দেশে বর্গীদের রাজত্ব চলছে: মির্জা ফখরুল
৮ অক্টোবর ২০২২ ১৭:৩৮ | আপডেট: ৮ অক্টোবর ২০২২ ২০:২৮
ঢাকা: দেশে বর্গীদের রাজত্ব চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। জাতীয়তাবাদী উলামা দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার দেশটাকে বর্গীদের রাজত্ব কায়েম করেছে। বর্গীরা আগে আসত, দখল করত, লুট করে নিয়ে আবার চলে যেত। আজকে একইভাবে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, তাদের নেতা, তাদের বংশবদরা লুট করছে, লুট করে নিয়ে বাইরে চলে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা কঠিন সময় অতিক্রম করছি। এই সময় আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ না হই, তাহলে কিন্তু এদের পরাজিত করা যাবে না। এরা ফ্যাসিস্ট শক্তি। আপনারা জানেন যে, এই ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পরাজিত করা একটা গণতান্ত্রিক দলের পক্ষে খুবই কঠিন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের সামনে একটাই পথ খোলা আছে। সেই পথ হচ্ছে যে, আমরা এই সরকারকে সরিয়ে দেব। কারণ, তারা ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছে, তারা বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে। তারা নির্বাচন করতে চায়। সেদিন আবার বলেছেন যে, আসেন না নির্বাচন করেন। কোন নির্বাচন করবে? আপনার সেই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন করবেন? নির্বাচন এখানে কখনোই হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি, তাদেরও আমরা এই কাতারে আনার চেষ্টা করছি। সবার আগে যে কাজটা করতে হবে, প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নতুন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসবে সেই সরকার একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। তারা একটি নির্বাচন করার মধ্য দিয়ে নতুন করে একটা পার্লামেন্ট গঠন করা হবে।’
ফখরুল বলেন, ‘এখানে আপনাদের মধ্যে অনেকে আছেন ছাত্রদের পড়ান, তাদের শিক্ষা দেন, আপনাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে- জনমত গঠন করা, মানুষকে সংগঠিত করা। আমরা অন্যায় কিছু বলি না। আমরা বলি যে, সঠিক পথে চলুন। এমন না যে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেন। না। আমরা বলি যে, জনগণ যাকে চায়, তাদের ক্ষমতায় বসাতে হবে। তারা দেশ চালাবে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে একটা অসহনীয় পরিবেশ বিরাজ করছে। আজকে মসজিদে পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমি কিছুদিন আগে দেখেছিলাম এখন আছে কি না জানি না, খুতবা যে হবে এই খুতবাও তারা (সরকার) নির্ধারণ করে দেবেন। এর চেয়ে খারাপ কথা আর কী হতে পারে। সেই কাজগুলো তারা করতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করেন না। আর কিছুদিন আগে দেখেছি, মসজিদে মসজিদে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে পোশাকে এবং সাদা পোশাকে। কেন? আমি আমার ধর্ম পালন করব- এটা আমার সাংবিধানিক অধিকার, স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের অধিকার। তারা সেখানেও নিয়ন্ত্রণ করছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের কী করবে? আমরা যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি, ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি, ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাস করি, আমাদের এখানে মানুষজন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যে বাস করে। এখানে আমরা মুসলমানরা আমাদের মতো ধর্ম পালন করেছি, হিন্দু সম্প্রদায় তাদের মতো ধর্ম পালন করেছে, বৌদ্ধরা তাদের মতো করেছে, খ্রিস্টানরা তাদের মতো করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে তারা বিভাজন সৃষ্টি করেছে। এরা সকলের ওপর নির্যাতন করছে। একদিকে শুধু মুসলমানদের ওপর নির্যাতন করছে, তা নয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার করে তাদের উপাসনালয় ভেঙে দেয়, পূজামণ্ডপ ভেঙে দেয়, তাদের সম্পত্তি দখল করে, বৌদ্ধদের .. রামুতে দেখেছে সেখানে কি হয়েছে? রামুর প্যাগোডা তছনছ করে দিয়েছিল- এর সব নেতৃত্ব দিয়েছিল ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগের লোকরা। বৌদ্ধরা সংবাদ সম্মেলন করেও এসব বলেছে।’
উলামা দলের আহ্বাবায়ক অধ্যক্ষ শাহ নেছারুল হকের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদার ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মো. সেলিম রেজা‘র সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাসির উদ্দিন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, নাজিম উদ্দিন আলম, মীর সরাফত আলী, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ওলামা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/এনএস