Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২২ বছরে নিপাহ সংক্রমিত রোগী পাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ৩২ জেলা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০০:২০ | আপডেট: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:১৫

ঢাকা: দেশে ২০০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২২ বছরে ৩২ জেলায় নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমিত রোগী পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তাই জেলাগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সাতটি নির্দেশনা অনুসরণ করার অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শেখ দাউদ আদনানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এই অনুরোধের বিষয়ে জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অদ্যাবধি দেশের ৩২টি জেলায় নিপাহ ভাইরাসজনিত জ্বরের ঝুঁকিতে রয়েছে। এমন অবস্থায় সাতটি নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে দেশের প্রতিটি হাসপাতালে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের সেবা দেওয়ার সময় চিকিৎসকদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার পরে অনুরোধ করা হয়।

৭টি নির্দেশনা

১. রোগী দেখার সময় অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে।

২. রোগী দেখার পূর্বে ও পরে সাবান দিয়ে হাত ধৌত করতে হবে।

৩. জ্বরের উপসর্গ দেখা গেলে রোগীকে আবশ্যিকভাবে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখতে হবে।

৪. জ্বরের সাথে অজ্ঞান অবস্থা দেখা দিলে রোগীকে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের আইসিইউয়ে রাখতে হবে।

৫. আইসিইউতে থাকাকালে রোগীর পরিচর্যাকারীরা শুধু গ্লাভস, মাস্ক পরলেই হবে। কেননা নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী থেকে বাতাসের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়ায় না।

৬. যেহেতু আইসিইউতে রেখে এই রোগীর চিকিৎসা করা যায়, এ জন্য রেফার্ড করার প্রয়োজন নেই।

৭. কোনো প্রকার তথ্যের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের কল সেন্টারে ১৬২৬৩/৩৩৩ যোগাযোগ করবেন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞপ্তিতে ২০০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ পাওয়া গেছে এমন ৩২টি জেলার নাম সংযুক্তি আকারে দেওয়া হয়।

দেশের সকল বিভাগের স্বাস্থ্যসেবা পরিচালক, জেলার সিভিল সার্জন ও সরকারি-বেসরকারি সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কার্যার্থে দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

এর আগে ৩০ জানুয়ারি দেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) বেডসহ মোট ২০টি আসন প্রস্তুত করার নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শেখ দাউদ আদনানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

৩১ জানুয়ারি এই নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে এই নির্দেশনা ২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হয়।

এই নির্দেশনায় ২৮টি জেলায় নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ার কথা জানানো হয়।

নির্দেশনায় বলা হয়, বর্তমানে দেশের ২৮ জেলায় নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১০ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড এবং ১০ বেডের আইসিইউ প্রস্তুত রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শেখ দাউদ আদনান বলেন, প্রথম কেইস থেকে এখন পর্যন্ত থেকে যে জায়গাগুলোতে নিপাহ ভাইরাস পাওয়া গেছে, সবগুলো জেলাই আমাদের দৃষ্টিতে সন্দেহভাজন। কোনো একটি জেলায় একবার হয়েছে, সেটিও সংক্রমিত জেলা। এক জেলায় একবার হয়েছে মানে যে ওই জেলায় আর হবে না, এমন তো নয়।

উল্লেখ্য, ২৯ জানুয়ারি দেশে নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে বলে জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, এ বছর দেশে আটজন ব্যক্তি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মাঝে পাঁচ জনই মারা গেছেন। এজন্য দেশবাসীকে শীতকালীন খেঁজুরের রস খাওয়ার ব্যাপারে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ৮ জন রোগী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৫ জন মারা গেছেন। এ ভাইরাসে ৭০ শতাংশ মারা যায়।

কাঁচা রস ও পাখিদের খাওয়া ফল খেলে এ রোগ হয় বলে জানান তিনি।

বাদুড় এ ভাইরাস বহন করে জানিয়ে তিনি বলেন, বাদুড়ের পান করা খেজুরের রস যদি কোনো ব্যক্তি পান করেন তাহলে তিনি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন। অসুস্থ মানুষের সংস্পর্শে গেলেও দ্রুত এ ভাইরাস ছড়ায়। তখন মাল্টিপল সংক্রমণ হয়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও জানান, নিপাহ ভাইরাস থেকে রক্ষায় মানুষকে সচেতন করতে পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা টিভিসি (সচেতনতামূলক ভিডিও) করেছি। সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালে আলাদা ইউনিট করে চিকিৎসা দিচ্ছি। নিপাহ ভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন নেই। আমাদের সচেতন থাকতে হবে। এজন্য কাচা রস পান করা যাবে না। পাখিদের খাওয়া ফল কোনো খাওয়া যাবে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার আনুমানিক ৪০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই হার ৭১ শতাংশ। এছাড়াও নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে গুরুতর স্নায়ুবিক জটিলতা দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং গর্ভবতী নারীদের গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এই জটিলতা আরও খারাপ হয়।

মানুষকে খেজুরের রস খাওয়া থেকে সতর্ক করতে, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরিন বলেন, সম্প্রতি আমরা মানুষের মধ্যে আবারও খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করছি এবং তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করার প্রয়াস দেখছি। এটি যে কী ধরণের বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে তা না জেনেই মানুষ খেজুরের কাঁচা রস খাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাইকে খেজুরের কাঁচা রস পান করতে নিষেধ করছি, রস সংগ্রহে যত সতর্কতাই অবলম্বন করা হয়ে থাকুক এটি অনিরাপদ।’

প্রসঙ্গত, নিপাহ ভাইরাস একটি জুনোটিক ভাইরাস (অর্থাৎ এটি প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়) এবং এটি দূষিত খাদ্য অথবা সরাসরি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে। টেরোপাস জেনাসের ফলখেকো বাদুড় এই ভাইরাসের প্রাকৃতিক ধারক এবং মহামারি সৃষ্টিতে সক্ষম রোগের মধ্যে এটি একটি।

বাংলাদেশে ২০০১ সালে প্রথম এই ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এবং তখন থেকে এই জনবহুল দেশে প্রায় প্রতি বছরই অনেক মানুষ মারা যায়। আইসিডিডিআর,বির তথ্য অনুযায়ী ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত, মোট ৩৩১ জন মানুষ নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৩৬ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।

সারাবাংলা/এসবি

নিপাহ ভাইরাস

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর