আদিবাসীদের জন্য বাজেট বরাদ্দ কমেছে ৪.৩৪ শতাংশ
১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:১৮
ঢাকা: দেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেট বরাদ্দ কমেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেট বরাদ্দ কমেছে ৪.৩৪ শতাংশ। টাকার অঙ্কে বাজেট কমার পরিমাণ ১০৮ কোটি। ‘বাংলাদেশের পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য বাকেটে কতটা বরাদ্দ রাখা হয় এবং কতটা ব্যয় করা হয়’ শীর্ষক এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
রোববার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এই সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরে। সমীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারকাত।
গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেন, ‘২০২০-২১ অর্থবছরে আদিবাসীদের জন্য বাজেট বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা, ২০২১-২২ এ তা কমে ২ হাজার ৪০০ কোটিতে দাঁড়ায়। অর্থাৎ ১০৮ কোটি টাকার বা ৪.৩৪ শতাংশ বাজেট বরাদ্দ কমেছে। আর বর্তমান মুদ্রাস্ফীতিকে বিবেচনায় আনা হলে এই বাজেট হ্রাসের পরিমাণ বেড়ে ৬ শতাংশে দাঁড়াবে। ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে এ সমতল আদিবাসীদের বাজেট বরাদ্দ ৭.৮৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও, পাহাড়ের আদিবাসীদের ক্ষেত্রে তা ৯.৩৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।’
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, ফজলে হোসেন বাদশা, আদিবাসী নেতা সঞ্জীব দ্রং। এতে সভাপতিত্ব করেনমানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আদিবাসীদের জীবন মান উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করছে। আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে সব জনগোষ্ঠী একসঙ্গে এগিয়ে যাবে। আমরা কাউকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাব না। বর্তমান সরকার সবার ন্যয্যতা প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে সংবেদনশীল।’
সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় বাজেটে আদিবাসীদের জন্য যেমন পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয় না, তেমনি বাজেট তৈরি করার প্রক্রিয়ার মধ্যেও আদিবাসীদের অংশগ্রহণও খুব সামান্য। এমনকি আদিবাসী নেতা ও জনগণের কাছেও জানতে চাওয়া হয় না যে তাদের কী প্রয়োজন, কতটা প্রয়োজন। যে কারণে ‘খুব একটা দরকারি নয়’ এমন বিষয়ও বাজেটে ধরা হয়, আবার কিছু জরুরি প্রয়োজনও উপেক্ষিত হয়। সেজন্যই আদিবাসীদের জন্য বাজেট বরাদ্দ, বাজেট ব্যয় এবং প্রকৃত প্রয়োজনের ব্যাপারটি উপেক্ষিতই থেকে যায়।
আদিবাসীদের জন্য কিছু জরুরি খাতও বাজেটে নাই বলে সমীক্ষা রিপোর্টটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সমতলের আদিবাসীদের কাজ না থাকার মাসগুলোতে খাদ্য সহয়তা প্রদান, দখলকৃত ভূমি উদ্ধারের জন্য আইনী ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান, মাতৃভাষায় শিক্ষা সুবিধা প্রাপ্তি, জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান, মাতৃভাষায় শিক্ষা, ন্যায্য স্বাস্থ্য সুবিধা প্রাপ্তি, জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান, আদিবাসী সংস্কৃতি ও জ্ঞানকে বর্ধিত করা। আদিবাসী নারী সবচেয়ে অবহেলিত ও মানবাধিকার বঞ্চিত হলেও মোট জেন্ডার বাজেটের মাত্রা ১ শতাংশ রাখা হয়েছে আদিবাসী নারীর ক্ষমতায়নের জন্য।
অনুষ্ঠানে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। উল্লেখযোগ্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- আদিবাসী মানুষের জন্য সমতল, পার্বত্য নির্বিশেষে বাজেট বরাদ্দ অন্তত দ্বিগুণ বাড়াতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ মানব উন্নয়ন এবং আর্থিক উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট খাতসমূহে বরাদ্দ বর্তমানের তুলনায় ৩ গুণ বাড়াতে হবে। সমতলের আদিবাসী মানুষের দারিদ্র্য নিরসন ও উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি পৃথক মন্ত্রণালয় এবং সেই মন্ত্রণালয়ের জন্য যথাযথ বাজেট বরাদ্দ থাকা জরুরি।
সারাবাংলা/ইএইচটি/একে