Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেবীর বিদায় নৌকায়, শস্যপূর্ণ হয়ে উঠবে পৃথিবী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ অক্টোবর ২০২২ ১৪:৪২ | আপডেট: ৫ অক্টোবর ২০২২ ১৪:৪৫

রমনা কালী মন্দিরে প্রতিমার পায়ে সিঁদুর দিচ্ছেন ভক্তরা, ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: ‘গজে জলদা দেবী শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা।’ অর্থাৎ, দেবীর গজে (হাতি) আগমন বা গমন হলে, পৃথিবী শস্যপূর্ণ হয়ে উঠবে। যা শুভ ফল নির্দেশ করে। আর নৌকা হলো সমৃদ্ধির প্রতীক। ‘নৌকায়াং শস্যবৃদ্ধি জলবৃদ্ধিশ্চ।’ অর্থাৎ, দেবীর নৌকায় আগমন বা গমন হলে, বৃষ্টিপাত বেশি হবে, জলেপূর্ণ হবে নদীনালা। আর ফসলে ভরে উঠবে পৃথিবী, যা শুভ ফল নির্দেশ করে। এবার মা দুর্গা কৈলাস থেকে এসেছেন গজে ( হাতি) চড়ে। আর গেছেন নৌকায়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস মতে, এবার পৃথিবী শস্যপূর্ণ হয়ে উঠবে। কারণ, দেবী দুর্গা এসেছেন গজে চড়ে, আর গেছেন নৌকায়।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৫ অক্টোবর) বিজয়া দশমী। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাক-কাঁসার বাদ্যি-বাজনা ও ভক্তদের পূজা-অর্চনায় মুখরিত হয় রমনা কালী মন্দির। নেচে গেয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানান ভক্তরা। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আজ শেষ হবে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। মর্ত্যলোক ছেড়ে বিদায় নেবেন দেবী দুর্গা। অশ্রু চোখে মা দুর্গাকে বিসর্জন দেবেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।

আজ সকাল ১০টায় দশমীবিহিত পূজা শুরু হয়। এরপরই শুরু হয় দর্পণ পূজা। সনাতনধর্মাবলম্বীদের মতে দর্পণ পূজার আগে দেবীর আত্মা থাকে প্রতিমায়। এ পূজা শেষ হলে মুর্তি হয়ে যায় প্রতিমাসহ অন্যান্য দেবীরা। সকাল ৯টায় অঞ্জলি পূজা শুরু হয়। এ সময় ভক্তরা দাঁড়িয়ে দেবীকে শ্রদ্ধা জানান এবং পুরহিতের সঙ্গে অঞ্জলি মন্ত্রপাঠ করেন। এরপর সাড়ে ১১টার দিকে শাস্ত্র মতে ঘট পূজা শুরু হয়। একটি ঘটে পানি ও আম পাতা দেবীর সামনে রেখে দিয়ে মন্ত্র পড়েন পুরহিত। এ পর্ব শেষ হওয়ার পর প্রতিমার পায়ে সিঁদুর দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিবাহিত নারী ভক্তরা। তারপর শুরু হয় সিঁদুর খেলা। এ খেলায় শুধু বিবাহিত নারীদের অংশ নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে এ প্রথা এখন আর কেউ মানে না, অবিবাহিত মেয়েরাও এখন তাতে অংশ নেন। এরপর সুবিধামতো সময়ে বিজয়ার শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। বিসর্জন শেষে ভক্তরা শান্তিজল গ্রহণ করবেন বলে জানান রমনা কালী মন্দিরের একজন পুরহিত।

ষোড়শ শতকে রমনা কালী মন্দিরে কালী পূজার সঙ্গে দুর্গাপূজাও হতো বলে জানায় স্থানীয় পুরোহিত। পাকিস্তনী হানাদার বাহিনীরা ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চের গভীর রাতে রমনা কালী মন্দির ও শ্রী শ্রী মা আনন্দময়ী আশ্রমে হালমা চালিয়ে প্রায় ১৫০ মানুষকে হত্যা করে। গুড়িয়ে দেয় মন্দির।

বিজ্ঞাপন

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের ছবিতে দূরে এই মন্দিরের চূড়া দেখা যায়। ওই সময় অবশ্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিচিত ছিল রেসকোর্স ময়দান নামে। আর পাশেই ছিল রমনা কালী মন্দির। মোঘল আমলের শেষ দিকে সেনাপতি মান সিংহের সহযোগিতায় এই মন্দির করা হয়।

১৮৫৯ সালের ঢাকার এক মানচিত্রে মন্দিরটিকে কৃপাসিদ্ধির আখড়া নামে অভিহিত করা হয়েছে। এক সময় ১২টি সিঁড়ি বেয়ে মন্দিরের বারান্দায় উঠতে হতো। বারান্দার মধ্যখানে কাঠের সিংহাসনে ছিল লাল পাড়ের শাড়ি পরা সোনা, মনি-মুক্তার অলংকারে সজ্জিত ছিল কষ্টিপাথরের কালী ও ভদ্র কালীর মূর্তি।

মন্দিরটির পাশে ছিল একটা আশ্রম, নাম ‘মা আনন্দময়ীর আশ্রম’। এই আনন্দময়ী ছিলেন ঢাকার নবাবদের শাহবাগ বা রাজকীয় বাগানেরর তত্ত্বাবদায়ক রমনীমোহন চক্রবর্তীর স্ত্রী। মন্দিরের একদম পাশে প্রায় বর্গাকার একটি পুকুর ছিল। এটা করে দিয়েছিলেন ভাওয়ালের মহারানী বিলাসমণি।

১৮৯৭ সালে বাংলাদেশে একটা খুব বড় রকমের ভূমিকম্প হয়েছিল। এতে মন্দিরটা বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তখন এই মন্দিরটি আবার নতুন করে সংস্কার করা হয়েছিল। ওই সময়ে এই এলাকায় উঁচু কোনো ভবন না থাকায় মন্দিরের চূড়া অনেক দূর থেকে দেখা যেত।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এনএস

টপ নিউজ রমনা কালী মন্দির শারদীয় দুর্গাপূজা শারদীয় দুর্গোৎসব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর