আওয়ামী লীগে নেপথ্যের কাণ্ডারি শেখ রেহানা
২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:০৫ | আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:৫১
ঢাকা: পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সব হারিয়ে বেঁচে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার দলটির হাল ধরে স্বপ্নযাত্রার পথে জয়রথ ছুটে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের ৭৩ বছরের পথচলার মধ্যে ১৯৮১ সাল থেকে দলটির হাল ধরে চারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন করে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। আর বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা বড় বোনের ছায়াসঙ্গী হয়ে পাশে আছেন।
দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাফল্য সংগ্রাম ও অর্জনের পথ পেরিয়ে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার পথচলার আরেক নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ৪১ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নৌকার হাল ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন।
স্বাধীন দেশে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট পরিবারের সবাইকে হারিয়ে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়েছে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে।
শেখ হাসিনাকে তার অনুপস্থিতেই ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলীয় সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্লোগানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সম্মেলনে এবারও দলের সভাপতি হিসাবে স্বপদে বহাল থাকবেন তিনি। ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের মধ্য দিয়ে টানা ১১ বার সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ‘জয় বাংলা’র নৌকাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার গুরুভার পাবেন বঙ্গবন্ধুর বড় কন্যা শেখ হাসিনা। কিন্তু ১৫ আগস্ট রাতে পিতা-মাতা ভাই স্বজন হারিয়ে নিঃস্ব দুই বোনের মধ্যে ছোট বোন শেখ রেহানা দলীয় পদ ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকে ছায়াসঙ্গী হিসাবে নেপথ্যে সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন বড়বোনকে। যে কারণে তিনি আজ দলটির আপামর নেতাকর্মীদের কাছে ছোট আপা হিসাবে পরিচিত পেয়েছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর বিপথগামী একদল সদস্য যখন সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করে, তখন স্বামীর কর্মসূত্রে ইউরোপে ছিলেন শেখ হাসিনা। সেসময় তার সঙ্গে থাকা ছোট বোন শেখ রেহানাও প্রাণে বেঁচে যান। ওয়াজেদ মিয়া তখন থাকতেন জার্মানিতে, ১৫ অগাস্ট তারা বেলজিয়ামে বেড়াতে গিয়েছিলেন।
আওয়ামী নেতা ও শেখ হাসিনার সহপাঠী নূহ-উল আলম লেনিন জানান, সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নৃশংস এই হত্যাযজ্ঞের বিষয়ে বিশ্ব নেতাদের জানাতে ভূমিকা রাখেন শেখ হাসিনা। এছাড়া বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিয়ে হত্যার বিচার দাবি করতেন শেখ রেহানা।
দলীয় নেতাদের মতে, শেখ রেহানা বড় বোন শেখ হাসিনাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছেন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় তিনি অনন্য ভূমিকা রাখেন। সেসময় শেখ হাসিনার মুক্তির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে এবং আন্তর্জাতিক মহলে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে শেখ রেহানা মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
শেখ হাসিনার কারাবাসের সময় শেখ রেহানা দলীয় নেতাদের শুধু সাহসই জোগাতেন না, সেসময় তিনি আন্দোলনের কর্মসূচি সম্পর্কেও দিকনির্দেশনা দিতেন।
এখনও সক্রিয় রাজনীতির সামনের সারিতে আসেননি শেখ রেহানা। তবে আওয়ামী লীগের প্রতিটি সংকটে বড় বোন শেখ হাসিনার পাশে থেকে সহযোগিতা করে গেছেন। দেশ ও জাতির কল্যাণে অনেকটা নেপথ্যে থেকেই ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা। রাজনীতি ও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও শেখ রেহানা সবসময় পেছনেই থেকেছেন বড় বোন শেখ হাসিনার ছায়াশক্তি হিসেবে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রেহানা শেখ হাসিনার সঙ্গে সেই সমাবেশে যোগ দিতে চেয়েছিলেন শেখ রেহানাও। তবে বড় বোন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা হাসিনা তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। নৃশংস হামলার ঘটনার পর বড় বোন ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলে সেদিনও ছায়াসঙ্গীর মতো পাশে ছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনী প্রচারণার শুরুর দিন টু্ঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে দুইবোন একসঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। জাতীয় বিশেষ উদযাপন বা অর্জনের বিশেষ মূহুর্তগুলোতে ছোট বোনও তাই বড় বোনের পাশে দেখতে থাকা যায়। আবার কখনো দুই বোন একসঙ্গে ছুটে যান টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে। আবার কখনো একসাথে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বা বনানী কবরস্থানে যান মা-ভাইসহ নিহত স্বজনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।
আওয়ামী লীগ নেতারাও কৃতজ্ঞতায় স্বীকার করেন, শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা হওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব। একইভাবে শেখ হাসিনার সফল রাষ্ট্রনায়ক হওয়ার পেছনেও শেখ রেহানার অনুরূপ ভূমিকা রাখছেন।
শেখ রেহানার স্বামী ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ও ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। তাঁদের বিয়ে হয়েছিল লন্ডনের কিলবার্নে বঙ্গবন্ধুর ফুফাতো ভাই মোমিনুল হক খোকার বাড়িতে, ১৯৭৭ সালের জুলাই মাসে। শেখ রেহানার তিন ছেলেমেয়ে। তাদের মধ্যে ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, বড় মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক এবং ছোট মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী। বড় মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির একজন সংসদ সদস্য। ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত এবং আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের ট্রাস্ট্রি। আর সবার ছোট আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী লন্ডনে ‘কন্ট্রোল রিস্কস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের গ্লোবাল রিস্ক অ্যানালাইসিস সম্পাদক।
সারাবাংলা/এনআর/রমু