Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কুমেকে নারী ইন্টার্নকে চিকিৎসকের পা ধরে ক্ষমা চাওয়ানোর অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৪ অক্টোবর ২০২২ ২৩:৪৩

কুমিল্লা: কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের (কুমেক) এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে কলেজের এক সহকারী অধ্যাপকের পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান খোকনের চেম্বার থেকে একজন রোগীকে পাঠানো হয় হাসপাতালে ভর্তির জন্য। হাসপাতালে যাওয়ার পর রোগী ডায়াবেটিক ফুট ও অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতার কথা জানালে তাকে সার্জারি ইউনিটে রেফার করেন একজন নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক।

বিজ্ঞাপন

কুমেকের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অভিযোগ, মেডিসিন বিভাগে ভর্তির পরিবর্তে সার্জারিতে রেফার করায় ওই নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে কলেজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সামনেই পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছেন ডা. কামরুজ্জামান খোকন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসককে অপসারণের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে পরিচালককে চিঠি দিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। চিঠিতে সহকারী অধ্যাপকের অশোভন আচরণ ও পা ধরে মাপ চাওয়ানোর ঘটনার বিচার ও যথোপযুক্ত ব্যাখ্যা দাবি করেছেন তারা। পাশাপাশি ওই সহকারী অধ্যাপকের অপসারণেরও দাবি জানিয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

ইন্টার্ন চিকিৎসকের দুঃখ প্রকাশের পরেও সহকারী অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামানের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছেন বলে জানান ঘটনার সময় উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি। মেডিকেল কলেজের মেডিসিন ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিমের উপস্থিতিতে এমন ক্ষমা চাওয়ার ঘটনা ঘটলেও এ বিষয়ে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে কুমেক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিষয়টি উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে জরুরি ভিত্তিতে সমাধানের চেষ্টা চলছে।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি হৃদয় রঞ্জন নাথ বলেন, ‘কিছুদিন আগে মেডিসিন ইউনিটে ভর্তির জন্য একজন রোগী পাঠানো হয়। সেখানে থাকা ইন্টার্ন চিকিৎসককে রোগী ডায়াবেটিক ফুট থাকার কথা জানান। সাধারণত এমন অবস্থায় এ ধরনের রোগীদের আমরা সার্জারি ডিপার্টমেন্টে পাঠিয়ে দিই। কারণ সেখানে চিকিৎসাধীন থাকলে তার সবকিছুরই পরিচর্যা ভালোভাবে হবে। সে কারণেই আমাদের এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক পর্যবেক্ষণ শেষে ওই রোগীকে সার্জারি ডিপার্টমেন্টে ভর্তির জন্য পাঠিয়ে দেন।’

তিনি বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের কারণে মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান খোকন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি পরদিনই সেই নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে অফিসে ডেকে নেন। এ সময় সেখানে অন্যান্য অধ্যাপক, ট্রেইনি ডাক্তারদের পাশাপাশি সিএ, রেজিস্টারও ছিলেন। সবার সামনেই ডা. খোকন নারী ইন্টার্নকে অপমান করেন। এ সময় নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক বার বার ক্ষমা চাইলেও তিনি দুর্ব্যবহার করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ওই নারী ইন্টার্নকে পা ধরে মাফ চাইতে বাধ্য করেন তিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘একজন নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকের প্রতি এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। পাশাপাশি এমন অশোভন আচরণের বিচার ও ঘটনার যথোপযুক্ত ব্যখ্যা দাবি করে পরিচালক মহোদয় বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। আমরা দ্রুত অভিযুক্তের অপসারণের দাবি জানাচ্ছি। না হলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।’

ঘটনাস্থলে উপস্থিত কুমেকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিমের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে। পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ার পরে ইন্টার্ন চিকিৎসককে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে দেওয়া হয়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত আরেক ইন্টার্ন চিকিৎসক জানান, অনেক সময় দেখা যায়, রোগীরা সব তথ্য চিকিৎসকদের জানান না। এক্ষেত্রে রোগীও প্রথমে তার সব তথ্য জানাননি। পরে যখন জানান তখন সেভাবেই চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু এ ঘটনায় রোগীকে সার্জারিতে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হলেও তিনি সেটা না করে চলে যান। তিনি বলেন, ‘আমরা পরে সেই রোগীকে খোঁজার চেষ্টা করি। এমনকি আরও কিছু পদক্ষেপ নিই যেন তাকে দ্রুত খুঁজে পাই। কিন্তু সেই রোগী আর আসেনি।’

ওই নারী ইন্টার্নের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার সহপাঠীরা জানান, তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বলে কারও সঙ্গেই কথা বলতে চাচ্ছেন। তবে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. কামরুজ্জামান খোকন বলেন, ‘ইন্টার্ন চিকিৎসককে আমি পা ধরে ক্ষমা চাইতে বলিনি এবং পা ধরতেও দিইনি।’

তিনি বলেন, ‘ডায়াবেটিস ফুটে আক্রান্ত এক রোগীর অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস থাকার কারণে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির জন্য পাঠাই। রোগীকে ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার ভর্তি লিখে দিয়ে ওয়ার্ডে পাঠায়। ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা তাকে ভর্তি না নিয়ে চিকিৎসা লিখে দেন। নিয়ম অনুযায়ী রোগীকে ভর্তি করার কথা। কিন্তু সেটা করা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘রোগী আমাকে জানানোর পরে বিষয়টি মেডিসিন বিভাগের প্রধানকে জানানো হয়। তখন ওই ওয়ার্ডের ইউনিট প্রধানকে ডেকে পাঠান বিভাগীয় প্রধান। ইউনিট প্রধান জানান, এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক এ কাজটি করেছেন। এ সময় বিভাগীয় প্রধান সেই ইন্টার্ন চিকিৎসককে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বলেন।’ তবে ডা. খোকনের দাবি ইন্টার্ন চিকিৎসককে তিনি পা ধরে ক্ষমা চাইতে দেননি।

এ বিষয়ে জানতে কুমেকের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রেজাউলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মেডিকেল কলেজে তার রুমে গিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে জানানো হয়, তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন। পরে ফের যোগাযোগ করলে জানানো হয়, তিনি মিটিং শেষে চলে গেছেন।

এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘ইন্টার্নদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে খুব দ্রুতই তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এর পর তাদের দেওয়া প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

এদিকে, কুমেকের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোস্তফা কামাল আজাদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অভিযোগ বিষয়ে আজ বৈঠক হয়েছে। সেখানে কুমিল্লার বিএমএ ও স্বাচিপ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। আশা করছি, সবাই মিলে খুব দ্রুতই এর একটা সমাধান বের করা সম্ভব হবে।’

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল টপ নিউজ নারী ইন্টার্ন পা ধরে ক্ষমা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর