‘একসাথে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখা চ্যালেঞ্জিং’
১১ জানুয়ারি ২০২৩ ০০:১২ | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৩ ১৩:২৮
ঢাকা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, একইসঙ্গে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখার বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং। তাদের সমস্যা থাকতে পারে। তবে আমরা সুসম্পর্ক রাখব তাদের সঙ্গে।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভা শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিনি।
সোমবার (৯ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে আফ্রিকা মহাদেশ সফরে যাওয়ার পথে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রা বিরতি করেন চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিন গ্যাং। আনুমানিক রাত ২টার পরে এই যাত্রাবিরতিতে বিমানবন্দরে তাকে সঙ্গ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ৫২ মিনিটের এই যাত্রাবিরতিতে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়ার পরে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনায় উঠে আসে নানা বিষয়। এর মাঝে চীনের সহযোগিতায় বাস্তবায়িত প্রকল্প, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক ফোরামে একসঙ্গে কাজ করাসহ বিভিন্ন বিষয় স্থান পায় বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
ইথিওপিয়াসহ আফ্রিকার পাঁচ দেশ সফরে যাচ্ছেন চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সফরে বেইজিং থেকে আফ্রিকা যাওয়ার পথে জ্বালানি সংগ্রহের জন্য চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী উড়োজাহাজ ঢাকায় যাত্রাবিরতি করে বলে জানান তিনি। পদ্মাসেতুসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ঠিকাদার হিসাবে চীনের সহযোগিতা, বিশেষ করে পদ্মাসেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পে চীনের সহায়তার বিষয়টি আলোচনায় স্থান পেয়েছে বলে জানান মোমেন।
বর্তমানে বাংলাদেশ সফর করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর রিয়ার অ্যাডমিরাল আইলিন লাউবাচার এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির একটি প্রতিনিধি দল। এছাড়াও, সামনের সপ্তাহেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকায় আসছেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
অল্প সময়ে মধ্যে দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাংলাদেশ সফর বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এটা ভালো খবর, আমরা অনেক দেশ থেকে যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছি। ভূ-রাজনীতি ছাড়াও বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়েছে। বিদেশিরা বুঝতে পেরেছে যে, বাংলাদেশে প্রচুর ব্যবসার সুযোগ রয়েছে। কেউ হাতছাড়া করতে চায় না। বাংলাদেশও সব দেশের সঙ্গে আরও বেশি সম্পৃক্ত থাকতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশ বিভিন্ন বৈশ্বিক পরাশক্তির ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। আমি অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ, অনেক দেশ ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির কারণে আমাদের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।’
দুই দেশের (চীন ও যুক্তরাষ্ট্র) উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে বাংলাদেশের ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে ড. মোমেন বলেন, ‘এটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। তাদের মধ্যে সমস্যা থাকতে পারে। এটি তাদের মাথাব্যথা। আমরা তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখব। বাংলাদেশ তার পররাষ্ট্রনীতির কথা অর্থাৎ সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বিদ্বেষ নয়- নীতি সফলভাবে বজায় রেখে চলেছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসন্ন সফর বিষয়ে ড. মোমেন বলেন, ‘ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুব ভালো। আমরা এটিকে আরও দৃঢ় করতে চাই।’
বিমানবন্দরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার সাক্ষাতের বিষয়ে ড. মোমেন বলেন, ‘ঢাকা চীনসহ সব দেশের সঙ্গে সম্পৃক্ততার মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি বজায় রাখে। আমি তাকে বলেছিলাম যে, আমরা একটি ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক নীতি বজায় রাখছি। তাই আমাদের সকলের সঙ্গে হাঁটতে হবে। আমরা সময়ে সময়ে চীনের প্রতিও আমাদের সমর্থন প্রসারিত করব।’
কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন বাংলাদেশকে সহায়তার জন্য চীন সরকারকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম