Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বঙ্গমাতা হলে উঠলেন পরী, ১ মাসেও উদ্ধার হয়নি মোবাইল-ফুটেজ

আজহারুল ইসলাম, ইবি করেসপন্ডেন্ট
১২ মার্চ ২০২৩ ১৯:১১

কুষ্টিয়া: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নির্যাতিত শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন ক্যাম্পাসে ফিরেছেন। নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে হল ছেড়েছিলেন তিনি। হল ছাড়ার প্রায় এক মাস পর রোববার (১২ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে বাবাকে সঙ্গে নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন তিনি। ক্যাম্পাসে পৌঁছে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের পঞ্চম তলায় উঠেছেন তিনি। পরী এখন থেকে এখানেই থাকবেন। সেইসঙ্গে সোমবার (১৩ মার্চ) থেকে তিনি নিজ বিভাগে (ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং) নিয়মিত ক্লাসে ফিরবেন বলে জানান।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, গত ১ মার্চ পছন্দের হল বরাদ্দে হাইকোর্টের নির্দেশনার পর গত ৪ মার্চ ক্যাম্পাসে এসে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে বরাদ্দের জন্য আবেদন করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফুলপরী। সারাবাংলার এই প্রতিবেদকে তিনি বলেন, ‘আমার স্বপ্ন পূরণে ওরা (অভিযুক্তরা) বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ভেবেছিলাম হয়তো ক্যাম্পসে আর ফিরতে পারব না। নিজের ক্যাম্পাসে ফিরতে পেরে মনের মধ্যে এক অন্যরকম উচ্ছ্বাস কাজ করছে। আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম। এখন কিছুটা স্বাভাবিক। আপাতত কোনোরকম দুশ্চিন্তা কাজ করছে না। আগামীকাল (সোমবার) থেকে নিয়মিত ক্লাসে ফিরব।’

বিজ্ঞাপন

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিয়া মো. রাসিদুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আবেদন করার পর সেদিনই একটি কক্ষে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয় ফুলপরীকে। সেদিন ওই কক্ষে কিছু মালামাল রেখে বাড়ি চলে যায় সে। আজ সে হলে উঠেছে। ক্যাম্পাসে এলে চিফ মেডিকেল অফিসারকে বলা হয়েছে তার স্বাস্থ্যগত বিষয় পরীক্ষা করতে। হলে এলে কোনো ধরনের সমস্যায় যাতে না পড়তে হয় বিষয়টি দেখভাল করব। আমি ওই কক্ষের অন্যদের ডেকে কথা বলেছি; যেন ওর কোনো সমস্যা না হয়।’

ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি ড. বখতিয়ার হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ওই শিক্ষার্থীর খোঁজ-খবর রাখছি। একাডেমিক কমিটির মিটিংয়েও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই শিক্ষার্থী ক্লাসে এলে যেন কোনো ধরনের নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় না পড়ে এবং কোন ধরনের বিব্রত পরিস্থিতিতে পড়তে না হয় এ নিয়ে আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। এছাড়া গত মাসে ক্লাসে অংশ না নেওয়ায় তাকে যেন ক্ষতির মুখে পড়তে না হয় সে বিষয়টিও আমরা দেখব।’

এক মাসেও উদ্ধার হয়নি সিসিটিভি ফুটেজ

এদিকে, র‌্যাগিংয়ের ঘটনার প্রায় এক মাসেও দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বায়োসের ব্যাটারি নষ্ট থাকার বিষয়টি জানানো হলেও এ ব্যাপারে তেমন দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বিভিন্ন তদন্ত কমিটি ফুটেজ চাইলেও হল কর্তৃপক্ষ তা সরবরাহ করতে অপারগতা প্রকাশ করে। সেইসঙ্গে তারা বার বার আইসিটি সেলের ওপর দোষারোপ কনে। কিন্তু আইসিটি সেল জানিয়েছে, হলের ক্যামেরার তদারকির দায়িত্বে তারা নেই।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি হল প্রভোস্ট ভিডিও উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে প্রক্টর বরাবর চিঠি দেয়। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষ দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নিলেও গত ১ মার্চ হাইকোর্টের নির্দেশনার পর নড়ে-চড়ে বসে। হাইকোর্ট বিষয়টি অনুসন্ধানে বিশ্ববিদ্যালয়কে পৃথকভাবে তদন্তের নির্দেশ দেন। সেইসঙ্গে আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাসের ক্যামেরার তদারকি বাড়ানোর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইবির আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. আহসান-উল-আম্বিয়াকে দায়িত্ব দিয়ে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি করে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত গত ৭ মার্চের একটি অফিস আদেশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এতে ড. আম্বিয়াকে ৭ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ এইচ এম আলী হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে হল কর্তৃপক্ষ ভিডিও ফুটেজ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ার বিষয়ে হল প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে এবং কীভাবে ক্যামেরা সিস্টেম আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করা যায় সেজন্য ভিসি স্যার তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।’

আইসিটি সেলের পরিচারক অধ্যাপক ড. আহসান-উল-আম্বিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি আজ (রোববার) চিঠি পেয়েছি। সে অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু করেছি।

মোবাইল ও ভিডিও উদ্ধারে কার্যক্রম চলমান

নির্যাতনের ঘটনার প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণকারীর মোবাইল ফোন উদ্ধার করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তবে মোবাইল ও ভিডিও উদ্ধারে ইবির রেজিস্ট্রার গত ৭ মার্চ ইবি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন। থানার ওসি আননূর যায়েদ বিপ্লব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেসব তথ্য চেয়েছি তারা এখনো দেয়নি। তবে আমরা আমাদের মতো করে প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। অন্যান্য হারানো ফোন যেভাবে উদ্ধার কার্যক্রম চালাই সেভাবেই কাজ চালাচ্ছি। ফোনটি হারিয়ে গিয়েছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। উদ্ধার করতে সক্ষম হলে গণমাধ্যমকে অবশ্যই জানাব।’

ভিডিও ধারণের বিষয়টি আবাসিক হল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও জুডিশিয়ারি তদন্ত কমিটিতেও প্রমাণ মিলেছে। ফলে সেই মোবাইল ফোন সংগ্রহ এবং ধারণ করা ভিডিও উদ্ধার করে আদালতে দাখিল করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। অভিযুক্ত চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার উর্মির মোবাইলে ভিডিও ধারণ করা হয়েছিল বলে হাইকোর্টের নির্দেশনায় উল্লেখ রয়েছে। উর্মি অপ্পো সি-ওয়ান মডেলের একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করতেন বলে সূত্র জানিয়েছে সূত্র। তবে ঊর্মি বলেছেন, ‘১৪ ফেব্রুয়ারি ডায়না চত্বরে অনুষ্ঠানে স্টেজ পারফরম্যান্স করার সময় আমার ফোনটি হারিয়ে গেছে।’ তিনি বর্তমানে একটি বাটন ফোন ব্যবহার করছেন বলে দাবি সূত্রের।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ভূক্তভোগী। ফুলপরী বলেন, ‘সেই রাতে উনারা আমার বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেছেন। কিন্তু এখনও ফোনটি উদ্ধার করা হয়নি। আমি খুব ভয়ে আছি। তারা আমার উপর প্রতিশোধ নিতে ভিডিওটি ছড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। আমি এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি। আমি চাই, যেন দ্রুত ফোনটি উদ্ধার করে ভিডিও নষ্ট করা হয়।’

ফোন উদ্ধারের অগ্রগতির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ এইচ এম আলী হাসান বলেন, ‘একজন যদি মোবাইল লুকিয়ে রাখে বা ফেলে দেয় তাহলে কীভাবে উদ্ধার করবে? কিন্তু ইএমইআই নম্বর ওরা কোথায় পাবে? যেমন আমার ফোনেরটা আমি নিজেই জানি না।’ পুলিশকে তথ্য দেওয়া হয়েছে কি-না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘থানা থেকে তথ্য চাইলে আমরা যতটুকু পারি প্রোভাইড করব। আর ওরা আমাদের কাছে তথ্য চাইবে কেন? এটা হাইকোর্টের নির্দেশনায় সরাসরি বলা আছে এটা পুলিশ প্রশাসন করবে। তবুও আমরা যতটুকু পারছি সহায়তা করছি।’

তিন বছর পর অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটি

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নবীন শিক্ষার্থীদের নির্যাতন বন্ধে অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটি ও স্কোয়াড গঠনের জন্য ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে নির্দেশনা দেয় উচ্চ আদালত। তিন মাসের মধ্যে এ কমিটি গঠনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলেও তিন বছর পর পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি আলোচিত ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির অনুলিপি হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

‘অ্যান্টি র‌্যাগিং ভিজিল্যান্স কমিটি’ নামে পাঁচ সদস্যের কমিটিতে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদকে আহবায়ক ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার আব্দুল হান্নানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন, প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা ও আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডল। আগামী দুই বছরের জন্য এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কর্তৃক গত ৭ মার্চ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।

কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজই (রোববার) কমিটি গঠনের বিষয়ে চিঠি পেয়েছি। অনেক আগেই হাইকোর্ট থেকে র‌্যাগিং প্রতিরোধের জন্য কমিটি গঠনের নির্দেশনা ছিল। কোনো কারণে এতদিন কমিট গঠন করা হয়নি। তবে এখন ওই নির্দেশনার আলোকেই কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা দ্রুতই কাজ শুরু করব।’

সারাবাংলা/পিটিএম

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া টপ নিউজ ফুলপরী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর