৭ কারণে বেড়েছে হজের খরচ, হাইকোর্টকে ধর্ম মন্ত্রণালয়
১৫ মার্চ ২০২৩ ১৪:২১ | আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৩ ১৫:২৮
ঢাকা: বাড়ি ভাড়া, মোয়াল্লেম ফি, বিমান ভাড়া, রিয়াল এক্সচেঞ্জ ফি, সার্ভিস ফিসহ মোট সাত খাতে ব্যয় বাড়ায় হজ প্যাকেজের ব্যয় বেড়েছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
বুধবার (১৫ মার্চ) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সাত খাতের পাশাপাশি বরাবরের মতো দু’টি প্যাকেজ না রেখে এক প্যাকেজ রাখা হয়েছে বলে জানানো হয় আদালতকে।
হাইকোর্টে দেওয়া তথ্যে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, এবার সরকারিভাবে হজ প্যাকেজ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। এরমধ্যে সৌদি অংশে খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৭৩৯ টাকা। আর বাংলাদেশ অংশে ২ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৫ টাকা।
হাইকোর্টে দেওয়া ব্যাখ্যায় ধর্ম মন্ত্রণালয় ব্যয় বাড়ার সাত কারণ তুলে ধরেছে। এরমধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশি মুদ্রার সঙ্গে সৌদি আরবের মুদ্রা বিনিয়মের হার বৃদ্ধি, বিমান ভাড়া বৃদ্ধি, মক্কা ও মদিনায় ব্যাপক সংখ্যক বাড়ি সৌদি সরকার কর্তৃক ভেঙে ফেলায় বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি, হজযাত্রীদের সুবিধা বিবেচনায় উন্নত মানের বাস সার্ভিস, অতিরিক্ত বাস সার্ভিস এবং ট্রেন সার্ভিস গ্রহণ, দূরবর্তী ও পাহাড়ী এলাকার পরিবর্তে মক্কা (মিসফালাহ ও ইব্রাহিম খলিল রোড এলাকা) ও মদিনায় সমতল এলাকায় বাসা ভাড়া, হজ চুক্তি অনুযায়ী রোড টু মক্কা সুবিধার জন্য সার্ভিস চার্জ আরোপ, হজ চুক্তি অনুযায়ী হজযাত্রীদের ডেডিকেটেড ফ্লাইট নিশ্চিত করার কারনে ব্যয় বেড়েছে।
পাশাপাশি আরও বলা হয়, ২০২২ সালে দু’টি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। সেখানে মক্কা হারাম শরীফ থেকে বাড়ির দূরত্ব ব্যতিত প্যাকেজ দু’টিতে সুযোগ সুবিধার জন্য কোনো পার্থক্য ছিল না। মিনা ও আরাফাহ তে তাবু, যাতায়াত এবং মদিনার বাড়ি উভয় প্যাকেজে হজযাত্রীদের জন্য ব্যয় একই ছিল। যে কারণে ২০২৩ সালে একটি প্যাকেজ রাখা হয়েছে।
হাইকোর্টকে দেওয়া তথ্যে বলা হয়, সৌদি আরবে ব্যয়ের খাতে রয়েছে মক্কা ও মদিনায় বাড়ি ভাড়া বাবদ ২ লাখ ৪ হাজার ৪৪৪ টাকা, জেদ্দা- মক্কা- মদিনা ও আল মাশায়েরে পরিবহন ব্যয় ৩৫ হাজার ১৬২ টাকা, উন্নত মানের বাস সার্ভিস ২ হাজার ৮৩৯ টাকা, জমজম পানি ৪২৫ টাকা, পবিত্র হজের পাঁচ দিন মিনা, আরাফাহ, মুজদালিফায় মোয়াল্লেম সেবা ১ লাখ ৬০ হাজার ৬৩০ টাকা, মক্কা রুট সার্ভিস (লাগেজ পরিবহন) ৫৮৭ টাকা, মিনা, আরাফাহ, মুজদালিফায় যাতায়াতের জন্য অতিরিক্ত বাস ভাড়া ১৯ হাজার ৩৩৩ টাকা, দেশে প্রত্যাবর্তনকালে লাগেজ পরিবহন ব্যয় ৮৫১ টাকা, ভিসা ফি ৫ হাজার ৮১৭ টাকা, স্বাস্থ্য বিমা বাবদ সৌদি সরকারকে ফি ৯৪৬ টকা। সব মিলিয়ে ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৭৩৯ টাকা।
আর বাংলাদেশ অংশে খরচ ধরা হয়েছে, বিমান ভাড়া ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। এরমধ্যে মূল বিমান ভাড়া ১ লাখ ৮৩ হাজার ৯১০ টাকা, আর এজেন্ট ফি ২ হাজার ৬৫০ টাকা। আইডি কার্ড, লাগেজ ট্যাগ, আইটি সার্ভিস, মক্কা রোড সার্ভিস মিলিয়ে ৮০০ টাকা, হজ যাত্রীদের কল্যান তহবিল বাবদ ২০০ টাকা, প্রশিক্ষন ফি ৩০০, খাবার খরচ ৩৫ হাজার টাকা এবং হজ গাইড খরচ ১৫ হাজার ১৭৮ টাকা। সৌদি আরব এবং বাংলাদেশে অংশ মিলিয়ে এবার হজ প্যাকেজ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা।
হাইকোর্টে দেওয়া তথ্যে গত পাঁচ বছরের ব্যয় উল্লেখ করে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জেষ্ঠ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘হজ বিষয়ে সৌদি অংশে বড় পরিবর্তন আনা হয় ২০১৯ সালে। যদিও এর পরের দুই বছর করোনার কারণে বাংলাদেশ থেকে হজ পালন করা হয়নি। সৌদি আরব যে পরিবর্তনটা এনেছে তা হলো, মিনা আরাফাহ সার্ভিসে এ, বি, সি, ডি, ক্যাটাগরি করেছে। এরমধ্যে বাংলাদেশকে সি আর ডি ক্যাটাগরি ধরে মূল্য ধরা হয়।’
তিনি বলেন, ‘সেখানে ১২৬০ /৭০০/৫০০ রিয়াল দিয়ে থাকতো। বাংলাদেশ যে ক্যাটাগরি নিয়েছে সেই ১২৬০ রিয়ালের সার্ভিসে ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৬৫৮ রিয়াল। এ ছাড়া বাংলাদেশি টাকার সঙ্গে রিয়াল বিনিময়ে দাম বেড়েছে প্রতি টাকা ৪ টাকা। ফলে সেখানে বাড়তি ৬৩ হাজার গুনতে হচ্ছে। বিমান ভাড়া বাড়ার জ্বালানি তো কারন আছেই। সেই সঙ্গে হজের জন্য ডেডিকেডেট ফ্লাইট রাখা হয়, তাদের জন্য আলাদা টার্মিনাল ব্যবস্থা। যে কারণে ব্যয়টা বেশি।’
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) চলতি মৌসুমে ধর্ম মন্ত্রণালয় ঘোষিত হজ প্যাকেজকে অমানবিক বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। হজের খরচ কমানোর নির্দেশনা চেয়ে করা এক রিটের শুনানিতে বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। আদালত বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশে হজের জন্য সরকার আলাদা বাজেট রাখে কিন্তু বাংলাদেশে তা নেই। হজের প্যাকেজ মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় আমরাই হজে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আর সেখানে গরিব মানুষ কীভাবে হজে যাবে।’
সারাবাংলা/জেআর/ইআ