‘শ্রদ্ধা নিবেদন নয়, ছবি তোলাই যেন উদ্দেশ্য’
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১০:৫৩ | আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:১১
ঢাকা: শহিদ মিনারের ঠিক পাদদেশে শহিদ বেদিতে কালো বোর্ডে হলুদ গাঁদা দিয়ে লেখা ‘অমর ২১শে’। কিন্তু ছবি শিকারিদের ভিড়ে সেটিও দেখা যাচ্ছে না। সাধারণত রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছাড়া সাধারণ মানুষ মূল বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগ পায় না।
২০ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুর বারোটা পর্যন্ত বিএনসিসি ও রোভার স্কাউটসের সদস্য, বেদি পাসধারী মিডিয়ার সদস্যরা ছাড়া অন্যাদের এখানে ওঠার অনুমতি থাকে না। কিন্তু দেখা গেল একুশে ফেব্রুয়ারির সকালে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ও অনুমোদিত লোকজন ছাড়াও যে যার ইচ্ছামত শহিদ বেদিতে উঠে যাচ্ছেন। যেন, ‘শ্রদ্ধা নিবেদন নয়, ছবি তোলাই উদ্দেশ্য’ তাদের।
মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল নয়টার দিকে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিমকোর্ট ও জজকোর্টের বিচারপতিদের একটি দল শহিদ মিনারে ফুল দিতে এলে মিডিয়ার পাশাপাশি একদল ব্যক্তিকে দেখা যায় মোবাইল নিয়ে মূল বেদিতে উঠে যেতে। অনেকের সঙ্গেই তাদের সন্তানরাও ছিল।
এক কিশোরকে দেখা গেল জুতা পায়েই মূল বেদিতে উঠে যেতে। তার বাবা মোবাইলে ছবি তুলছিলেন। এরপর আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ অথবা অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা মূল বেদিতে ফুল দিতে এলেও মূলত ব্যক্তিগত ক্যামেরাম্যান ও মোবাইলধারী ব্যক্তিরাই মূল বেদির পাদদেশে ভিড় করে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলেন। পাশাপাশি ব্যক্তিগত মোবাইলে সেলফি তোলা তো আছেই।
পরবর্তীতে ঘোষণা মঞ্চ থেকে বারবার শহিদ মিনারের ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখার অনুরোধ ও বিএনসিসি-রোভার স্কাউটস সদস্যদের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলা হয়। বেদি পাস ছাড়া মূল বেদিতে ওঠার অনুমতি না পেলেও বিএনসিসির সদস্যরা অনেককেই মূল বেদিতে ওঠার অনুমতি দিচ্ছিলেন ছবি তোলার জন্য।
বিএনসিসির সদস্যরা জানান, দুপুর বারোটা পর্যন্ত মূল বেদিতে অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া কারও ওঠার অনুমতি নেই। কিন্তু শিশুদেরকে তারা উঠতে দিচ্ছেন। তবে শিশুদের পাশাপাশি বড়দের উঠে যাওয়া প্রসঙ্গে তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
শহিদ মিনারের বেদিতে সেলফি তুলছিলেন এক যুবক। তিনি এখানে কীভাবে এসেছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘মিডিয়ার পরিচয় দিয়ে এসেছি।’ যদিও তার কাছে প্রেস কার্ড বা বেদি পাস কোনটাই ছিল না।
এই কলেজছাত্রের মতো অনেককেই দেখা গেল শুধুমাত্র ছবি তোলার জন্য মূল বেদিতে উঠছেন। প্রশ্ন উঠেছে সবাই যদি ইচ্ছামত ওঠার সুযোগই পায়, তাহলে মিডিয়াকর্মীসহ অন্যদের আলাদা করে বেদি পাসের কি প্রয়োজন ছিল!
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম শাহীন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটি আয়োজন করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিএনসিসি ও রোভার স্কাউটস সদস্যরা চেষ্টা করছেন শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য।’
মূল বেদিতে ভিড় ও সেলফি ও ছবি তোলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি থাকেই। সাধারণ মানুষের সহযোগিতা দরকার শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য।’
সারাবাংলা/আরএফ/এমও