Wednesday 01 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কাতারে বাংলাদেশকে তুলে ধরছে বিএফকিউ

সারাবাংলা ডেস্ক
২০ নভেম্বর ২০২২ ২০:১২

ঢাকা: মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী দেশগুলোর মধ্যে কাতার অন্যতম। তেল সমৃদ্ধ এ দেশটিতে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করছে এবং দেশের অর্থনীতিতে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় পারস্পরিক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব থাকা সত্ত্বেও কাতারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সংকট রয়েছে। তবে এসব সংকটগুলো মোকাবিলায় তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না।

এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ ফোরাম কাতার (বিএফকিউ)। কাতারে বাংলাদেশি সংস্কৃতি তুলে ধরা, দেশটির সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কের উন্নয়ন ও সর্বোপরি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নত করতে ২০১৮ সালে কাজ করে যাচ্ছে এই সংগঠনটি। সদস্যদের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটির মূল কাজ হলো- বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও কাতারের সম্পর্কের জোরদার করা।

বিজ্ঞাপন

(বিএফকিউ) কাতার ফাইন্যান্সিয়াল সেন্টারের (কিউএফসি) অধীনে নিবন্ধিত ও আইনি বৈধতা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত একমাত্র বাংলাদেশি সংস্থা। এই সংস্থার সদস্যরা কাতারের বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায় সম্পৃক্ত থাকায় কাতারে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে তাদের সুস্পষ্ট ধারণা আছে ও তারা সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ ও কাতারের সম্পর্ক গতিশীল করতে অবদান রাখতে পারছেন।

কাতারে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর তুলনায় উদ্যোক্তার সংখ্যা বেশ কম। বাংলাদেশিরা সেখানে এসএমই, নির্মাণ শিল্পে মার্বেল ব্যবসা, বড় বড় প্রকল্পে লাইটিং, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, এসি ও রিয়েল এস্টেট ইত্যাদি ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। ব্যবসায় কাতারের সম্ভাবনা বিবেচনায় বাংলাদেশিরা এখানে আরো ভালো অবস্থানে থাকার কথা ছিল। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হয়নি। অনেকেই মনে করেন ব্যবসার জন্য কাতার বেশ ছোট একটি বাজার। তবে মূল বিষয়টা হচ্ছে— এই বাজারে মানসম্পন্ন পণ্যের চাহিদা আছে।

বিজ্ঞাপন

একইসঙ্গে কাতারকে বলা যায় ‘বিজনেস হাব’। কাতারে নিজস্ব পণ্যটি এনে তা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলো। মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকায় নতুন বাজার সম্প্রসারণের জন্য কাতারের বৈশ্বিক সংযোগ এবং বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের আরএমজি খাতের। বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রিকে সহায়তা করতে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারে বিএফকিউ।

কোনো মেগা ইভেন্ট আয়োজনের জন্য কাতারের সঙ্গে অংশীদারিত্ব তৈরি করা জরুরি। যাতে তারা বাংলাদেশের জন্য বিশেষ বিশেষ সুবিধা সমূহ প্রদান করে। গার্মেন্টস বা অন্য কোনো পণ্যের ইভেন্টে সাড়া ফেলতে পারলে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশি পণ্যে আগ্রহী হবে। কাতার একদম মাঝে অবস্থান করায় কৌশলগতভাবে কাতারকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়িক পরিধি বাড়ানো বেশ গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।

কাতার মার্কেট হলো মান-সচেতন ভোক্তা বাজার এবং বাংলাদেশকে এক্ষেত্রে অন্যান্য বৈশ্বিক সরবরাহকারিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে। বিভিন্ন পণ্য যেমন আম, ফল, বেকারি, মিষ্টি এবং খাদ্য সামগ্রীর ক্ষেত্রে ভৌগোলিকভাবে গুণমানে ভালো বাংলাদেশ। যার ফলে কাতারের বাজার ধরা সহজ হতে পারে বাংলাদেশের জন্য। বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রয়োজন উন্নত মানের প্যাকেজিং।

এ ছাড়া, ব্যবসার দ্রুত বিস্তৃতির জন্য কাতারের কোনো সম্ভাবনাময় কোম্পানির সঙ্গে পার্টনারশিপ তৈরি করা যেতে পারে। তাহলে বিনিয়োগের অর্থ সংগ্রহ বা ফান্ড রাইজ করা সহজ হবে। তারপর লক্ষ্য থাকতে হবে কাতার ও জিসিসি দেশগুলোতে ব্যবসা বৃদ্ধি করা।

বাংলাদেশের আইসিটি ও ফিনট্যাক বিনিয়োগের সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশের স্টার্টাপ শপ আপের একটি বিনিয়োগ কাতারে আছে। দুই দেশে আইসিটি ক্ষেত্রে ব্যবসার পরিসর বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করতে পারবে বিএফকিউ।

বসবাসের জন্য কাতার পৃথিবীর অন্যতম সেরা জায়গা। এখানে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বিশেষজ্ঞরা এসে বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করেন। তাই কাতারে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা পূর্বেও ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। ফিফা বিশ্বকাপের এখানে সার্ভিস সেক্টরে কাজের সুবিধা বাড়বে। ইংরেজি জানা ও ভালো কমিউনিকেশন স্কিল রয়েছে এমন কর্মীরা কাজের আরও ভালো সুযোগ পাবেন। কাতারে বসবাসরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরাও এই মেগা ইভেন্ট থেকে লাভবান হবেন।

বাংলাদেশ ফোরাম কাতার (বিএফকিউ) একটি ইউনিক ধারণার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। কাতারে বাংলাদেশকে ভিন্নভাবে তুলে ধরতে ফোরামের সদস্যরা নিজেদের ফান্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করে যাচ্ছেন। সামনের বছরের শুরুতেই এসইসি ও বিডার সঙ্গে মেগা ইনভেস্টমেন্ট ইভেন্ট করার প্রত্যাশা করছে সংগঠনটি। ইভেন্টটি কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে।

এ ছাড়া বাংলাদেশের সংস্কৃতির বিকাশেও কাজ করছে (বিএফকিউ)। কাতারে সর্বপ্রথম কোনও সিনেমা হিসেবে ‘আয়নাবাজি’ দেখানোরও উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটি। কাতারের কালচারাল ভিলেজ কাতারাতে প্রয়াত কালিদাস কর্মকারের একক শিল্প প্রদর্শনী ও লাইভ পেইন্টিংয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। যা পরবর্তীতে শিল্পবোদ্ধাদের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফোরাম কাতার (বিএফকিউ) এর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের ইমেজ সংকট রয়েছে এবং আমাদের প্রবাসীরা এ কারণে ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। কিন্তু এ সমস্যা সমাধানে তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। মধ্যপ্রাচ্যে দেশীয় ব্যবসার পরিধি বাড়াতে ও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা বাংলাদেশ ফোরাম কাতার (বিএফকিউ) গড়ে তুলেছি। কাতার ফাইন্যান্সিয়াল সেন্টারের (কিউএফসি) অধীনে করা এই ফোরাম প্রবাসে, বিশেষ করে কাতারে বাংলাদেশের শক্ত ভিত গড়তে অবদান রাখছে। কাতারে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের সব রকম সহযোগিতা ও দেশের সংস্কৃতিকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরা এ ফোরামের লক্ষ্য।’

এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে শিগগিরই বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিটা) কাতারে বড় পরিসরে বিনিয়োগ সেমিনার আয়োজন করতে যাচ্ছে বিএফকিউ, যেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের বিনিয়োগ প্রস্তাব এবং কাতারে বাংলাদেশের ব্যবসার সুযোগ অনুসন্ধানে সহযোগিতা করবে সংগঠনটি।

সারাবাংলা/একে

কাতার বাংলাদেশ বিএফকিউ

বিজ্ঞাপন

ফিরে দেখা ২০২৪ / ছবিতে বছর ভ্রমণ
১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৪৫

আরো

সম্পর্কিত খবর