মাহশা আমিনির মৃত্যু: ইরান জুড়ে হিজাববিরোধী বিক্ষোভ
২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৩:১৬ | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৩:১৭
ইরানে হিজাব আইনভঙ্গের অভিযোগে গ্রেফতার মাহশা আমিনি (২২) পুলিশ হেফাজতে মারা হওয়ার ঘটনায় সারাদেশে হিজাববিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। টানা পঞ্চম দিনের বিক্ষোভে অন্তত তিনজন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। খবর রয়টার্স ও বিবিসি।
দেশটিতে অধিকার, নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থনীতিসহ অসংখ্য ইস্যুতে বিরাজমান ক্ষোভের মধ্যে এমন মর্মান্তিক ঘটনায় আন্দোলন দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিবিসি’র খবরে বলা হয়, ইরানের কোনো কোনো জায়গায় বিক্ষোভকারী নারীরা তাদের মাথার হিজাব খুলে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন।
গত সপ্তাহে ‘অনুপযুক্ত পোশাক’ পরার অভিযোগে দেশটির নৈতিক পুলিশ আমিনিকে গ্রেফতার করেছিল। পরে পুলিশ ভ্যানে তুলে মারধর করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে ইরানি পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। গত বছরে দেশটিতে পানি সংকটের কারণে হওয়া আন্দোলনের পর এটিই সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। তবে বিক্ষোভকে উসকে দেওয়ার জন্য বিদেশি এজেন্ট ও অনির্দিষ্ট সন্ত্রাসীদের দায়ী করেছে ইরানের সরকার।
টানা পাঁচ দিন ধরে ইরানে বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। প্রথম দিন ১৫ সেপ্টেম্বর মাহাশা আমিনির জন্মস্থান কুর্দিস্তান প্রদেশের শাকাজ শহরে ব্যাপকমাত্রায় বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে দেশটির উত্তর-পশ্চিমের আরও কয়েকটি প্রদেশে তা ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল মঙ্গলবারের শেষের দিকে বেশ কয়েকটি শহরে ‘সীমিত সমাবেশ’ হওয়ার কথা জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম। এ সময় বিক্ষোভকারীরা সরকার বিরোধী স্লোগান দেন, পুলিশের গাড়িতে ঢিল ছোড়ে এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করা হয় বলেও দাবি করা হয়।
আরও পড়ুন: ইরানে হিজাব না পরায় তরুণী গ্রেফতার, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু
মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিও’তে দেখা যায়, ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষোভ ছড়িয়েছে পড়েছে। তবে ভিডিও’র তথ্য যাচাই করতে পারেনি সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। এর মধ্যে কুর্দিস্তান অঞ্চলে বিক্ষোভ সবচেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করে। সেখানে অন্তত তিনজন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা এবং অ্যাক্টিভিস্টরা।
কুর্দি মানবাধিকার সংগঠন হেনগাও জানিয়েছে, গত সোমবার নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ওই তিনজন নিহত হয়েছেন।
নিহতের ঘটনাকে ‘সন্দেহজনক’ উল্লেখ করেছেন কুর্দিস্তানের গভর্নর ইসমাইল জারেই কুশা। এজন্য অনির্দিষ্ট সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে দায়ী করেছেন তিনি। আধা-সরকারি ফার্স নিউজ এজেন্সিকে ইসমাইল জারেই কুশা বলেন, ‘দিভান্ডাররেহ শহরের একজন নাগরিককে এমন অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়েছে যেটি সশস্ত্র বাহিনী ব্যবহার করে না। সন্ত্রাসবাদী দলগুলো এমন হত্যার চেষ্টা করছে।’
তেহরানের গভর্নর মোহসেন মনসুরি দেশটির রাজধানীতে বিক্ষোভের জন্য বিদেশি এজেন্টদের অভিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেন, রাতের বেলা সমাবেশ থেকে তিনজন বিদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
চলমান বিক্ষোভ প্রশমিত করার প্রচেষ্টায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির একজন সহযোগী আমিনির পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমিনির মৃত্যুতে ব্যথিত হয়েছেন খামিনি।
খামেনির প্রতিনিধি আবদোলরেজা পুরজাহাবি দেশটির কুর্দিস্তান প্রদেশে আমিনির বাড়িতে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম। সেখানে ভুক্তভোগী পরিবারকে তিনি বলেন, ‘লঙ্ঘন করা অধিকার রক্ষার জন্য রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থা নেবে।’
সারাবাংলা/এনএস