সিনেমা শিল্প ঘুরে দাঁড়িয়েছে: তথ্যমন্ত্রী
৫ নভেম্বর ২০২২ ১৬:৫৮ | আপডেট: ৫ নভেম্বর ২০২২ ১৭:৩৭
ঢাকা: বাংলাদেশের সিনেমা শিল্প এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
শনিবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির (বাচসাস) অভিষেক অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে গুণীজনদের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধসহ নানা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য সম্মাননা পুরস্কার-২০২২ দেওয়া হয়।
মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, আপনারা জানেন, আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। এখন সেই সংকট কেটে গেছে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া ২০০ সিনেমা হল এখন নতুন করে চালু হয়েছে। নতুন সিনেপ্লেক্স তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী নতুন সিনেমা হল নির্মাণের জন্য পুরনো সিনেমা হলের আধুনিকায়ন এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হল চালুর জন্য এক হাজার কোটি টাকার সহজ শর্তে ঋণ তহবিল চালু করেছেন। এটি ঢাকায় সাড়ে সাত শতাংশ এবং ঢাকার বাইরে আট শতাংশ হারে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দেশে যত বেশি সিনেমা হল হবে দেশের সিনেমা শিল্প তত বেশি সমৃদ্ধ হবে। নির্মল বিনোদনের জন্য আমাদের সিনেমা হলের সংখ্যা বাড়লে যুবকরা যে নানাপথে বিপৎগামী হচ্ছে, সারাদেশে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে, তা থেকে যুবকদের বিরত রাখা যাবে। আমাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমি যাত্রা শুরু করেছি। সিনেমা শিল্পকে ঘুরিয়ে দাড় করানোর একটা বড় চ্যালেঞ্জ আমার সামনে ছিল। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গিয়ে আবার আমাদের নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। সেটি হচ্ছে ২০২০ সালের শুরু থেকে শুরু হয়েছে করোনা মহামারি। দুই বছর করোনা মহামারি চলল। এর মধ্যেও সিনেমা শিল্প ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি সত্যিই আশাবাদী, আমাদের সিনেমা শুধু বাংলাদেশের গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, তা বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্ব সিনেমা অঙ্গণে আরও ভালো জায়গা করে নেবে। সিনেমা এখন যে ভালো জায়গা করে নেয়নি তা কিন্তু না, আরও ভালো জায়গা করে নেবে সেটি আমার প্রত্যাশা।
মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তিনি একজন সংস্কৃতিমনা মানুষ, ক’দিন আগে আমি তাকে যখন বললাম, বন্ধ হয়ে যাওয়া ২০০ সিনেমা হল আবার চালু হয়েছে। তা শুনে তিনি প্রচন্ডভাবে উৎসাহী হন। তিনি আমাকে বলেছেন, সবাইকে বল আরও সিনেমা হল নির্মাণ যেন করে।
সিনেপ্লেক্স নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি মনে করি এখানে উপস্থিত অনেক ব্যবসায়ী আছেন যারা সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করতে পারেন। সিনেপ্লেক্স যদি ব্যবসা সফল না হতো তাহলে স্টার সিনেপ্লেক্স একটার জায়গায় ছয়টা হত না। সিনেপ্লেক্স ব্যবসা সফল হয়েছে। আমি আপনাদের বলব ব্যবসা শুধুমাত্র নিজের অর্থ উপার্জনের জন্য নয়, আমাদের প্রত্যেকেরই সামাজিক দায়িত্ব আছে। সংস্কৃতি থেকে শুরু করে জনগণের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করলে নিজের জন্য ব্যবসা যেমন হয় তেমনি সামাজিক দায়বদ্ধতাও পূরণ হয়।
অনুষ্ঠানে কথা সাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন ও সৈয়দ সামসুল হককে মরণোত্তর বাচসাস গুণীজন সম্মাননা পুরস্কার-২০২২ দেওয়া হয়। রাবেয়া খাতুনের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন সাংবাদিক রেজানুর রহমান। সৈয়দ সামসুল হকের পক্ষে তার ছেলে দ্বিতীয় সৈয়দ হক সম্মাননা পুরস্কার গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে কথা সাহিত্যিক আনিসুল হককেও সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়া গীতিকবি গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে মরণোত্তর পুরস্কার প্রদান করা হয়। তার পক্ষে মেয়ে দিঠি আনোয়ার পুরস্কার গ্রহণ করেন।
এ ছাড়া সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, একুশে পদক প্রাপ্ত ফটো সাংবাদিক পাভেল রহমান, সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ইলিয়াস কাঞ্চন, গীতিকবি আলাউদ্দিন আলী (মরণোত্তর), সঙ্গীত শিল্পী কোনাল, শিল্পী ইমরানকেও সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়াও সম্মাননাপ্রাপ্ত আরও কয়েকজন গুণীজন অনুপস্থিত থাকায় তাদের পুরষ্কার পরবর্তীতে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে অনুষ্ঠান থেকে জানানো হয়।
বাচসাসের অভিষেক অনুষ্ঠানে সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি রাজু আলীমের সভাপতিত্বে বক্তৃতা রাখেন সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) লিয়াকত আলী লাকী, চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান, চিত্রনায়িক ওমর সানি, সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু, মোল্লা জালাল, বাচসাসের সাধারণ সম্পাদক রিমন মাহফুজ প্রমুখ।
সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ