Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছড়িয়ে পড়েছে জাল টাকা, পাইকারি বাজারে মিলছে বেশি

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৭ মার্চ ২০২৩ ১০:৪৪ | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৩ ১১:৫৯

ঢাকা: রাজধানীর শ্যামবাজারে শসার দোকানে জটলা, চিৎকার চেঁচামেচি। এগিয়ে দেখা যায়, শসা কিনে ক্রেতা একটি ৫০০ টাকার নোট দিয়েছেন, বিক্রেতা বলছেন সেটি জাল নোট। কিন্তু ক্রেতা বলছেন ওই নোট তিনি দেননি সেটি অন্য কেউ দিয়েছেন। এ নিয়ে বাকবিতন্ডা। তাদের চিৎকারে উৎসুক জনতা এগিয়ে এসেছেন।

ঝামেলা শেষ হলে ওই দোকানদার রফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘গত সাত দিনে অন্তত তিনি তিনটি জালনোট পেয়েছেন। যার প্রতিটি ছিল ৫০০ টাকার নোট। ১০০ টাকার নোটের ওপর ৫০০ টাকা ছাপানো হয়েছে। জাল নোটগুলো দেখতে একেবারে চকচকে নতুন টাকার মতো।’ শ্যামবাজারে আরও কয়েকজন পাইকারি বিক্রেতা এরকম জালনোট পেয়েছেন বলেও তিনি শুনেছেন।

বিজ্ঞাপন

একই অবস্থার কথা শোনা যায়, কাপ্তান বাজারে। সম্প্রতি কাপ্তান বাজারে জালনোট অনেক বেশি মিলছে বলে জানিয়েছেন মুরগি বিক্রেতা শাহজাহান মিয়া। বিক্রেতারা বলছেন, ৫০ হাজার থেকে এক লাখ বা তারও বেশি টাকা গুণতে গুণতে কখন দুই একটা নোট জাল থেকে যাচ্ছে তা বোঝা যায় না সহজে।

তাদের অভিযোগ, রোজা, ঈদ বা বড় কোনো উৎসব এলেই কারবারিরা বাজারে জাল নোট ছড়িয়ে দেয়। কিন্তু তাদের গতিরোধ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে ভূমিকা থাকা দরকার তা নেই।

রাজধানীর মিরপুরেও গত সপ্তাহে জাল টাকা পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘১০০ টাকা বা ১০০০ টাকা নয়, যে জাল নোটটি পেয়েছিলাম তা ছিল ৫০০ টাকার নোট। অন্যদের পরামর্শে তা সঙ্গে সঙ্গে ছিঁড়ে ফেলেছি। এরপর থেকে টাকা খুব সাবধানে নিই।’

এর আগের বছরগুলোতে জাল টাকা নিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যে টিম অভিযান চালাত সেই টিমের উপকমিশনার মশিউর রহমান এবারও জাল টাকা প্রতিরোধে মাঠে নেমেছেন।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে ডিবির লালবাগ বিভাগের উপ কমিশনার মশিউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাল টাকার কারখানার খোঁজে আমরা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত রেখেছি। আগে যারা ধরা পড়েছিল তাদের বেশির ভাগই কারাগারে। আর যারা জামিনে রয়েছে তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন করে কারা জাল টাকা তৈরি করছে বা কারখানা কোথায় তা খুঁজে বের করতে সময় লাগছে।’

বাজারে জাল টাকা ছড়িয়ে পড়ছে সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ নেই। তবে ঈদ, রোজা বা বড় উৎসব সামনে রেখে জাল টাকা বাজারে ছড়িয়ে পড়ে অতীতে এরকম নজির রয়েছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

 

তৈরি হচ্ছে নতুন রকমের জাল টাকা, নিরাপত্তা সুতা থাকায় বোঝা মুশকিল

 

ডিবি সূত্র জানিয়েছে, প্রত্যেক বছর অন্তত ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকার জাল নোট বাজারে ছড়িয়ে দেয় এই চক্রের কারবারিরা। কয়েকটি ধাপে তারা কাজটি করে থাকে। যারা কালি, কাগজ সংগ্রহ করে মেশিনে টাকা তৈরি করে তারা মূলত প্রথম ধাপে কাজ করে। দ্বিতীয় ধাপে মার্কেটিং করা হয়। এই ধাপে নারীদের মাধ্যমে বাজারে টাকা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

এক্ষেত্রে বিশেষ করে কাপড়ের দোকান, মাছের বাজার, সবজি বাজার এবং ভিড়ের মধ্যে যেখানে তাড়াহুড়ো করে পণ্যের বিল জমা দেওয়া হয় সেসব জায়গায় জাল টাকা নোট ব্যবহার করে থাকে এজেন্ট নারীরা।

রোজার ঈদ ও কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে জাল টাকা ছড়িয়ে দেওয়া বেশি সহজ বলেও গোয়েন্দাদের কাছে বিভিন্ন সময় স্বীকার করেছেন গ্রেফতার হওয়া জাল টাকার কারবারিরা।

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আমরা মাঠে কাজ করছি, জাল টাকার কারখানা শনাক্তে র‌্যাবের গোয়েন্দা দলও মাঠে কাজ করছে। এছাড়া কোথাও জাল টাকার সন্ধান পেলে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’

সারাবাংলা/ইউজে/এমও

জাল টাকা পাইকারি বাজার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর