Wednesday 08 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘পরিবেশ রক্ষায় সমাজ-সচেতনতা জরুরি’

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
১৩ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:৫৮

ঢাকা: পরিবেশ রক্ষায় সমাজের লোকেদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। সমাজ সচেতন থাকলে অসঙ্গতিগুলোর প্রতিবাদ করা যায়, সংশোধন করা যায়। এ ছাড়া পরিবেশ রক্ষায় রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ সমাবেশের বক্তারা।

শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সকাল থেকে শুরু হওয়া পরিবেশ সমাবেশে এসব কথা বলেন বক্তারা।

পরিবেশ রক্ষায় জনসমর্থন প্রদর্শন এবং বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ সমাবেশের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন)।আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হবে বাপা-বেন সম্মেলন। এবারের সম্মেলনের বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বাংলাদেশের হাওর, নদী, ও বিল : সমস্যা ও প্রতিকার’।

এদিকে, দুই ধাপে অনুষ্ঠিত আজকের সমাবেশের প্রথম অংশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও বাপা’র সহ-সভাপতি ড. আতিউর রহমান, বাপা’র নির্বাহী সদস্য এবং বেন’র বৈশ্বিক সমন্বয়ক অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও বাপা’র সহসভাপতি অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদ, বাপা’র সহসভাপতি অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদার, ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, বাংলাদেশ পরিবেশবিদ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ অনেকে।

পরিবেশ রক্ষায় সমাজের গুরুত্বারোপ করে সমাবেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও বাপা’র সহ-সভাপতি ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘সমাজ যখন সচেতন থাকে, তখন অন্যান্য অসঙ্গতিতে প্রতিবাদ করা যায়, সংশোধন করা যায়। মানুষ মানুষের যখন কাছাকাছি আসে, সামাজিক সম্পদ বা পুঁজি তৈরি হয়। এ সংগঠিত মানুষ যখন প্রাণের কথা বলে, পরিবেশের কথা বলে, তখন সমাজের ভেতরে এক ধরনের সক্রিয়তা তৈরি হয় এবং সেই সক্রিয়তা শেষ পর্যন্ত পরিবেশবান্ধব, আমাদের বেঁচে থাকার উপায়গুলোর কথা বলে। আমাদের এ আন্দোলন একদিনেই শেষ হবে না। এটি ধীরে ধীরে আরও দানা বাঁধবে। প্রতিবাদী হলে কিছু কিছু কথা নীতিনির্ধারকদের কানে যায়।’

বিজ্ঞাপন

বাপা’র নির্বাহী সদস্য এবং বেন’র বৈশ্বিক সমন্বয়ক অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জামান বলেন, ‘চারদিকে আজ আমাদের রূপসী বাংলা নেই। আমাদের বাংলা আজ আর সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা নেই। আজ নজরুল বেঁচে থাকলে বলতেন না বাংলাদেশ শ্যামলা বরণ মায়ের রূপে রয়েছে। আমরা প্রকৃত রূপসী বাংলা চাই। আমরা সোনার বাংলা চাই, যে সোনার বাংলার স্বপ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন।’

পরিবেশ এবং পরিবেশ আন্দোলনের প্রতি রাজনৈতিক নেতাদের সহমর্মিতা প্রত্যাশা করে সিপিডি’র সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই মহাসমাবেশ আন্দোলনের একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। কারণ আমরা আমাদের এই সংগ্রামকে একটি অন্য পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। এবারের এ বছরটি আগামী বছরের নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাইব, আমাদের যেসব রাজনৈতিক নেতারা আছেন, যারা আমাদের জাতীয় আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করেন, তারা এ পরিবেশ এবং পরিবেশ আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করবেন।’

এদিকে, দুপুর থেকে শুরু হওয়া পরিবেশ সমাবেশের দ্বিতীয় অংশে বক্তব্য রাখেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত বাপা নেতারা। এ সময় তারা নিজ নিজ জেলার পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করেন।

খুলনা বিভাগের বানিশান্তা থেকে আগত কিষাণ কুমার মণ্ডল বলেন, ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ আন্দোলন করে। মংলা বন্দরের কারণে কৃষকের পেটে লাথি পড়েছে। আগে কৃষক বাঁচাতে হবে, তাতে কৃষিজমি বাঁচবে, তাতে বাঁচবে দেশ। আমরা চাই, মংলা বন্দরের উন্নয়ন হোক! কিন্তু কৃষকের পেটে লাথি মেরে নয়।’

সুন্দরবন বাপার নেত্রী কমলা সরকার বলেন, ‘চিলা ইউনিয়নের বর্ডারে আমার বাড়ি। চিলা অঞ্চলে বালু ভরাট করা হয়েছে ১০ বছর আগে। কিন্তু, এতে এখনও একটা ঘাসও জন্মায়নি। আমাদের সরকার বলে, বালু ভরাট করলে জৈব সার উৎপন্ন হবে। তাতে চাষাবাদ ভালো হবে। কই, ১০ বছরেও হলো না। আমরা উন্নয়ন চাই। কিন্তু মানুষের কোনো ক্ষতি করে নয়।’

বিজ্ঞাপন

মোংলা বাপার আহ্বায়ক নুরে আলম বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষা এবং জীবন রক্ষার আন্দোলন আজ এক হয়ে গেছে। পরিবেশের আন্দোলন শুধু শিক্ষিত-বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সারা বাংলাদেশের আপামর জনগণের মধ্যে বিস্তৃত। খুলনা বিভাগে অনেক সমস্যা আছে। সুন্দরবনের ৫৫ শতাংশ অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে বন বিভাগ। সেখানে প্রভাবশালীরা বিষ ঢেলে মাছ শিকার করে। পশুর নদীকে রক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া, ইট ভাটার নামে সারা খুলনা বিভাগে বাতাস দূষণ করা হচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে যারা ক্ষমতায় রয়েছে, তাদের চাপ দিয়ে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।’

রংপুর বিভগ থেকে আগত তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের নেতা ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘তিস্তা পাড়ের পানির সমস্যা আপনারা সবাই জানেন। শুষ্ক মৌসুমের পানিশূন্যতার সমসস্যা, অন্য সময়ে বন্যার সমস্যা। পানির সমস্যা রাজনৈতিক কারণে। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হলে তিস্তার পারের মানুষ শান্তিতে থাকব। যেসব উন্নয়নের কথা বলা হয়, সেগুলো উন্নয়ন নয়; বরং ধ্বংসা করে দেওয়া। যে সমস্যাগুলো জাতীয় পর্যায়ে উঠিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মিডিয়া এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা অবহেলা করেছেন, এড়িয়ে গেছেন।’

হবিগঞ্জ বাপার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘আমাদের খোয়াই নদীর তলদেশ নিয়ে সমস্যা আছে। শহরকে পুকুরের নদী বলা হতো। সেই পুকুরগুলোও হারিয়ে গেছে। আমি আশা করব, এই সমস্যাগুলো নিয়ে যে আন্দোলন, সে ব্যাপারে এগিয়ে আসবেন।’

সারাবাংলা/আরআইআর/একে

পরিবেশ আন্দোলন পরিবেশ রক্ষা বাপা

বিজ্ঞাপন

৭ বছর পর মা-ছেলের সাক্ষাৎ
৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৩৮

আরো

সম্পর্কিত খবর