বিএম ডিপোতে পোশাকবাহী রফতানি কনটেইনার ওঠানামা শুরু

চট্টগ্রাম ব্যুরো : ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশত মৃত্যুর পর নতুন অবকাঠামো দিয়ে চলমান সংস্কারের মধ্যেই তৈরি পোশাকবাহী রফতানি কনটেইনার ব্যবস্থাপনার অনুমতি পেয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষ। ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত নয়টি শর্ত দিয়ে তিন মাসের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে এ অনুমতি দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

অনুমতি পাওয়ার পর বুধবার (২৬ অক্টোবর) সকাল থেকে রফতানি পোশাকবাহী কনটেইনার ওঠানামার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএম কনটেইনার ডিপোর পরিচালক মুজিবুর রহমান।

গত ৪ জুন দিবাগত রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। এরপর সেখানে কয়েক দফা বিস্ফোরণ ঘটে। ডিপোতে থাকা রাসায়নিকের কারণে ছড়িয়ে পড়া ওই আগুন ৮৬ ঘণ্টা পর বিভিন্ন বাহিনীর চেষ্টায় নেভানো হয়। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে প্রথমে ৪১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া এবং ডিপো পরিষ্কারের সময় বেশ কিছু মানবদেহের খণ্ডিত অংশ উদ্ধারের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫১ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। আহত হন প্রায় দুই শতাধিক।

দুর্ঘটনার চার মাস পর গত সেপ্টেম্বর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বিএম কনটেইনার ডিপোটিকে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন আঙ্গিকে সংস্কার শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।

দুর্ঘটনার পর থেকে সব ধরনের কনটেইনার ব্যবস্থাপনা বন্ধ ছিল ওই ডিপোতে। গত ২২ অগাস্ট শুধুমাত্র খালি কনটেইনার সংরক্ষণ ও হ্যান্ডলিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয় ডিপো কর্তৃপক্ষকে। তবে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনার ব্যবস্থাপনা বন্ধ ছিল।

দুর্ঘটনার পাঁচ মাসের মাথায় নয়টি শর্তে রফতানি পোশাকের কনটেইনার ব্যবস্থাপনার অনুমতি পাবার কথা জানিয়ে বিএম কনটেইনার ডিপোর পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘অবকাঠামো সংস্কার, ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত নয়টি শর্ত দেওয়া হয়েছে। আমরা এরইমধ্যে সংস্কার কাজ করছি। নতুন লে-আউটের অধীনে একটি তিনতলা অফিস কক্ষ নির্মাণ করা হচ্ছে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে তিন লক্ষ গ্যালন রিজার্ভ পানির ট্যাংক বসানো হচ্ছে। চালু হচ্ছে তিনটি ফায়ার পাম্পের সমন্বয়ে ফায়ার সিস্টেম। খাদ্যপণ্য রাখার জন্য আলাদা শেড তৈরি করা হচ্ছে।’

‘ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে ১২ হাজার বর্গফুটের ‘ডেঞ্জারাস গুডসের’ জন্য বিশেষ শেড বানানো হচ্ছে। নির্মাণাধীন ফায়ার ফোম সিস্টেমটি আগুন লাগার খবরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিগন্যাল দেবে এবং এর মাধ্যমে মাত্র ১৯ মিনিটে দুই লাখ ৮৬ হাজার বর্গফুটের পুরো শেড ফোম করা যাবে। দুর্ঘটনার পর ডিপো পরিচালনার জন্য দক্ষ কর্মীবাহিনীও তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১২০ জন কর্মচারীকে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে অগ্নি-নির্বাপণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স সেবাও চালু করা হয়েছে।’

তিন মাস সময়ের মধ্যেই শর্তগুলো পূরণের আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সংস্কারের পর জানুয়ারিতে নতুনভাবে ডিপো চালুর সিদ্ধান্ত আমাদের আছে। এর আগেই সব শর্ত প্রতিপালনের মধ্য দিয়ে বিএম ডিপোকে একটি মডেল প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চাই।’

উল্লেখ্য, স্মার্ট গ্রুপের মালিকানাধীন ২৪ একর জায়গার ওপর নির্মিত বিএম ডিপো সর্বশেষ ২০২১ সালে প্রায় ৬০ হাজার টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। আমদানি কনটেইনার ও খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে ২২ হাজার ও ৪০ হাজার টিইইউএস।

সারাবাংলা/আরডি/একে

আগুন কনটেইনার টপ নিউজ বিএম ডিপো