রিজার্ভের টাকা চিবিয়ে খাননি, গিলে ফেলেছেন— প্রধানমন্ত্রীকে ফখরুল
২৭ অক্টোবর ২০২২ ১৮:৫২ | আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২২ ১৯:২১
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রিজার্ভের টাকা চিবিয়ে খাননি, গিলে ফেলেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। যুবদলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ যুব সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
এর আগে, পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়নাধীন ‘পায়রা বন্দরের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন’ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘রিজার্ভের টাকা কেউ চিবিয়ে খাচ্ছে না। জনগণের প্রয়োজনে ব্যয় করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজ প্রধানমন্ত্রী পায়রাবন্দর উদ্বোধনে একটা অনুষ্ঠান করেছেন ভার্চুয়ালি। এই পায়রা বন্দরের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন- আমাদের বিরোধীরা অর্থাৎ বিএনপি বলে যে, রিজার্ভের টাকা কোথায় গেল? অবশ্যই আমরা জিজ্ঞেস করতে চাই যে, রিজার্ভের টাকা কোথায় গেল? তিনি উত্তর দিয়েছেন, রিজার্ভের টাকা চিবিয়ে খাওয়া হচ্ছে না।’
‘চিবিয়ে তো খান নাই, গিলে ফেলেছেন। তিনি বলেছেন, পায়রা বন্দরে খরচ করা হয়েছে। পায়রা বন্দরে খরচ করার জন্য রিজার্ভের টাকা না। রিজার্ভের টাকা হচ্ছে, দেশের জন্য যে আমদানি, সেই আমদানির অর্থ ডলার দিয়ে পরিশোধ করবেন। রিজার্ভের টাকা হচ্ছে, দেশে যখন অর্থনৈতিক ক্রাইসিস সৃষ্টি হবে, তখন সেই অর্থনৈতিক ক্রাইসিস ট্যাকেল দেবেন’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘অর্থনীতিবদরা বলছেন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পায়রাবন্দর কার্যকর হতে পারে না। কারণ, যে নাব্যতা দরকার, জাহাজ ভেতরে আসার জন্য যে পানির গভীরতা দরকার, সেই গভীরতা এখানে নাই। কী করেছেন? সুপার ড্রেজার লাগিয়েছেন। আরও সাড়ে ছয় হাজার টাকা (সাড়ে ৬ হাজার কোটি) খরচ করে সুপার ড্রেজার লাগিয়েছেন।’
‘বিএনপি তিনটা সমাবেশ করে মনে করছে তারা ক্ষমতায় চলে যাচ্ছে’– আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা কোনো অবস্থাতেই ক্ষমতায় চলে যাব বলে মনে করছি না। বরং আমরা মনে করছি যে, আমাদের তিনটা সমাবেশ আপনাদের মনে এতো কম্পন সৃষ্টি করেছে যে, এখন আপনারা আমাদের সমাবেশ বন্ধ করার জন্য বাস–পরিবহন বন্ধ করে দিচ্ছেন। লজ্জা করে না আপনাদের। কী কা–পুরুষ আপনারা! আমাদের সমাবেশ বন্ধ করার জন্য আপনাদের পেটোয়া ইউনিয়নকে দিয়ে ধর্মঘট ডাকাচ্ছেন।’
‘চট্টগ্রামে ধর্মঘট দিয়েছেন, ময়মনসিংহে ধর্মঘট দিয়েছেন, খুলনায় ধর্মঘট দিয়েছেন। কিন্তু এই ধর্মঘট কি গণতন্ত্রকামী মানুষকে আটকে রাখতে পেরেছে? তারা হেঁটে, পায়ে হেঁটে তাদের যে দাবি, সেই দাবি জানাতে তারা সমাবেশে উপস্থিত হয়েছে’– বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
পরিবহন শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা বরাবরই জনগণের সেবা করেন। আপনারা বরারই জনগণের সঙ্গে ছিলেন। আজকে আপনার চাউলের দাম ১০ টাকা থেকে ৯০ টাকা হয়েছে। ডালের দাম বেড়েছে। ডিমের দাম ১৩৫ টাকা হয়েছে। আপনার বাচ্চাকে আপনি একটা ডিম পর্যন্ত দিতে পারেন না। সুতরাং এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য এই কাজ (ধর্মঘট) করবেন না। আপনারা জনগণের সঙ্গে থাকুন। যখন আপনারা ধর্মঘট ডাকেন, তখন যাদের অসুখ হয়, অসুস্থ হয়, তারা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে হাসপাতালে যেতে পারে না।’
যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোমেন মুন্নার সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
সংগঠনটির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী, সমর্থক ব্যানার, ফেস্টুন, টি শার্ট, ক্যাপ, হেডার, পতাকা হাতে সমাবেশে যোগ দেন। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই নয়াপল্টন এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। হাজার হাজার নেতাকর্মী সমর্থকের স্লোগানে স্লোগে মুখরিত হয় সমাবেশস্থল।
পূর্বে ফকিরেরপুল মোড় থেকে পশ্চিমে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত রাস্তা যুবদলের নেতাকর্মীরা দখল করে নেয়। প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা এ সড়কে যানচলাচল বন্ধ থাকে। ফলে আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম