‘মিয়ানমার বার বার উসকানি দিচ্ছে, কিন্তু আমরা যুদ্ধ চাই না’
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২১:৪১ | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৩:৪৮
রাজশাহী: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, প্রতিবেশি দেশের কোনো অংশ দখল করার ইচ্ছা আমাদের নেই। মিয়ানমার বার বার আমাদের উসকানি দিচ্ছে। তারা আমাদের দেশে গোলা ছুড়ছে। কিন্তু আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। বিজিবি সবল করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা আগ্রাসন মনোভাব দেখাচ্ছি না। কারণ বাংলাদেশের সীমান্তে অনেক রোহিঙ্গা বসবাস করছে।
রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের উদ্যোগে ‘শেখ হাসিনার বৈশ্বিক ভাবমূর্তি: প্রসঙ্গ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন’ শীর্ষক সেমিনার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রথম থেকেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। মিয়ানমার প্রাকৃতিক সমৃদ্ধশালী দেশ হলে জান্তা সরকারের বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য তারা বার বার আলোচিত হয়েছে। ক্ষুদ্রগোষ্ঠীর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে বছরের পর বছর ধরে অত্যাচার করছে। প্রতিনিয়ত তাদের এই অত্যাচারের হার বাড়ছে।’
তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে আশ্রয় দিচ্ছে। কতদিন তাদের ভরণ-পোষন দিতে পারব- এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মিয়ানমার এত বড় অপরাধ করে পার পেয়ে যাবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে।’
গাম্বিয়ার পাশে দাঁড়ানোর কথা তুলে ধরে মেয়র লিটন বলেন, ‘গাম্বিয়া আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের মানবতার পরিচয় দিয়েছেন। পরাশক্তিশালী দেশগুলোর কথা ও কাজের মিল পাওয়া যায় না। তারা মুখে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চাইলেও মন থেকে প্রত্যাবাসন চায় না।’
এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচারকারীদের দ্রুত বিচার দাবি করেন ও সুষ্টূ সমাধান চান এবং বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে পরিক্ষিত বন্ধুরাষ্ট্রদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া আন্তর্জাতিক সমস্যা। যারা বাংলাদেশে আটকা পড়েছে, আমরা চাই তারা নিজ দেশে ফিরে যাক।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কলামিস্ট তৈরি করতে চাই। এই উদ্দেশ্য কাজ করে যাচ্ছি।’ এ সময় তিনি সবাইকে কলাম লেখার জন্য আহ্বান করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহ্ আজম বলেন, ‘বর্তমানে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে নানান অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে একটা সংকট তৈরি হচ্ছে। এবং আমাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা আসলে আন্তর্জাতিক সমস্যা, তাই এটাকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। মিয়ানমারে যে বৈষম্যমূলক আইন আছে, সেই আইন বিলুপ্ত করার জন্য জনমত সৃষ্টি করতে হবে। সেজন্য বাইরের দেশ থেকে প্রতিনয়ত চাপ প্রয়োগ করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। বর্তমানে রোহিঙ্গা সমস্যা অন্যতম। এ ধরনের সমস্যা বিশ্বের মানুষের কাছে জানানো দরকার। বিশ্বের ইয়াবা পাচারকারী দেশ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের শেখার কিছু নাই। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাষ্ট্র নেতা আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সকল আশ্বাস বাস্তবায়ন করে চলেছেন।’
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক ও কলাম লেখক ব্রি. জে. (অব.) হাসান মো. শামসুদ্দীন। সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তৃতা করেন- নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী।
সারাবাংলা/পিটিএম