তীব্র শীতে দেখা নেই সূর্যের, জনজীবন বিপর্যস্ত সিরাজগঞ্জে
৬ জানুয়ারি ২০২৩ ১১:৫৩
সিরাজগঞ্জ: মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আর ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাসে শীতের তীব্রতা জেঁকে বসেছে সিরাজগঞ্জে। গত তিন-চার দিনেও দেখা মেলেনি সূর্যের। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলসহ জেলার জনজীবন। সবচেয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও নিম্নআয়ের মানুষরা।
এদিকে, ঘন কুয়াশার কারণে মহাসড়ক ও নৌ চলাচলে বিঘ্নিত হচ্ছে। সড়ক, মহাসড়কে বাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যানগুলোকে হেডলাইন জ্বালিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলতে দেখা গেছে। আর আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে গ্রাম-গঞ্জের অসহায় মানুষরা।
শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) দুপুরে তাড়াশ আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, নদী অববাহিকা অঞ্চলগুলোতে ঘন কুয়াশা পড়েছে। আজ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তিনি আরও বলেন, উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাসে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকবে ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার। আগামী তিনদিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা পার্থক্য হ্রাসের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীত অব্যাহত থাকতে পারে।
সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম (৫৫) বলেন, ‘ঠাণ্ডা বাতাস ও তীব্র শীত উপেক্ষা করে বেগুন ও কাঁচা মরিচ ক্ষেতের পরিচর্য়া করতে হচ্ছে। আমরা গরীব মানুষ, শীতের কাপড় কেনার সামর্থ্য নাই। তাই ঠাণ্ডার মধ্যেও কাজ করতে হচ্ছে।’
তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ গ্রামের কৃষক মান্নান শেখ (৫০) বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে খুব শীত পড়েছে। বিলাঞ্চলে আমার বাড়ি, রাত হলেই নদীর ঠাণ্ডা বাতাস শিনশিন করে গায়ে লাগে। গরিব মানুষ, টাকা-পয়সা তেমন নাই। এ কারণে ছেলে-মেয়েদের শীতের কাপড় কিনে দিতে পারি নাই।’
সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের কাটাঙ্গা ঘাট এলাকার নৌকার মাঝি আলী আশরাফ ও জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘন কুয়াশার কারণে নদী দিক ঠিক রাখা যায় না। অনেক সময় দিক ভুল হয়ে নৌকা চরে গিয়ে আটকে যায়। আগে, এই ঘাট থেকে শহরের মতি সাহেবের ঘাটে যেতে আগে সময় লাগত ৪০ মিনিট। এখন লাগে ২ ঘণ্টা।’
চরের গোড়ার গাড়ি চালক শফিকুল ইসলাম বলেন, বর্ষাকালে নৌকা আর শুকনো মৌসুমে ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে জিবিকা নির্বাহ করে থাকি। সংসার চালানোর জন্য তীব্র শীতের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ ঘোড়ার গাড়ি চালাই। দৈনিক আয় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় হলেও ঘোড়ার খাবারের জন্য ব্যয় করতে হয় ২৫০ টাকা। বাকি টাকায় চলে সংসার।
এদিকে, উত্তরের হিমেল হাওয়া ও শীতের তীব্রতা বাড়ায় জেলার নিম্নআয়ের মানুষজন পুরাতন কাপড়ের বাজারে ভিড় করছেন। শহরের নিউ মার্কেট এলাকার পুরাতন কাপড়ের দোকানগুলোতে স্বল্প আয়ের মানুষের ভিড় দেখা গেছে। এতে বিক্রি বেড়েছে কাপড়ের দোকানগুলোর।
পুরাতন কাপড় কিনতে আসা রিক্সা চালক সুজাব আলী (৬০) বলেন, ‘কঠিন ঠাণ্ডা পড়েছে। এত ঠাণ্ডায় কাজ করতে পারি না। কনকনে শীতের কারণে সোয়েটার কেনার জন্য এসেছি। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় কিনতে পারছি না।’
শহরের নিউ মার্কেট এলাকার পুরাতন কাপড়ের ব্যবসায়ী বাবু শেখ (২৫) বলেন, গত ১ সপ্তাহ ধরে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেনা বেচা বেড়েছে, দাম আগের মতোই আছে।
কাওয়াকোলা ইউনিয়নের পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া মুন্সী বলেন, ‘সরকারি বরাদ্দের ৪৯০টি কম্বলসহ ব্যক্তিগত আরও ১০০ কম্বল শীতার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বাবুল কুমার সূত্রধর বলেন, ‘কয়েকদিনের তীব্র শীতের কারণে কৃষক ও শ্রমিকরা ক্ষেতে কাজ করতে না পারলে ফসলের ক্ষতি হবে। তবে অনেকে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করেই কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত ফসলের কোনো ক্ষয়ক্ষতি খবর পাওয়া যায়নি।’
জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৪৪ হাজার ১০০ ও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে আরও ১০ হাজার কম্বল জেলার ৭টি পৌরসভা ও ৮৩টি ইউনিয়নে ৪৯০টি করে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আরও ২০ হাজার কম্বল বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। কম্বলগুলো হাতে পেলে পর্যায়ক্রমে শীতার্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।’
সারাবাংলা/এনএস