Friday 10 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রঙতুলিতে শতবর্ষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রাহাতুল ইসলাম রাফি, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
২৮ অক্টোবর ২০২২ ২৩:২১

ঢাকা: বাংলা কারু ও চারুশিল্পী সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে মিছিল হচ্ছে। মিছিলের অগ্রভাগে লেখা আছে ‘স্বাধীনতা’। নেতৃত্ব দিচ্ছেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন—শিল্পী সামছুল আলম আজাদের এমন একটি চিত্রকর্ম শোভা পাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী আর্ট গ্যালারিতে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে নির্মিত এই স্থায়ী আর্ট গ্যালারিতে আছে এমন একশত ছবি। সবকটি ছবিই এঁকেছেন একশজন শিল্পী, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন সংলগ্ন অ্যালামনাই ফ্লোরে স্থায়ী আর্ট গ্যালারিটির উদ্বোধন করা হয়। গ্যালারি উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।

ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, ছয়দফা, বিভিন্ন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা—এ সমস্ত কিছুই ছিল আর্ট গ্যালারিতে স্থান পাওয়া চিত্রকর্মগুলোর উপজীব্য।

গ্যালারির এক পাশে নির্মিতব্য কলাভবনের একটি চিত্রকর্মের দেখা মেলে। ‘রূঢ় বাস্তবতা’ নামের এই চিত্রকর্মটি একেঁছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রয়িং অ্যান্ড পেন্টিং বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শিল্পী মতলুব আলী। চিত্রকর্মের ধারণা অংশে শিল্পী বলেছেন— ‘ক্যাম্পাসে শ্রমিকেরা গড়ে তোলে নতুন ইমারত, অথচ তারা শিক্ষার আলো পায় না- ভবন সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর সেখানে প্রবেশাধিকারও তারা পাবে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের আনন্দ ও সংগ্রামের ঐতিহ্যকে তুলে ধরে একটি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে গ্যালারিতে। শিল্পী আজমল হোসেনের আঁকা ওই চিত্রকর্মে দেখা যায়—বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবর্তনের গাউন পরা একদল শিক্ষার্থী আকাশের দিকে টুপি ছুড়ে আনন্দে মেতেছেন। পেছনে থাকা রাজুভাস্কর্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রামের ঐতিহ্য নির্দেশ করে, আর সামনে থাকা শিক্ষার্থীদের মাঝে সমাবর্তনের আনন্দ।

বিজ্ঞাপন

আর্ট গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণী শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে করা বেশ কয়েকটি চিত্রকর্ম।

১৯২০ এর দশকে তাত্ত্বিক পদার্থ বিদ্যায় মৌলিক অবদান রাখা সত্যেন বোসের একটি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে গ্যালারিতে। চিত্রকর্মটি এঁকেছেন শিল্পী সুমন ওয়াহিদ। এ ছাড়া নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী, রবীন্দ্রনাথসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্নজনকে নিয়ে আঁকা একাধিক চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে গ্যালারিতে।

এদিকে আর্ট গ্যালারি দেখতে উদ্বোধনের দিনেই উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আর্ট গ্যালারি দেখতে আসা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান রুহান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সময়ের ইতিহাস শিল্পীর ক্যানভাসে দেখতে পাওয়া আনন্দের ও গর্বের একটি বিষয়। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে’

আর্ট গ্যালারি ঘুরে দেখতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আব্দুর রহিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি খুব গর্বিত ও আনন্দিত। আজকে উদ্বোধন হওয়া আর্ট গ্যালারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরার একটি প্রচেষ্টা। একটি জাতিরাষ্ট্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শতবর্ষী এই বিশ্ববিদ্যালয় নানান সময় নানান প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছে। সেইসব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে কীভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার লক্ষ্যে পৌঁছুতে পেরেছে, তা এই চিত্রকর্মগুলোর মাঝে ফুটে উঠেছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব রঞ্জন কর্মকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘একশ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস, বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ গঠনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা, স্বাধীনতা সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা—এ সমস্ত কিছু আমরা তুলে ধরেছি শিল্পীর রংতুলিতে। একশজন শিল্পি তাদের জানা, দেখা, বোঝা ও চিন্তার উপর ভিত্তি করে এগুলো এঁকেছেন। এগুলোর মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একশত বছর স্বল্প পরিসরে সবার সামনে তুলে ধরা হয়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার-উর আলম চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়—এই দুটি বিষয়কে আলাদা করার পথ নেই। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। ১০০ জন শিল্পী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে বিভিন্ন সময়কে তুলে ধরেছেন তাদের চিত্রকলার মাধ্যমে। সেই চিত্রকলাগুলোর মাধ্যমে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বিভিন্ন সময়ের চিত্র এখানে তুলে ধরা হয়েছে এবং এটাকে স্থায়ী আর্ট গ্যালারি হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে’

ভবিষ্যতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা এই আর্ট গ্যালারির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের অহংকারের জায়গাটা দেখতে পাবে বলে মনে করেন আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘এমন একটি কাজ করতে পেরে শিল্পীরাও আনন্দিত এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা আনন্দিত ও গর্বিত। এটি শুধু বর্তমান প্রজন্মের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তারা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের অহংকারের জায়গাটা তারা এখানে দেখতে পাবে। তারা আরও সমৃদ্ধ হবে এবং দায়িত্ববান হবে।’

সারাবাংলা/আরআইআর/একে

টপ নিউজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রঙতুলি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর