নিপাহ ভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় ১০ আইসিইউসহ ২০ বেড
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২২:১২ | আপডেট: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০০:২২
ঢাকা: দেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) বেডসহ মোট ২০টি আসন প্রস্তুত করার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
৩০ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শেখ দাউদ আদনানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
৩১ জানুয়ারি এই নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে এই নির্দেশনা ২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়— বর্তমানে দেশের ২৮ জেলায় নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১০ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড এবং ১০ বেডের আইসিইউ প্রস্তুত রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো।
নিপাহ ভাইরাসজনিত জ্বরের প্রকোপ দেখা দেওয়ায় হাসপাতালগুলোতে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে আগত রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসকদের ৭টি নির্দেশনা অনুসরণ করে চিকিৎসা সেবা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
১. রোগী দেখার সময় অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে।
২. রোগী দেখার আগে ও পরে সাবান দিয়ে হাত ধৌত করতে হবে।
৩. জ্বরের উপসর্গ দেখা গেলে রোগীকে আবশ্যিকভাবে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখতে হবে।
৪. জ্বরের সঙ্গে অজ্ঞান অবস্থা দেখা দিলে রোগীকে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের আইসিইউয়ে রাখতে হবে।
৫. আইসিইউতে থাকাকালে রোগীর পরিচর্যাকারীরা শুধু গ্লাভস, মাস্ক পরলেই হবে। কেননা নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী থেকে বাতাসের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়ায় না।
৬. যেহেতু আইসিইউতে রেখে এই রোগীর চিকিৎসা করা যায়, এ জন্য রেফার্ড করার প্রয়োজন নেই।
৭. কোনো প্রকার তথ্যের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের কল সেন্টারে ১৬২৬৩/৩৩৩ যোগাযোগ করবেন।
এর আগে, ২৯ জানুয়ারি দেশে নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে বলে জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘এ বছর দেশে আটজন ব্যক্তি নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মাঝে পাঁচ জনই মারা গেছেন। এজন্য দেশবাসীকে শীতকালীন খেঁজুরের রস খাওয়ার ব্যাপারে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ৮ জন রোগী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৫ জন মারা গেছেন। এ ভাইরাসে ৭০ শতাংশ মারা যায়।’
কাঁচা রস ও পাখিদের খাওয়া ফল খেলে এ রোগ হয় বলে জানান তিনি।
বাদুড় এ ভাইরাস বহন করে জানিয়ে তিনি বলেন, বাদুড়ের পান করা খেজুরের রস যদি কোনো ব্যক্তি পান করেন তাহলে তিনি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন। অসুস্থ মানুষের সংস্পর্শে গেলেও দ্রুত এ ভাইরাস ছড়ায়। তখন মাল্টিপল সংক্রমণ হয়।
মন্ত্রী বলেন, ‘নিপাহ ভাইরাস থেকে রক্ষায় মানুষকে সচেতন করতে পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা টিভিসি (সচেতনতামূলক ভিডিও) করেছি। সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতালে আলাদা ইউনিট করে চিকিৎসা দিচ্ছি। নিপাহ ভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন নেই। আমাদের সচেতন থাকতে হবে। এ জন্য কাঁচা রস পান করা যাবে না। পাখিদের খাওয়া ফল কোনো খাওয়া যাবে না।’
দেশে ২০০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২৮ জেলায় নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমিত রোগী পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার আনুমানিক ৪০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ হার ৭১ শতাংশ। এছাড়াও নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে গুরুতর স্নায়ুবিক জটিলতা দেখা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং গর্ভবতী নারীদের গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এই জটিলতা আরও গুরুতর হয়।
মানুষকে খেজুরের রস খাওয়া থেকে সতর্ক করতে, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরিন বলেন, সম্প্রতি আমরা মানুষের মধ্যে আবারও খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করছি। তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করার প্রয়াস দেখছি। এটি যে কী ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে তা না জেনেই মানুষ খেজুরের কাঁচা রস খাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাইকে খেজুরের কাঁচা রস পান করতে নিষেধ করছি, রস সংগ্রহে যত সতর্কতাই অবলম্বন করা হয়ে থাকুক এটি অনিরাপদ।’
প্রসঙ্গত, নিপাহ ভাইরাস একটি জুনোটিক ভাইরাস (অর্থাৎ এটি প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়) এবং এটি দূষিত খাদ্য অথবা সরাসরি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে। টেরোপাস জেনাসের ফলখেকো বাদুড় এই ভাইরাসের প্রাকৃতিক ধারক এবং মহামারি সৃষ্টিতে সক্ষম রোগের মধ্যে এটি একটি।
বাংলাদেশে ২০০১ সালে প্রথম এই ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এবং তখন থেকে এই জনবহুল দেশে প্রায় প্রতি বছরই অনেক মানুষ মারা যায়। আইসিডিডিআর,বির তথ্য অনুযায়ী ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত, মোট ৩৩১ জন মানুষ নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন, যার মধ্যে ২৩৬ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
সারাবাংলা/এসবি/একে