কম গতির মোটরসাইকেল বাড়াবে দুর্ঘটনা
১ মার্চ ২০২৩ ১৯:৪৮
ঢাকা: মহাসড়কে কম গতিতে মোটরসাইকেল চালালে তা অন্য যানবাহনের জন্য বিভ্রান্তিকর হতে পারে। এতে দুর্ঘটনার প্রবণতা আরও বাড়বে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ‘মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা-২০২৩’ এর খসড়ার বিরুদ্ধে এক মানববন্ধনে অংশ নিয়ে এসব আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন রাজধানীর মোটরসাইকেল চালকরা।
বুধবার (১ মার্চ) বিকেলে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে প্রাস্তাবিত মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা–২০২৩ অবাস্তব ও জনবিরোধী দাবি করে এই মানববন্ধন করেন রাজধানীর মোটরসাইকেল চালকরা। এতে অন্তত দুইশ বাইকার অংশ নেন। এ সময় তারা ব্যানারে নানা বক্তব্য ও দাবি তুলে ধরেন।
প্রস্তাবিত খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, রাজধানীতে ৩০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে মোটরসাইকেল চালানো যাবে না। আর মহাসড়কে সর্বোচ্চ গতিসীমা থাকবে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার। এছাড়া মহাসড়কে সর্বনিম্ন ১২৬ সিসি ক্ষমতা সম্পন্ন মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে। যেখানে চালক ছাড়া কোনো আরোহী পরিবহন করা যাবে না। ইদ ও উৎসবের ১০ দিন আগে ও পরের সময় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে না।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে মোটরসাইকেল চালকরা বলেন, বিষয়গুলো আমাদের জন্য পুরোপুরি সাংঘর্ষিক ও অবাস্তব। কারণ যেখানে একটি সাইকেল বা রিকশার গতি ঘণ্টায় ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার সেখানে মোটরসাইকেলের মতো একটি যানবাহনের সর্বোচ্চ গতি ৩০ কিলোমিটার কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। ঢাকা শহরে চালকরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করে সময় বাঁচানোর জন্য। সেক্ষেত্রে গতিসীমা যদি ৩০ কিলোমিটার তাহলে লাইসেন্স করে ও বছর বছর কর দিয়ে মোটরসাইকেল চালানোর কোনো যুক্তি নেই।
তারা আরও বলেন, উন্নত দেশের কোথাও মহাসড়কে ৬০ কিলোমিটার গতিতে মোটরসাইকেল চালনোর কোনো নজির নেই। বরং মহাসড়কে কম গতিতে যানবাহন চালালে সেদেশের ট্রাফিক কর্মকর্তারা সেটিকে ট্রাফিকের জন্য একটি বিপদ মনে করেন। কারণ তা অন্য যানবাহনের জন্য বিভ্রান্তিকর হতে পারে। তাছাড়া মহাসড়কে কম গতি মোটরসাইকেল চালকদের অন্য যানবাহনের মাধ্যমে দুর্ঘটনার প্রবণতা আরও বাড়িয়ে দিবে।
আয়োজকদের পক্ষে শেখ মামুন নামে এক বাইকার বলেন, ‘সরকারের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে বলে গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি। এই নীতিমালা গ্রহণযোগ্য না। আমরা মনে করি, মোটরসাইকেল চলাচলে নিয়ন্ত্রণের নামে তারা দেশের অগ্রগতির গতি রোধ করতে চাইছে। এই নীতিমালা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।’
প্রসঙ্গত, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত নয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটি মোটরসাইকেল চলাচলের খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে। কমিটিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), পুলিশ এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।
খসড়া নীতিমালায় তিনটি উদ্দেশ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে— মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো, অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ মোটরসাইকেল ব্যবহারে উৎসাহ তৈরি, চালকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো।
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, জরুরি প্রয়োজনে কম দূরত্বে যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক দূরের পথে মহাসড়কসহ সর্বত্র মোটরসাইকেলের চলাচল দেখা যায়। বিশেষ করে উৎসবের সময় মোটরসাইকেলের ব্যবহার বহুগুণ বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বিপুল প্রাণহানি ঘটছে। এ জন্য মোটরসাইকেলের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
নীতিমালায় ইদের সময় মহাসড়কে ১০ দিন মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া আরও কিছু বিষয় যুক্ত করেছে কমিটি।
সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম