Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশের এক চতুর্থাংশ মানুষই ভোগেন উচ্চ রক্তচাপে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:৪০ | আপডেট: ৮ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:১৬

ঢাকা: দেশের এক চতুর্থাংশ মানুষই উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন যেন না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে প্রত্যেককেই। হাইপারটেনশন হলে হার্ট অ্যাটাক হবে, কার্ডিওমায়োপ্যাথি হবে, নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার হয়ে স্ট্রোক হবে, চোখে রেটিনোপ্যাথি হবে, নেত্রোপ্যাথি হবে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৮ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লক মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল সাব-কমিটির আয়োজনে হাইপারটেনশন বিষয়ক মাসিক সেন্ট্রাল সেমিনারে এ সব কথা বলেন বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তাফা জামান ও শিশু নেফ্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রণজিত কুমার রায়।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা সেন্ট্রাল সেমিনারে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করে থাকি যা সবার জন্য প্রযোজ্য। আজকের বিষয় হাইপারটেনশন। হাইপারটেনশন নিয়ে জানাশোনা সব বিভাগেরই লাগে। আমাদের এখানে ৫৭টি বিভাগের সবারই এ নিয়ে জ্ঞান থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘অপারেশন করার আগে ব্লাড প্রেসার বেশি থাকলে অপারেশন করা যায় না। যে রোগীকে ট্রিটমেন্ট দিয়ে যাচ্ছেন, সে রোগীকে কত পর্যন্ত ব্লাড প্রেসার রাখা লাগবে তা অবশ্যই চিকিৎসককে জানতে হবে। যারা মোটা তাদের প্রেসার, স্মোকারদের প্রেসার একরকম হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা বয়স্ক তাদের অবশ্যই নিয়মিত ব্লাড প্রেসার মাপতে হবে। যাদের বয়স তিন থেকে ১০ বছর তাদের ব্লাড প্রেসার মাপতে হবে। যারা মোটা তাদের নিয়মিত প্রেসার চেক আপ করতে হবে। যারা সুগার খান তারা মাঝে মাঝে প্রেসার চেক আপ করতে হবে। কাঁচা লবণ খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন, ইউজিসি অধ্যাপক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সজলকৃষ্ণ ব্যানার্জী।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সেন্ট্রাল সাব কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী।

সেমিনারে বলা হয়, শুধু বাংলাদেশ নয় সারাবিশ্বের একটি বড় ঝুঁকি হলো হাইপারটেনশন। হাইপারটেনশনসহ সব রোগের চিকিৎসা শুরু হয় রোগ নির্ণয়ের প্যারাম্যাটার বা পরিমাপ দিয়ে। এ জন্য পরিমাপটা যথাযথ হতে হয়। ব্লাড প্রেসার মাপার পূর্ব শর্ত হলো, সঠিক মাপের কাপ ব্যবহার করা।

সেমিনারে জানানো হয়, বয়সভিত্তিক কাপ ফলো করা উচিত। ব্লাড প্রেসার অবশ্যই দু’হাতের বাহুতে মাপতে হবে। যদি দুটি হাতের প্রেসারের তারতম্য থাকে তবে অবশ্যই যেটির প্রেসার বেশি সেটি সঠিক পরিমাপ হিসেবে নিতে হবে। যখন রোগীর প্রেসার মাপা হয় তখন রোগীকে অবশ্যই তার পিছনে ভরের সাপোর্ট নিয়ে বসতে হবো, পা আড়াআড়ি করে বসা যাবে না।

সেমিনারে আরও জানানো হয়, ব্লাড প্রেসার মাপার আগে অবশ্য পাঁচ মিনিট আরামে চুপচাপ বসে থাকতে হবে। প্রেসার পরিমাপের জন্য সারা বিশ্বের বিভিন্ন গাইডলাইন আছে। এমেরিকান কলেজ ও কার্ডিওলজির গাইডলাইন মতে সাধারণ সিস্টোলিক প্রেসার ১২০মিমিএইচজি এর কম ও ডায়াস্টোলিক ৮০ মিমিএইচজি বেশি প্রেসার। এটিকে ইলেভেটেড হিসেব করা ধরা হয় সিস্টোলিক ১২০-১২৯ মিমিএইচজি এবং ডায়াস্টোলিক ৮০-৮৯ মিমিএইচজি। তবে হাইপারটেনশনের ক্ষেত্রে স্টেজ -১ এর ক্ষেত্রে সিস্টোলিক ১৩০-১৩৯ মিমিএইচজি এবং ডায়াস্টোলিক ৮০-৮৯ মিমিএইচজি ।

সেমিনারে জানানো হয়, হাইপারটেনশন স্টেজ-২ এর ক্ষেত্রে সিস্টোলিক ১৪০ মিমিএইচজি এবং ৯০ মিমিএইচজি সমান বা কম প্রেসার। চিকিৎসার সময় ঠিকমত প্রেসার না মাপতে পারলে বিপর্যয় ঘটতে পারে। প্রেসার মাপার দুই ধরণের বিপি মেশিন রয়েছে। ১. ম্যানুয়াল স্ফিগমোম্যানোমিটার,এর আবার দুটি ধরণ আছে। ক.মার্কারি স্ফিগমোম্যানোমিটার: পারদস্তম্ভের উচ্চতার ওপর ভিত্তি করে রক্তচাপ পরিমাপ করার যন্ত্রকে বলে মার্কারি স্ফিগমোম্যানোমিটা,খ, অ্যানেরয়েড স্ফিগমোম্যানোমিটার: এটি মার্কারি স্ফিগমোম্যানোমিটারের তুলনায় অধিকতর নিরাপদ। ২. ডিজিটাল স্ফিগমোম্যানোমিটার: প্রেশার সেন্সর ও মাইক্রোপ্রসেসরের সমন্বয়ে এটি একধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস। কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই এটি ব্যবহার করা যায়। তবে পরিবেশের কথা চিন্তা করে ধীরে ধীরে মার্কারি স্ফিগমোম্যানোমিটার বাদ দেওয়া হচ্ছে।

সেমিনারে আরও জানানো হয়, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে যতগুলো প্রেসার মাপার যন্ত্র আসছে সেগুলো চাহিদা মাফিক মানদণ্ডের নয়। দিন দিন যত মেশিনপত্র বাইরে থেকে আসছে তত মান খারাপ হচ্ছে। তবে সময়ের পরিক্রমায় ডিজিটাল প্রেসার মেশিনের চাহিদা বাড়ছে এমন দিন আসবে যেদিন সকলেই ঘরে বসে ব্লাড প্রেসার মাপবে।

সেমিনারে জানানো হয়, রোগীর জন্য নির্ধারিত প্রেসক্রাইবড ওষুধ খেতে হবে। এজন্য সকল জায়গায় সরকারি ওষুধ সরবরাহ বাধ্যতামূল করতে হবে। হাইপারটেনশন প্রতিরোধের জন্য ধুমপান গ্রহণ বন্ধ করা, এলকোহল খাওয়া বন্ধ করা,নিয়মিতদ শরীর চর্চা করা উচিত। এছাড়া ওজন কমানো, হৃদরোগ প্রতিরোধে খাবার লবণ কম খাওয়া, প্রতিদিন সবজি বা ফল খেতে হবে, খাদ্যে স্বাস্থ্যসম্মত তেল ব্যবহার, লাল মাংস কম খাওয়া, সুগার কম খাওয়া, মাছ খাওয়া এবং ওমেগা ও ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার সপ্তাহে দুবার খেতে হবে।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেন্ট্রাল সাব কমিটির সদস্য সচিব নিউরোলজি বিভাগের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সবুজ ও রেসপেরিটোরি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সম্প্রীতি ইসলাম।

সেমিনারে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, কনসালটেন্ট, চিকিৎসক ও রেসিডিন্টরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এসবি/একে

উচ্চ রক্তচাপ টপ নিউজ প্রেসার বিএসএমএমইউ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর