কাস্টমসে নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, গ্রেফতার ২৩
২৮ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:৫৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের সিপাহী পদে জনবল নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে মোট ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ‘পরীক্ষার্থী’ ভাড়া করে লিখিত পরীক্ষা দিয়ে মৌখিকে এসে তারা ধরা পড়েন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর সাগরিকা রোডে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট প্রশিক্ষণ একাডেমি থেকে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পাহাড়তলী থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন— রফিকুল ইসলাম (৩৪), শামীম আখন্দ (৩০), শামীম প্রধান (৩০), শাহেদ মিয়া (২৮) ও মো. নূরনবী (৩৪)।
এর আগে, একই অভিযোগে গ্রেফতার ১৮ জনকে গতকাল মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন— আবুল বাশার (৩৪), এনামুল হক (৩০), শহীদুল ইসলাম (৩৪), রফিকুল ইসলাম (২৮), আব্দুর রশিদ (৩৭), সবুজ চন্দ্ৰ (৩৫), জয় চন্দ্র দে (২৮), বাবুল মিয়া (৩৩), মোবারক হোসেন (২৭), আক্তারুজ্জামান (৩৬), খলিলুর রহমান (৩১), আরিফুর রহমান (২৮), সুজন সরকার (২৯), নিতোষ চাকমা (৩২), সোহেল রানা (২৮), মো. ইলিয়াছ (৩২), কাজী দেলোয়ার হোসেন (৩৮) এবং মো. মহিউদ্দিন (২৯)।
জানা গেছে, ২০১৪ এবং ২০১৭ সালে চট্টগ্রামে কাস্টমস হাউজে দুই দফায় সিপাহী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছিল। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম স্থগিত ছিল। জটিলতা অবসানের পর গত ১১ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত একমাস ধরে প্রার্থীদের শারীরিক যোগ্যতার পরীক্ষা নেওয়া হয়। ২৩ ডিসেম্বর প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। পরে গত সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হয় কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট প্রশিক্ষণ একাডেমিতে শুরু হয় মৌখিক পরীক্ষা। তিনদিন ধরে চলা পরীক্ষার শেষদিন ছিল আজ বুধবার।
নগর পুলিশের পাহাড়তলী জোনের সহকারী কমিশনার একেএম মহিউদ্দিন সেলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মৌখিক পরীক্ষার প্রথমদিন ১৮ জন এবং আজ (বুধবার) শেষদিনে আরও ৫ জনকে কাস্টমস কর্মকর্তারা আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তারা কেউই লিখিত পরীক্ষা দেননি। পরীক্ষার্থী ভাড়া করে তাদের মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, ১০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকায় তারা প্রক্সি পরীক্ষার্থী ভাড়া করেন।’
পুলিশ জানায়, প্রথম দফায় গ্রেফতার ১৮ জনের বিরুদ্ধে পাহাড়তলী থানায় মামলা দায়ের করেন চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ চৌধুরী। এদের মধ্যে ১৭ জনকে গতকাল মঙ্গলবার আদালতে হাজিরের পর কারাগারে পাঠানো হয়। মহিউদ্দিন নামে এক প্রার্থী আটকের পর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে পুলিশ হেফাজতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলায় গ্রেফতার ১৮ জনের পাশাপাশি তাদের হয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া অজ্ঞাতনামা ১৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
পাহাড়তলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রোজিনা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ আজ (বুধবার) গ্রেফতার হওয়া পাঁচজনের বিরুদ্ধে পৃথম মামলা দায়ের করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। আদালতের নির্দেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
জালিয়াতি সংক্রান্ত মামলার বাদী পাহাড়তলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এনামুল হক সারাবাংলাকে জানান, চট্টগ্রাম কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার ড. আবু নুর রাশেদ আহমেদের নেতৃত্বাধীন নিয়োগ কমিটির সদস্যরা জালিয়াতির বিষয়টি উদঘাটন করেন। মৌখিক পরীক্ষার শুরুতে লিখিত পরীক্ষার স্বাক্ষর পাতার স্বাক্ষরের সঙ্গে মৌখিকের মিল আছে কি না যাচাই করা হয়। সেখানে ২৩ জনের স্বাক্ষরে অমিল পাওয়া যায়। তাদের আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় লিখিত পরীক্ষার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জিজ্ঞাসা করা হয়। কিন্তু কেউই সঠিক উত্তর দিতে পারেননি।
এরপর নিয়োগ কমিটি তাদের আটক করে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের হাতে তুলে দেয় বলে জানান এসআই এনামুল হক।
সারাবাংলা/আরডি/এনএস