‘এয়ার সেপারেশন কলাম’ থেকে বিস্ফোরণ— ধারণা তদন্ত কমিটির
৫ মার্চ ২০২৩ ২০:৪৭ | আপডেট: ৬ মার্চ ২০২৩ ১১:৩১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডে বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা। পরিদর্শনের পর কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান জানান, অক্সিজেন প্ল্যান্টে এয়ার সেপারেশন কলাম (বায়ূ পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া) থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়েছে ধারণা।
রোববার (৫ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে তদন্ত কমিটির আট সদস্য বিস্ফোরণস্থলে গিয়ে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন। এরপর তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে আহতদের কয়েকজনের বক্তব্য সংগ্রহ করেন।
বিস্ফোরণের পর শনিবার রাতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সাত সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠন করেন। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসানকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটিতে সীতাকুণ্ডের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি), জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগ এবং বিস্ফোরক পরিদফতরের একজন করে প্রতিনিধি আছেন।
রোববার বেলা ১২টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কমিটির সদস্যরা প্রথম বৈঠকে বসেন। সেখানে একজন ফায়ার এক্সপার্ট যুক্ত করে কমিটির আকার বাড়ানো হয়েছে।
বিকেলে বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শনের পর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা প্রথম দফা বৈঠকে বসে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পর্যালোচনা করেছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করছি। স্টাডি করার জন্য আমাদের যা যা উপাদান দরকার সেগুলো সংগ্রহ করেছি।’
‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, একেবারে প্রাথমিকভাবে- অক্সিজেন প্ল্যান্টে এয়ার সেপারেশন কলাম থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত হতে পারে। তবে এর জন্য অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন হতে পারে। কাজ শুরু করেছি। প্ল্যান্টে অক্সিজেন সিলিন্ডারের পাশাপাশি কার্বন ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রোজেনের সিলিন্ডারও আমরা দেখেছি, যেগুলোর কোনো অনুমোদন ছিল না।’
সামগ্রিক বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেকানিক্যাল সেটআপে বিভিন্ন ধরনের সেফটি ম্যাজারস থাকে। অনেকগুলো শর্ত প্রতিপালনের বিষয় থাকে। পুরো বিষয়গুলো তারা কতটুকু প্রতিপালন করেছে কিংবা কতটুকু করেনি, পরিচালনার জন্য টেকনিক্যাল পারসন যারা ছিলেন তাদের এবং মালিকপক্ষের কোনো গাফেলতি ছিল কিনা- সেগুলো আমরা থ্রি-সিক্সটি ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে সামনে এনে তদন্ত করছি। মূল বিষয় কী সেগুলো তুলে আনব।’
দুর্ঘটনার জন্য যাদের দায় তদন্তে প্রমাণ হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হবে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান।
তদন্ত কমিটির সদস্য চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সেফটি ম্যাজারস পুরোপুরি ছিল কি না সেটা আমরা তদন্ত করে দেখছি। বিস্ফোরণ ঘটেছে এবং আগুনের সৃষ্টিটা সেখান থেকে হয়েছে। এখন কিভাবে বিস্ফোরণটা হয়েছে সেটা তদন্তের পর বলতে পারব।’
সীতাকুণ্ডে গতবছর বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের পর চট্টগ্রামের কারখানাগুলোতে অগ্নি নিরাপত্তার ব্যবস্থা জরিপ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সব কারখানায় আমরা পর্যায়ক্রমে ফায়ার সেফটির ব্যবস্থা করার জন্য চিঠি দিচ্ছি। সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে।’
মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে জানিয়ে তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত সরকার বলেন, ‘মামলা দায়ের করা হচ্ছে। যারা মালিক আছেন তাদের একটা দায় তো আছেই, কারখানা পরিচালনা যারা করছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।’
শনিবার (৪ মার্চ) বিকেলে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি ইউনিয়নের ছোট কুমিরায় সীমা শিল্পগ্রুপের প্রতিষ্ঠান সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেড কারখানায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুন লেগে যায়। এতে ছয়জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া আহত হন ২২ জন।
নিহতরা হলেন- শামসুল আলম (৫০), ফরিদ (৩৬), রতন লকরেট (৪৫), আব্দুল কাদের (৫০), সালাহউদ্দিন (৩৫) এবং সেলিম রিচিল (৩৮)। তাদের প্রত্যেকের লাশ রোববার বিকেলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম