Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ: যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:৪৭ | আপডেট: ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২০:৪২

ঢাকা: বিভিন্ন ব্যক্তি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ৬ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মো. হাসান ছালামকে (৪১) গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মতিঝিল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান।

বিজ্ঞাপন

তিনি জানান, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ পরিশোধ না করা ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ গ্রহণ করে তা পরিশোধ না করায় অর্থঋণ জালিয়াতি ও চেক জালিয়াতি মামলায় ২০২০ সালে ছালামের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপর থেকে তিনি রাজধানীর ডেমরা, উত্তরা, কেরানীগঞ্জ ও মতিঝিল এলাকায় বিভিন্ন সময় আত্মগোপনে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অর্থঋণ জালিয়াতি, চেক জালিয়াতিসহ স্ত্রীর করা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এবং অর্থ আত্মসাতের মামলায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও দেওয়া হয়। অবশেষে রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ছালাম রাজধানী ঢাকা ও কুমিল্লায় জেমস্ সুপার শপ লিমিটেড, জেমস্ অ্যান্ড জুয়েলার্স, মতিঝিলে মা টেলিকম, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে উজির আলী ট্রাভেলস, কুমিল্লা কান্দিরপাড়ে ডায়মন্ড গ্যালারি লিমিটেডসহ যৌথ মালিকানায় মোট ১১টি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে অধিক মুনাফার আশায় তিনি একই সময় একাধিক প্রতিষ্ঠানে যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে বিনিয়োগ করেন। এতে ভালো মুনাফা হওয়ায় আরও বেশি বিনিয়োগের জন্য ব্যবসায়িক পার্টনারসহ আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে উচ্চহারে মাসিক লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।

বিজ্ঞাপন

কিছুদিন তাদেরকে লভ্যাংশ দিলেও পরে তা বন্ধ করে দেন। পাওনাদাররা টাকার জন্য নিয়মিত তাগিদ দিতে থাকলে টাকা দেওয়ার আশ্বাস তাদেরকে চেকও দেন। কিন্তু তার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা না থাকায় ব্যাংক চেক ডিজঅনার করে দেয়। পরে ভুক্তভোগীরা আদালতে চেক জালিয়াতির মামলা করেন।

বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও টাকা নেওয়ার কথা জানিয়ে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ফাইন্যান্স, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ব্র‍্যাক ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংক, ইবিএল, প্রাইম ব্যাংক এবং প্রিমিয়াম ব্যাংকসহ আরও বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা ঋণ নেন।

প্রথমদিকে প্রতিষ্ঠানসমূহের কয়েকটি মাসিক কিস্তি পরিশোধ করলেও পরে তা বন্ধ করে দেন। নিদির্ষ্ট সময়ে ঋণ পরিশোধ না করায় এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাকে বারবার চূড়ান্ত নোটিশ দেয়। পরে আদালতে ঋণ খেলাপির দায়ে মামলা করে প্রতিষ্ঠানগুলো। মামলাগুলোর শুনানিতে হাজিরাও দেননি ছালাম। কৌশলে এসব ঋণের দায় এড়ানোর জন্য তিনি বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকান বিক্রি করেন। এরপর সেই টাকা দিয়ে কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহে জমি কেনেন। পরে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি পান্থপথে তার অভিজাত ফ্ল্যাট বিক্রি করে ডেমরা এলাকায় এক বন্ধুর বাসায় গা ঢাকা দেন। পলাতক থাকা অবস্থায় মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেশ ছেড়ে ইউরোপে পালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, বসুন্ধরা সিটিতে জেমস্ সুপারশপের পার্টনারশিপে মাসিক ৫০ হাজার টাকা করে লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গিয়াস উদ্দিন নামক এক ব্যক্তির থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করেন ছালাম। পরে গিয়াস উদ্দিন প্রতি মাসের লাভের টাকা চাইলে বিভিন্নভাবে টালবাহানা করেন। এ অবস্থায় গিয়াস উদ্দিন তার মূলধন ফেরত চাইলে না দিয়ে উল্টো হুমকি দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পরে গিয়াস উদ্দিন ছালামের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় ২০২২ সালে হাসান ছালামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

এ ছাড়া স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ২০১৯ সাল থেকে তিনি আলাদা বসবাস করছেন বলেও জানান লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

সারাবাংলা/ইউজে/ইআ

টপ নিউজ যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার