অব্যাহতি না দিয়ে শোকজ করা যেত— ডিসি’র মোনাজাত বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:১৩ | আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:১৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। জেলা প্রশাসককে সরাসরি অব্যাহতি না দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া উচিৎ ছিল বলে মনে করেন তিনি।
শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম হলে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ মত দেন। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ‘হরিজন সম্প্রদায়ের’ মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরণ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাঝে সমাজসেবা অধিদফতরের চেক বিতরণ উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিজয় কামনা করে মোনাজাত করায় জেলা প্রশাসককে রিটার্নিং অফিসারের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া নিয়ে কোনো তদন্ত হয়েছে কি না জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সেখানে শত শত মানুষের মধ্যে কেউ একজন মোনাজাত ধরেছেন। মুসলমান হিসেবে যদি কেউ মোনাজাত ধরে আর আমি যদি না ধরে দাঁড়িয়ে থাকি তাহলে তো আমাকে বলবে বিধর্মী। সে জন্য জেলা প্রশাসকও সেখানে মোনাজাত ধরেছেন। মোনাজাতের মধ্যে কে কী বলল, সেটির দায় জেলা প্রশাসকের ওপর বর্তায় বলে আমি মনে করি না।’
নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মন্ত্রী বলেন, ‘এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসককে একটি কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেওয়া দরকার ছিল। তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া দরকার ছিল, তার বক্তব্য নেওয়া দরকার ছিল। বক্তব্য সন্তোষজনক না হলে ব্যবস্থা নিতে পারত। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে একটি মোনাজাত ও কিছু পত্রিকার সংবাদকে উপলক্ষ করে যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, আমি মনে করি এক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করা হয়েছে। যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি।’
উল্লেখ্য, গত ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের একটি কর্মকাণ্ডে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ওইদিন জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম রিটার্নিং অফিসার অর্থাৎ জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান। মনোনয়নপত্র জমাদান শেষে নগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য শফর আলী প্রার্থীর বিজয় কামনা করে মোনাজাত ধরেন। এতে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারকেও হাত তুলে অংশ নিতে দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে।
মোনাজাতের পর আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ টি এম পেয়ারুল ইসলামকে বাম পাশে এবং সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদকে ডানপাশে বসিয়ে উপস্থিত দলটির নেতাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। বক্তব্যে তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবার যেন আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়, সে জন্য বিএনপি-জামায়াতের দোয়া কামনা করেন। জেলা প্রশাসকের পর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদ।
মোনাজাত এবং জেলা প্রশাসকের বক্তব্যের ভিডিও এবং ছবির ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশিত হয় সারাবাংলায় এবং পরবর্তীতে আরও বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামানকে সেই স্থলে বসিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।
বিএনপির বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশের ডাক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কাগজে দেখতে পেলাম, বিএনপি বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। আমরা দেখেছি- ঢাকা শহরে তারা সমাবেশ করতে গিয়ে লাঠি ও রড নিয়ে হাজির হয়েছে। আবার লাঠি ও রডের মাথায় জাতীয় পতাকাও বেঁধেছে। তারা জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছে।’
‘একদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব ঠাকুরগাঁও গিয়ে বলেছেন— পাকিস্তান আমলই ভালো ছিলেন আর ঢাকায় তারা রডের মাথায় জাতীয় পতাকা লাগায়- এ দুটো ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র আছে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি অশ্রদ্ধা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে। বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশের নামে তারা যদি লাঠির মাথায় পতাকা লাগিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে, প্রতিহত করা হবে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান, মুহাম্মদ মাহমুদ উল্লাহ মারুফ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর আহমদ, জেলার ভারপ্রাপ্ত ও এ কে এম সরোয়ার কামাল দুলু, জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ওয়াহিদুল আলম, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ কুমার ভট্টাচার্য, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত ও সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার দেব, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিতাই প্রসাদ ঘোষ।
আরও পড়ুন
আ.লীগ প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা: ডিসির প্রত্যাহার চেয়ে নোটিশ
আ. লীগ প্রার্থীর জয় চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার মোনাজাত ও বক্তৃতা!
সারাবাংলা/আরডি/একে