জাগো বাঙালি জাগো— স্লোগানে উত্তাল সারা দেশ
৬ মার্চ ২০২৩ ১১:৩০
ঢাকা: ১৯৭১ সালের ৬ মার্চ। সারা দেশে প্রবল উত্তেজনা। ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’, ‘পিন্ডি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ স্লোগানে উত্তাল দেশ। রাস্তায় নেমে গেছে মানুষ, ছুটছে ঢাকার দিকে। তারা বঙ্গবন্ধুর ডাকে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের (সোহরাওয়ার্দী) উদ্যানে জনসভায় যোগ দেবে। অধির আগ্রহে অপেক্ষায় দেশর মানুষ। জনসভায় কী বলবেন বঙ্গবন্ধু।
এইদিন একদিকে যেমন ছিল টান টান উত্তেজনা, অন্যদিকে ছিল— আমারা আর পরাধীন থাকব না— এই আনন্দ। আসবে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক।
এভাবে স্মৃতিচারণ করছিলেন তৎকালীন ছাত্রনেতা বর্তমানে গণফোরামের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা মোহসীন মন্টু।
সারাবাংলাকে তিনি জানান, দুই তিন দিন দিন আগে থেকেই ঢাকার আশেপাশের জেলা থেকে ছাত্র জনতা লঞ্চ নৌকা ট্রেনে চড়ে ঢাকায় আসতে থাকে। এদের মধ্যে কেউ থেকেছে তাদের আত্মীয়র বাসায়, কেউ পল্টন ময়দানে মুক্তাঙ্গনে রাত কাটিয়েছে। ৬ মার্চ সকল থেকে সারাদেশের মানুষের নজর বঙ্গবন্ধুর দিকে। রেডিও শুনছে। বিশেষ করে বিবিসির সংবাদের জন্য ছিল সবার আগ্রহ। দিন শেষ সন্ধ্যায় নেমে আসে। তৎকালীন ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খান, নূরে আলম জিকু, আব্দুল কুদ্দুস মাখন ও আ স ম আব্দুর রব ছাত্রলীগের নগর এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের বিষয় ৭ মার্চ।
বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তাসহ রেসকোর্স ময়দানে সমবেত জনতার জন্য সেবা প্রদান, মেডিকেল টিম এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যেন কোনো সাবোট্যাজ করতে না পারে সে জন্য খুবই গোপনে তথ্য সংগ্রহের জন্য ও রেসকোর্স ময়দানের নিরাপত্তা কমিটি করা হয়।
সময় যত ঘনিয়ে আসছে উত্তেজনা ততই বাড়ছে। স্মৃতিচারণে মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য ঐতিহাসিক ভাষণ দেবেন, সে জন্য সারাদেশ সভা-সমাবেশ-মিছিলে ছিল উত্তাল। সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে আসে। ৬ মার্চ রাত থেকেই রেসকোর্স ময়দানে জনগণ সমবেত হয়। সকালেই ভরে যায় রেসকোর্স ময়দান।
মন্টু বলেন, ৭ মার্চ দুপুরে সকালে চলে যাই বিশ্ববিদ্যালয়ে সিরাজুল আলম খানের কাছে। সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত বৈঠক হয়। বৈঠকের পর আমরা চলে যাই রেসকোর্স ময়দানে। সেখানের পরিস্থিতি দেখে চলে যাই বঙ্গবন্ধুর কাছে। তাকে নিয়ে আমরা পৌনে তিনটার দিকে রেসকোর্স ময়দানের দিকে রওয়ানা হই। বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার জন্য তার সামনের বহরে মোটর সাইকেল, পরে পিকআপ এবং পেছনের দিকে ৩/৪টি জিপ রাখা হয়। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গাড়ির বহর মিরপুর রোড হয়ে রেসকোর্স ময়দানে পৌঁছায়। এসময় বিভিন্ন স্লোগানে রেসকোর্স ময়দান প্রকম্পিত হয়ে উঠে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে মঞ্চে তুলে দিয়ে আমরা প্রায় দুই শতাধিক বঙ্গবন্ধুর কর্মী নিরাপত্তার জন্য মঞ্চ ঘিরে ফেলি। কে কে মঞ্চে উঠবে সেই তালিকা ছিল। এর বাইরে কাউকে মঞ্চে থাকতে দেওয়া হয়নি।
৭১’র এই ছাত্রনেতা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে যখন রেসকোর্স ময়দানে নিয়ে আসি তখন কিছু পাকিস্তানি সেনাকে রাস্তায় দেখি। পুলিশ ইপিআর তো ছিলই। তারা মঞ্চের কাছে বা রেসকোর্স ময়দানে আসতে সাহস পায়নি। তবে যখন বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দিচ্ছিলেন তখন একটি হেলিকপ্টার জনসভার উপর কয়েকবার চক্কর দিয়েছে। এসময় জনগণ পায়ের জুতা, গায়ের জামা খুলে হেলিকপ্টারের দিকে নিক্ষেপ করে। সন্ধ্যার আগেই বঙ্গবন্ধু তার ভাষণ শেষ করেন। তাকে আবারও নিরাপত্তা দিয়ে বাসায় পৌঁছে দেই।
মোস্তফা মোহসীন মন্টু বলেন, জনগণকে দেখেছি তারা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার পরই স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। আমিও স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য অস্ত্র সংগ্রহসহ সার্বিক প্রস্তুতি নিতে থাকি। এরমধ্যে আমি গ্রেফতার হয়ে যাই। ২৫ মার্চ জেল ভেঙে আমি বের হয়। অপারেশন সার্চলাইট প্রতিহত করার জন্য রাস্তায় বেরিয়ে পরি।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/আইই