Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বয়স কমিয়ে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন, গ্রেফতার ২

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:১৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: জালিয়াতির মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধনের অভিযোগে এক নারীসহ ‍দু’জনকে গ্রেফতার করেছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। সংস্থাটি জানিয়েছে, চাকরির জন্য ‘বয়স কম’ দেখাতে দেড় হাজার টাকার বিনিময়ে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন করেছিলেন ওই নারী। গ্রেফতার অপর ব্যক্তি কম্পিউটার দোকানি, যিনি জালিয়াতির মাধ্যমে ওই নারীর জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করেছিলেন।

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে জন্ম নিবন্ধন সনদ নিতে এসে গ্রেফতার হন ওই নারী। তার তথ্যের ভিত্তিতে রাতে নগরীর ইপিজেড এলাকায় অভিযান চালিয়ে কম্পিউটার দোকানিকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) আসিফ মহিউদ্দীন।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতার দু’জন হল- রাকিব হোসেন হিমেল (২৭) এবং মনি দেবী (৩৫)।

গত ৮ জানুয়ারি থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত নগরীর ৬টি ওয়ার্ডে ৭৯৭টি ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের অস্তিত্ব পাওয়ার তথ্য দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর, ১৩ নম্বর পাহাড়তলী, ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা, ১৪ নম্বর লালখান বাজার, ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা এবং ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে এসব জালিয়াতির ঘটনায় তিনটি মামলা ও একাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে।

নগরীর খুলশী থানায় দু’টি ও হালিশহর থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলা তদন্ত করছে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।

ভুয়া জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকার তথ্য পেয়ে ২৪ জানুয়ারি নগরীর পতেঙ্গা থানার খালপাড় পকেটগেট এলাকা থেকে চারজনকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। তারা হলো- আব্দুর রহমান আরিফ (২৫), দেলোয়ার হোসেন সাইমন (২৩), মোস্তাকিম (২২) এবং তার ১৬ বছর বয়সী শ্যালক।

বিজ্ঞাপন

আব্দুর রহমান আরিফ পতেঙ্গা খালপাড় এলাকায় ‘আরিফ কম্পিউটার অ্যান্ড স্টুডিও’ নামে একটি দোকানের মালিক। ইপিজেড নারকল তলা এলাকায় ‘এস এম কম্পিউটার’ নামে সাইমনের একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। মোস্তাকিম ও তার শ্যালক এসব প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার ব্যবহার করে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন করতো বলে জানান সংস্থাটির কর্মকর্তারা। খুলশী থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় আরিফ, সাইমন ও মোস্তাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

একের পর এক ওয়ার্ডে সার্ভার ব্যবহার করে জালিয়াতির মধ্যেই বুধবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে নগরীর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে জন্ম নিবন্ধন সনদ নিতে যান মনি দেবী। এ সময় তার দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে ওয়ার্ডের কর্মকর্তারা দেখতে পান সার্ভারে অবৈধভাবে আপলোড করা ৪০৯টি জন্ম নিবন্ধন সনদের একটি ওই নারীর। তখন তাকে সেখানে বসিয়ে রেখে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তাদের খবর দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আসিফ মহিউদ্দীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মনি দেবী জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি ইপিজেড এলাকার একটি কম্পিউটারের দোকান থেকে জন্ম নিবন্ধন করেছেন। তিনি ইপিজেডের একটি কারখানায় চাকরির জন্য গিয়েছিলেন। সেখানে বয়স ৩৫ উল্লেখ করলে কারখানা কর্তৃপক্ষ ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে নিয়োগ দেওয়া হয় না বলে তাকে জানায়। সেজন্য বয়স কমিয়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ নেওয়ার জন্য মনি দেবী কম্পিউটারের দোকানে যান। এর পর দেড় হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি জন্ম নিবন্ধন করেন।’

এ তথ্য পাওয়ার পর কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা ইপিজেড এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাকিব হোসেন হিমেলকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার দোকান থেকে কম্পিউটার, প্রিন্টার, মোবাইলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

এডিসি আসিফ মহিউদ্দীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গ্রেফতার হিমেলও আগে গ্রেফতার চারজনের মতো মূলত মাঠ পর্যায়ে জন্ম নিবন্ধন করে দেওয়ার জন্য লোকজন সংগ্রহ করে। প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করে সেটা পিডিএফ ফরম্যাটে পাঠিয়ে দেয় অজ্ঞাত বসের কাছে। কথিত বস সেটা সার্ভারে ইনপুট দেন এবং জাল সনদ তৈরি করে হোয়াটস অ্যাপে হিমেলের কাছে পাঠায়। তখন হিমেল সেটা সরবরাহ করে। তার বিরুদ্ধে জাল জন্ম সনদ তৈরির অভিযোগে ২০২১ সালে ইপিজেড থানায় দায়ের হওয়া আরও একটি মামলা আছে।’

গ্রেফতার মনি দেবী এবং হিমেল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান এডিসি আসিফ মহিউদ্দীন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

ভুয়া জন্ম নিবন্ধন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর