এএসপি আনিস হত্যা: দুই বছরেও শুরু হয়নি বিচার
৯ নভেম্বর ২০২২ ১২:৩০
ঢাকা: ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর দুপুরে আনিসুল করিমকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। ভর্তির কিছুক্ষণ পর ওই হাসপাতালের কর্মচারীদের ধস্তাধস্তি ও মারধরে আনিসুল করিমের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা ফাইজুদ্দীন আহম্মেদ বাদী হয়ে আদাবর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের দুই বছর পার হলেও এখনো শুরু হয়নি বিচার।
বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই। চলতি মাসের ২ নভেম্বর মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন পিবিআই প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি। এজন্য ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলমের আদালত আগামী ৩০ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।
এর আগে, গত ৮ মার্চ এ মামলায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার আবদুল্লাহ আল মামুনসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. ফারুক মোল্লা।
কিন্তু এই মামলার এজাহারে ডা. নুসরাতকে আসামি করা হয়নি। কিন্তু মামলা দায়েরের পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন তিনি। তবে চার্জশিটে তার নাম আসেনি। এজন্য মামলাটি পুনরায় তদন্তের আবেদন করেন আনিসের বাবা ফাইজুদ্দীন আহম্মেদ। পরে আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেন।
এ বিষয়ে আনিসুল করিমের স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, ‘গত ২ বছর আগে আনিসুলকে হত্যা করা হয়। বিচার এখনো শুরুই হয়নি। এখনো তদন্ত চলছে। আমার স্বামী তো আইনের লোক ছিলেন। কিন্তু এখনো তার বিচার হলো না। তবে আমারা এখন যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আনিস বেঁচে থাকা অবস্থায় চাকরি করিনি। এখন চাকরি করতে হচ্ছে। আনিস নভেম্বরে মারা যায়। আমি এপ্রিলে চাকরিতে যোগ দেই। পুলিশের সহযোগিতায় পুলিশ কমিউনিটি ব্যাংকে চাকরিটা পেয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাচ্চাকে বাসায় রেখে অফিসে যাই। আমার বাবা-মায়ের কাছে সাফরান থাকে। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে বাবার ছবি দেখে সাফরান। ছবি ছাড়া ঘুমায় না সে। ও জানে ওর বাবা আর আসবে না। তারপরও বাবাকে নিয়ে নানান রকম আবদার করে। আবার নিজেই বলে, বাবাকে তো আল্লাহ নিয়ে গেছে। সাফরান এখন স্কুলে যায়। স্কুলে যখন ওর বন্ধুরা বাবাকে নিয়ে কথা বলে তখন ওর খুব খারাপ লাগে। আমি তো চাকরি নিয়ে ব্যস্ত থাকি সময় চলে যায়। কিন্তু সাফরান তো ফ্রি থাকে, এজন্য বার বার বাবার কথা মনে করে।’
আনিসুল হকের বাবা ফাইজুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলছে। চার ভাই-বোনের মধ্য সে (আনিসুল) ছিল সবার ছোট। সবার আদরের। ছেলেটা আমার মেধাবী ছিল। ওকে নিয়ে অনেক আশা ছিল। তা আর পূরণ হলো না। যারা তাকে হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই।’
মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন— জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার আবদুল্লাহ আল মামুন, মাইন্ড এইড হাসপাতালের পরিচালক আরিফ মাহামুদ, ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান, কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন, সাজ্জাদ আমিন ও ফাতেমা খাতুন, হাসপাতালের সমন্বয়ক রেদোয়ান সাব্বির, হাসপাতালের কর্মচারী মাসুদ খান, জোবায়ের হোসেন, তানিফ মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম কুমার পাল, লিটন আহম্মেদ, সাইফুল ইসলাম ও আবদুল্লাহ আল মামুন। মাইন্ড এইড হাসপাতালের পরিচালক নিয়াজ মোর্শেদ মারা যাওয়ায় মামলা থেকে তাকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়।
মামলার চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, মধ্যযুগীয় কায়দায় এএসপি আনিসুল করিমকে আঘাত করা হয়েছিল। মাইন্ড এইড হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় অপেশাদার লোকদের দিয়ে আনিসুলের দুই হাত পিঠ মোড়া দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। এরপর আসামিরা ঘাড়ে, বুকে, মাথায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, পারিবারিক ঝামেলার কারণে আনিসুল মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। পরিবারের সবার মতামত অনুযায়ী ছেলেকে চিকিৎসা করানোর জন্য ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর প্রথমে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আনিসুল করিমকে ভর্তি করার সময় অস্বাভাবিক আচরণ করেন। বেলা পৌনে ১২টার দিকে আরিফ মাহমুদ জয় আনিসুলকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে হাসপাতালের দোতলায় নিয়ে যায়। চিকিৎসার নামে দোতলার একটি ‘অবজারভেশন রুমে’ (বিশেষভাবে তৈরি করা কক্ষ) নিয়ে যাওয়া হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, আসামিরা চিকিৎসা করার অজুহাতে অবজারভেশন রুমে মারতে মারতে ঢুকায়। ভিকটিমকে ওই রুমের ফ্লোরে জোরপূর্বক উপুড় করে শুইয়ে তিন-চারজন হাঁটু দ্বারা পিঠের ওপর চেপে বসে। কয়েকজন ভিকটিমের পিঠ মোড়া করে ওড়না দিয়ে দুই হাত বাঁধে। আসামিদের কনুই দিয়ে আনিসুল করিমের ঘাড়ের পিছনে ও মাথায় আঘাত করে। আসামিরা সবাই মিলে পিঠ-ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি কিল-ঘুষি মেরে আঘাত করে। এরপর বেলা ১২টার দিকে নিস্তেজ হয়ে পড়েন, যা হাসপাতালের সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজে দৃশ্যমান বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। হাসপাতালটিতে ভর্তির কিছুক্ষণ পরই কর্মচারীদের ধাস্তাধস্তি ও মারধরে তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন তার পরিবার।
আনিসুল করিম ৩১তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের একজন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সারাবাংলা/এআই/এনএস