আরসিবিসি‘র বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলা চলবে

ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলা বাতিলের দুটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছে নিউ ইয়র্কের আদালত। এতে ফিলিপাইনের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা চলতে আর কোন আইনি বাধা নেই। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত পেতে আইনি সুযোগ সৃষ্টি হলো।

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘ফিলিপাইনের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) সহযোগিতায় বাংলা‌দেশ ব্যাং‌কের রিজার্ভ চু‌রি হ‌য়ে‌ছে। এটা আমরা শুরু থেকে বলে আসছি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট (স্টেট কোর্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় আরসিবিসিসহ অভিযুক্ত ছয়জনের দায়ের করা মামলা খারিজ করে দিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে রায় দিয়েছেন। এই রায়ের ফলে রিজার্ভের অর্থ ফেরত পেতে বাংলাদেশের করা মামলা পরিচালনায় আর কোনো বাধা রইল না।’

তিনি বলেন, ‘স্টেট কোর্ট, আরসিবিসি ও অন্য বিবাদীদের ২০দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বিবাদীদের মধ্যস্থতার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন থেকে মামলার সব কাজ নিউ ইয়র্কে পরিচালিত হবে। এটা আমাদের জন্য বড় অ্যাডভানটেজ।’

এর আগে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনায় ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দ্য সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্কে (ফেডারেল কোর্ট) আরসিবিসিসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর আরসিবিসিসহ ছয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের মামলা বাতিল করার (মোশান চু ডিসমিস) আবেদন করে।

বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়ার পর ২০২০ সালের ২০ মার্চ ফেডারেল আদালত ফিলিপাইনের বিভিন্ন বিবাদী কর্তৃক দায়ের করা আবেদন খারিজ করে দিয়ে মামলাটি ফেডারেল কোর্টের পরিবর্তে স্টেট কোর্টে পরিচালনার আদেশ দেয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২৭ মে বাংলাদেশ ব্যাংক আবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট (স্টেট কোর্ট) আরসিবিসিসহ ফিলিপাইনের ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এই মামলা দায়েরের পর ফের ছয় বিবাদী এই মামলাটিও বাতিলের আবেদন করে। বিবাদীপক্ষের আবেদনের বিষয়ে ২০২১ সালের ১৪ জুলাই ও ১৪ অক্টোবর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। নিউইয়র্ক কাউন্টি সুপ্রিম কোর্ট ২০২২ সালের ৮ এপ্রিল মামলার আংশিক রায়ে দুটি প্রতিষ্ঠানকে অব্যাহতি দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক আপিল আবেদন করে, যা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। সর্বশেষ গত ১৩ জানুয়ারি স্টেট কোর্ট আরসিবিসি ও অন্যান্য বিবাদী আবেদন করেছেন।

আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ক্ষেত্রে আরসিবিসির উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জোগসাজশ ছিল। এতে বলা হয়, আরসিবিসি’র নিউইয়র্কের হিসাব ব্যবহার না হলে এবং ফিলিপাইনে আরসিবিসি অভিযুক্তদের সহযোগিতা না করলে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে ওই অর্থ অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ ছিল না। স্টেট কোর্ট আরসিবিসি ও অন্যান্য বিবাদীদের আগামী ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জবাব দেওয়ার আদেশ এবং মধ্যস্থতার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নিউইয়র্কে নিয়োজিত বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনি প্রতিষ্ঠান মধ্যস্থতার বিষয়টি পর্যালোচনা করবে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে পাচার হওয়া এই অর্থ প্রথমে গিয়েছিল ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের ৪টি ভুয়া অ্যাকাউন্টে। তারপর সেখান থেকে দ্রুত এই অর্থ তুলে নেয় হ্যাকাররা। পরবর্তী সময়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে দেড় কোটি ডলার উদ্ধারে সমর্থ হয়েছে বাংলাদেশ।

সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম

আরসিবিসি টপ নিউজ বাংলাদেশ ব্যাংক মামলা চলবে