সাকা বাড়ির ফটকের ‘রাজাকার বাড়ি’ ফের মুছে দেওয়া হলো
১৭ নভেম্বর ২০২২ ২২:৪৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো : যুদ্ধাপরাধী বাবা-ছেলে ফজলুল কাদের চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর চট্টগ্রাম শহরের বাড়ির মূল ফটকে লেখা ‘রাজাকারের বাড়ি’ এবং একাত্তরের ‘টর্চার ক্যাম্প’ গুডস হিলের দেয়ালে লেখা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর নির্যাতন কেন্দ্র’ আবারও মুছে দেওয়া হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এই লেখা নিয়ে দুবার একই ঘটনা ঘটল।
বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা বলেছেন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি হওয়া সাকা চৌধুরীকে ‘শহিদ’ উল্লেখ করে তার ছেলে বিএনপি নেতা হুম্মাম কাদের চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিবাদে প্রথমবার গত ২৯ অক্টোবর সাকা চৌধুরীর বাড়ি ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় ‘রাজাকারের বাড়ি’ লিখে ‘রাজাকার হিল’ ব্যানার টানানো হয়েছিল। কিন্তু কর্মসূচি শেষ করার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ব্যানারটি নামিয়ে ফেলা হয় ও লেখা মুছে ফেলা হয়।
এরপর বুধবার (১৬ নভেম্বর) মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সদস্যরা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে সঙ্গে নিয়ে আবারও নগরীর জামালখানে ‘গুডস হিলের’ সামনে যান। সেখানে মূল প্রবেশপথ অবরুদ্ধ করে সমাবেশ করেন তারা। সমাবেশ চলাকালে আবারও লাল রঙে সেই লেখার পাশাপাশি ফটকে এঁকে দেওয়া হয় নিষিদ্ধ ক্রসচিহ্ন।
কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে মূল ফটকে এবং দেওয়ালে সেই লেখাগুলো আর দেখা যায়নি বলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের নেতারা জানিয়েছেন। তারা আরও জানান, সাদা রঙ দিয়ে মূল ফটকের ‘রাজাকার বাড়ি’ লেখাটি পুরোপুরি মুছে ফেলা হয়েছে। দেয়ালের লেখাটির ওপর সাদা রঙ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার গভীর রাতে যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির ভাবাদর্শের দোসররা এ কাজ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দুইবার লিখেছি। দুইবারই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দোসররা লেখাগুলো মুছে দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে রাজাকার-আলবদরদের দোসররা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। আমরা ঘোষণা দিয়েছি, যতবার তারা লেখা মুছবে ততবার আমরা গিয়ে লিখে দেব। প্রজন্মকে জানাতে হবে- এই বাড়ি একাত্তরে ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীর বাড়ি। বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাব।’
১৯৭১ সালে তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতা যুদ্ধাপরাধী ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরীর নির্দেশে তার বাড়ি ‘গুডস হিলকে’ টর্চার ক্যাম্প বানিয়েছিল পাকিস্তানি সেনারা, যাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন ফকাপুত্র সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ রাজাকার-আলবদররা। বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং নিরস্ত্র বাঙালিদের ধরে ওই টর্চার ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হতো বলে সাকা চৌধুরীর মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় কয়েকজন সাক্ষীর সাক্ষ্যে উঠে এসেছে।
গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী। বক্তব্যে তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘ক্ষমতা ছাড়ার পর একা বাড়ি ফিরতে পারবেন না। সকল শহিদদের কবরে গিয়ে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হবে।’ তিনি ‘নারায়ে তাকবীর’ স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন, যে স্লোগান বিএনপি দলীয়ভাবে ব্যবহার করে না।
এর প্রতিবাদে গত একমাস ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড।
সারাবাংলা/আরডি/একে