফেলা এটা আমাদের কাছে সন্দেহ লাগলো। এরপর তাকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে শিশুটিকে ধর্ষণ করে শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা স্বীকার করেন।’
এদিকে পুলিশের খাম খেয়ালিপনার জন্যই এতোদিন মেয়েকে খুঁজে না পাওয়ার দাবি করে আয়নীর মা বিবি ফাতেমা বলেন, ‘আমার মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গেই সঙ্গেই থানায় গিয়েছিলাম। পুলিশ যদি আমার মেয়েকে খুঁজতো-এই ঘটনা ঘটতো না। আমি মেয়েকে অনেক খুঁজেছি। রুবেলকে সন্দেহ করেছি। তারা রুবেলকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমার মেয়েকে আরও আগে আমরা পেতাম। কিন্তু তারা সেটা গুরুত্ব দেয়নি।’
পুলিশের শাস্তি দাবি করে আইনীর বাবা মো. আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘অভিযোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই থানার ওসিদের পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার ছিল। তারা এসে আসামিকে জিজ্ঞেস করে চলে গেছে। তার পরের দিন আমার পরিবার আবার থানায় গিয়ে এসআই দুলাল ও মনিরকে আবার বলে। উল্টো তারা বলেছে- আমার মেয়ে নাকি প্রেম করে। রুবেল নাকি ভাল ছেলে। নয় বছরের বাচ্চা কীসের প্রেম করে? আমি রুবেলের ফাঁসি চাই। এস আই দুলাল ও মনিরের শাস্তি চাই।’
এদিকে বুধবার (২৯ মার্চ) দুপুরে আসামি রুবেলের ফাঁসি দাবি করে মানববন্ধন করেন আইনীর সহপাঠীরা।
সারাবাংলা/আইসি/ইআ