সাংবাদিকদের আপসহীন লেখা সমাজকে পথ দেখায়: খায়রুজ্জামান লিটন
২০ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:০২ | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:৪২
ঢাকা: আধুনিক বিশ্বে লেখক সাংবাদিকরা রাষ্ট্রকে সঠিক পথ নির্দেশনা দিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।
মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিল (ডিএসইসি) আয়োজিত লেখক সম্মাননা অনুষ্ঠান-২০২২ এ তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে ৫০ জন লেখককে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। প্রত্যেককে নগদ পাঁচ হাজার টাকা, ক্রেস্ট, সনদ ও বিভিন্ন পুরস্কারসহ উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় পাঁচ শতাধিক লেখক ও সাংবাদিকের পদচারণায় মুখরিত ছিল অনুষ্ঠান স্থল।
ডিএসইসি লেখক সম্মাননার জুরি বোর্ডের দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. গিয়াস শামীম, কবি প্রাবন্ধিক-গবেষক মজিদ মাহমুদ, কথাসাহিত্যিক ড. হাসান অরিন্দম, কবি ও গবেষক আমিনুল ইসলাম, কথাসাহিত্যিক মনি হায়দার।
বিশেষ সম্মাননা প্রাপ্তরা হলেন—
কবিতা: অতনু তিয়াস, আলমগীর নিষাদ, সুরাইয়া ইসলাম। অন্যরা হলেন কবি পুলক হাসান, আব্দুর রহমান মল্লিক, মু আ কুদ্দুস, মোহসিন হোসাইন, চৌধুরী ফেরদৌস, দীপক ভৌমিক।
গল্প/উপন্যাসে: শান্তনু চৌধুরী, ইমন চৌধুরী, লাবণ্য লিপি, কামাল হোসেন টিপু, রনি রেজা। অন্যরা হলেন সাবিরা ইসলাম, আবুল হোসেন খোকন, তানভীর আলাদীন, হোসেন শহীদ মজনু, ইব্রাহীম খলিল জুয়েল, শামীম ফেরদৌস,সালাহ উদ্দিন মাহমুদ, মাহমুদুল হক জাহাঙ্গীর, সাইফ বরকতুল্লাহ।
ইতিহাস গবেষণায়: কাজী আলিম উজ জামান, দীপংকর গৌতম, মুস্তফা মনওয়ার সুজন, মোহাম্মদ নূরুল হক, অঞ্জন আচার্য। সম্মাননাপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন কায়কোবাদ মিলন, আহমেদ মতিউর রহমান, মুতাছিম বিল্লাহ, রীতা ভেীমিক, জাকির আবু জাফর, শরীফ আব্দুল গোফরান।
শিশুসাহিত্যে: আশিক মুস্তাফা, অদ্বৈত মারুত, মনসুর হেলাল। অন্যজন হলেন মামুন রশিদ।
অনুবাদ: প্রমিত হোসেন, সাহাদত হোসেন খান, মলয় পাঁড়ে।
ভ্রমণ/বিজ্ঞান: আসিফ, জাহাঙ্গীর সুর, সুমন ইসলাম, কাজী রফিক।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘অত্যন্ত উচ্চমানের এই অনুষ্ঠান আয়োজন করায় কৃতজ্ঞতা জানাই। ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিল প্রথমবারের মতো এই আয়োজন করেছে। অনেকেই বই জমা দিয়েছেন। যারা উদ্যোক্তা, এই বিষয়টি তাদের অত্যন্ত আশান্বিত করেছে। আমি আশা করি, এই সংখ্যা বাড়বে।’
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ’সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি সব। কোথায় কী হলো, কী হচ্ছে কিংবা কী হওয়া উচিত? অনেক সময় এমন শুনি, সাংবাদিকদের বলা হয়, আপনি এটি লিখবেন, ওটা লিখবেন না।। হুকুম দেওয়া হয়, এটি বলা যাবে, এটি বলা যাবে না। কিন্তু আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকবান্ধব। এখন বিদেশ থেকে এলেই সাংবাদিকদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে বসে কথা বলেন।’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতি করার কারণে আওয়াজ আমরা তুলতে পারি না। অকপটে আমি স্বীকার করি। সেই আওয়াজ আপনারা তুলবেন—এই আশা আমি করি। আমরা জানি আপনাদের অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হয়। এরপরও আপনাদের আপসহীন লেখা ও সংবাদ সমাজ এবং রাষ্ট্রকে পথ দেখায়।’
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন এবং যে কোনো সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখেন।’
আওয়ামী লীগের এই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আরও বলেন, ‘সাংবাদিক যে নির্যাতন হয় না এমন কথা বলা যাবে না। বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা অনেক আছে। এমনকি সাংবাদিকদের হত্যা করা হয়েছে, এমন ঘটনাও এদেশে আছে। এগুলোর কোনোটাই আমরা অস্বীকার করছি না। নানান সময় নানান সরকার এই কাজগুলো করেছে। তবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকবান্ধব।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৪ সালের বোমা হামলায় আমাদের খুলনার মানিক সাহা নিহত হয়েছিলেন। তিনিই তো সাংবাদিকতা জগতের দৃষ্টান্ত। সত্য প্রকাশের জন্য তিনি বাধা পেয়েও আপসহীন ভূমিকা পালন করেছিলেন। এমন ১৫-২০ জন সাংবাদিককে শুধু একটি সরকারের (বিএনপি) আমলেই জীবন দিতে হয়েছে।’
‘এত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সাংবাদিকরা যে আর্থিকভাবে ভালো আছেন, সেটাও জোর গলায় বলা যাবে না। আমরা যারা রাজনীতি করি নিঃসন্দেহে তাদের বেশিরভাগই সংবাদপত্রসহ টিভি-চ্যানেলগুলোর ওপর ভরসার সঙ্গে নির্ভর করি। আমরা সাংবাদিকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার চেষ্টা করি’ বলেন এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নগরপিতা বলেন, ‘আধুনিক, সভ্য এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যে কয়টি কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে থাকে তার মধ্যে সাংবাদিকতা একটি। এই সংবাদপত্রের মাধ্যমেই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের খবর আমরা জানতে পারি। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো একটি বিষয়ে সাংবাদিক লিখতে চেয়েছেন, কিন্তু তার অফিস তা নিষেধ করেছে। বিশেষ করে যখন বিশেষ জায়গা থেকে এসব বিষয় সংগ্রহ করা হয়, তখন বলে দেওয়া হয় যে, এতটুকু লেখা যাবে, আর এতটুকু দেখানো যাবে।’
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর বলেন, ‘যারা সাংবাদিকতা করতে আসেন, তারা মনে করেন তারা সাংবাদিক হয়ে সমাজ-দেশের জন্য কাজ করবে। শোষিত-নিপীড়িতদের কণ্ঠস্বর হবে। আসলে কি তাদের স্বাধীনতা আছে? পরাধীনতার বেদনা তাদের আছে।’
কথাসাহিত্যিক হাসান অরিন্দম বলেন, ‘সাংবাদিকতা পেশার প্রতি আলাদা ভালোবাসা আছে আমার। আমি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষার্থী ছিলাম। সাংবাদিক হতে চেয়েছিলাম। সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্যবশত ব্যাটে-বলে মেলেনি। তবে সাংবাদিকদের প্রতি মানুষের যেমন ভালোবাসা-বিশ্বাস আছে।’
তিনি বলেন, ‘এই আয়োজন আমাকে আশান্বিত করেছে। সাব-এডিটরদের মধ্যে এত প্রতিষ্ঠিত ও গুণী লেখক আছেন, তা আমাকে আশান্বিত করেছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক।’
লেখক সম্মাননা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হৃদয় ও কোষাধ্যক্ষ কবীর আলমগীর, সভাপতিত্ব করেন মামুন ফরাজী।
ডিএসইসি লেখক সম্মাননা-২০২২ এর আহ্বায়ক কবীর আলমগীর বলেন, ‘সংগঠনের দায়িত্ব নেওয়ার অর্থ হলো কাজ করা। সে ব্যাপারে আমি সবসময়ই আন্তরিক। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনের দুই যুগ পেরিয়েছে। তবে এবারই প্রথম এমন আয়োজন। যারা বই জমা দিয়েছেন, তাদের ধন্যবাদ। জুরি বোর্ডের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তারা খুব আন্তরিকভাবে কাজ করেছেন। সাধুবাদ জানিয়েছেন। এমন আয়োজন বারবার হোক—এমন আশা রাখি।’
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সভাপতি মামুন ফরাজি বলেন, ‘সাংবাদিক হলেই লেখক হওয়া যায় না। আমরা কিছু তথ্যসহ কাজ করি।লেখক হলো তারাই যারা নিজস্ব চিন্তা দিয়ে, ভাবনা দিয়ে দেশের জনগণকে প্রভাবিত করতে পারে। আজকের এই সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে যারা বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন, সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’
অনুষ্ঠানে কবিতা ক্যাটাগরিতে ২০ জন, ইতিহাস ও গবেষণায় ২১ জন, গল্প-উপন্যাস ক্যাটাগরিতে ৩০ জন, অনুবাদ ক্যাটাগরিতে ৪ জন, শিশু সাহিত্য ক্যাটাগরিতে ১২ জন, ভ্রমণ-বিজ্ঞান ক্যাটাগরিতে ৮ জন লেখককে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমীন, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি শাহ মোহাম্মদ মোতাসিম বিল্লাহ, কে এম শহীদুল হকসহ অনেকে।
সারাবাংলা/একে