Saturday 11 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জনগণ অবশ্যই আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:১৬

ঢাকা: সরকারের টানা মেয়াদে সার্বিক উন্নয়ন অগ্রগতির প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এত কাজ করার পরে জনগণের যে ভোট অবশ্যই তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। এটি আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। যদি এই চলমান উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে চান, আর না চাইলে তো কিছু করার নাই; সেটা জনগণের ইচ্ছা। সেই ক্ষেত্রে নির্বাচনে যারা সবসময় আমাদের সাথে ছিল, তারা আমাদের সাথে থাকবে; এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টার পর ভারত সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ভারত সফরের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতের নয়াদিল্লির উদ্দেশে রওনা হন। সফর শেষে ৮ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরেন প্রধানমন্ত্রী।

এবারের ভারত সফরের সময় বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সফরে দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিনিয়োগ, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য সম্পর্ক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সহযোগিতা, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, মানবপাচার রোধসহ ইত্যাদি অগ্রাধিকার পায়।

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নকারী সাংবাদিকের কথা ভালোভাবে কানে শুনতে না পাওয়ার বিষয়ে এক হাত কান দিয়ে ধরে দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী হাসতে হাসতে বলেন, ‘এক কান নেই, গ্রেনেড হামলা নিয়ে নিছে। একটাই আছে?’

প্রশ্নকারী সাংবাদিক বলেন, ‘আজকে নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে? সেক্ষেত্রে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী জোটের রূপরেখা হবে তথা নির্বাচন কি মহাজোটগত করবেন; না আওয়ামী লীগ এককভাবে করবে? না ১৪ দলগতভাবে করবে? একইসঙ্গে জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোয়ন দিয়েছে। গতবারের ৩১জন প্রার্থী পরিবর্তন হয়েছে। এই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা কি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও থাকবে কি না আওয়ামী লীগের?

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়টা তো সময় আসলে বলতে পারব। নির্বাচন যখন হবে? হ্যাঁ আমরা ১৪ দল করেছি। আমরা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করেছি। জাতীয় পার্টি আমাদের সাথে ছিল কিন্তু তারা আলাদা নির্বাচন করেছি। কিন্তু আমাদের সঙ্গে একটা সমঝোতা ছিল। আর ভবিষ্যৎ নির্বাচনে কে কোথায় থাকবে সেটা তো সময়েই বলে দেবে। আর আওয়ামী লীগ উদারভাবে কাজ করে। আওয়ামী লীগের দরজা খোলা।’

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় কথাটা হচ্ছে, একেবারে তৃণমূল পর‌্যায় থেকে উন্নয়নটা করে যাচ্ছি। এই করোনার সময়ও প্রচুর অর্থ সরবরাহটা গ্রামে করেছি। যাতে মানুষ কোনরকম কষ্ট না পায় বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি। এতো কাজ করার পরে জনগণের যে ভোট অবশ্যই তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে, এটা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। যদি এই চলমান উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে চান। আর না চাইলে তো কিছু করার নেই। সেটি জনগণের ইচ্ছা। সেই ক্ষেত্রে নির্বাচনে আমাদের যারা সবসময় আমাদের সাথে ছিল, তারা আমাদের সাথে থাকবে। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’

‘যে কোনো নির্বাচনে নমিনেশনের ব্যাপারে পরিবর্তন, এটি তো খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। অবশ্যই আমরা যাচাই করে দেখব। কার জেতার সম্ভাবনা আছে? কার নেই? অথবা আমাদের বেশকিছু নিবেদিত প্রাণ কর্মী আছে ; হয়ত বেশিদিন বাঁচবে না। বয়স-বৃদ্ধ হয়ে গেছে বা তাদেরকে আর কষ্ট দিতে চাইনি নমিনেশন দিয়েছি। সেখানে পরিবর্তন আনিনি। এটি তো এমন একটা ব্যাপার। ইলেকশনটাকে সামনে রেখেই আপনি কোনটা কতটুকু করবেন, কে ভোট পাবে বা না পাবে বা পেলেও সে জিতবে কি না’ সবকিছু বিবেচনা করেই নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

‘এখনো তো নির্বাচনের প্রায় এক বছরের বেশি সময় বাকি আছে। সময় যত যাবে ততই তো জিনিসটা আরও পরিষ্কার হবে। আর আমাদের সঙ্গে কে থাকবে না থাকবে বা নতুন জোট হবে বা কি হবে হোক; অসুবিধা নেই তো। সবাই ইলেকশনে পার্টিসিপেট করুক সেটিই আমরা চাই। আর যদি কেউ না করে ওটা যার যার দলের সিদ্ধান্ত। এখানে আমাদের তো সেইজন্য আমাদের সংবিধান তো বন্ধ করে রাখতে পারি না। সংবিধানের যে ধারা সেই ধারা অনুযায়ী গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত থাকবে।’ আমরা চাই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশে দীর্ঘ একটানা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে তো গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত আছে। তাই ভুলে গেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর বারবার ক্যু হচ্ছিল এবং এক একটা মিলিটারি ডিটেকটররা অথবা মিলিটারি ডিটেকটরের স্ত্রী ক্ষমতা নিয়ে গেল ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে, জনগণের কী ছিল তখন? জনগণের কি আদৌ কোনো অধিকার ছিল। সারারাত কারফিউ। কথা বলার অধিকার নেই। সাদা মাইক্রোবাস হলেই তো কে কখন গায়েব হয়ে যায়, তার ঠিক নেই। এই তো ছিল বাংলাদেশের অবস্থাটা।’

‘আপনারা এখন টকশো করেন যে যার মতো কথা বলেন? একটা কথা জিজ্ঞাসা করি আওয়ামী লীগ সরকারে আসার আগে, কে এত কথা বলার সুযোগ পেয়েছে বলেন তো? কেউ পেয়েছে কখনো সুযোগ, পায়নি। একটা টেলিভিশন একটা রেডিও। কোথায় টকশো আর কোথায় মিষ্টি কথা। সে তেঁতুলের টক হউক আর রসগোল্লার মিষ্টি কোনটাই তো পায়নি।’ কথা বলার তো অধিকার ছিল না বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

‘কিন্তু আওয়ামী লীগ যে বিএনপির হাতে নির‌্যাতিত, সে কথাটা ভুলে গেছেন। আওয়ামী লীগের উপর তো সবাই চড়াও হয়েছে। সেই জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করল তারপর থেকে একের পর এক। লাশ টানতে টানতে আর আহতদের চিকিৎসা করতে করতে নাভিশ্বাস উঠেছিল আমাদের। এখন কি সেই পরিবেশ আছে? তা তো নাই। এমনকি আমার পার্টির কেউ যদি কোন অন্যায় করে আমরা কিন্তু ছেড়ে দেই না। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে কিছু বলব না; তা না। যে অন্যায় করবে তার বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেব এবং নিচ্ছি। কাজেই সেটি আমি কখনো সহ্য করব না বলেও জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘কারণ আমি এ দেশে গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত থাকুক, একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আসুক। এখন যারা তত্ত্বাবধায়ক বা ইত্যাদি বলে চিৎকার করছে, তো ওয়ান/ইলেভেনের কথা ভুলে গেছে? ২০০৭’র কথা ভুলে গেছে। কী অবস্থাটা সৃষ্টি হয়েছিল। কী রাজনৈতিক কর্মী কি সাংবাদিক কি ব্যবসায়ী সবার নাভিশ্বাস উঠেছিল। সেখান থেকে অন্তত সবাই মুক্তি পেয়েছেন।’

ভূমিহীন গৃহহীন মানুষকে বিনামূল্যের ঘর উপহার দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বসবাসরত কেউ কেউ তরকারি পাঠিয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘কেন করছি, আমার বাবা তো সারাজীবন এই দেশের মানুষের জন্য তিনি তার জীবনটাই উৎসর্গ করে গেছেন।’

যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নের চিত্রও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু হওয়ার পরে আমাদের মংলা বন্দরের ওপর খুব চাপ পড়ছে। সেটাও ড্রেজিং করা এবং আরও ক্যাপাসিটি বাড়ানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যদি বলেন, ‘কোন এলাকা কিন্তু বাদ দেয়নি। একেবারে উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণাঞ্চল পূর্ব থেকে পশ্চিম অঞ্চল সব জায়গাতেই কাজ করে যাচ্ছি। টকশোতে টক টক কথা বলেন, টকের সঙ্গে একটু মিষ্টি না হলেও আবার টেস্ট হয় না। এটিও মনে রাখেন।’

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর দুই পাশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আক ম মোজাম্মেল হক বসা ছিলেন। আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে আওয়ামী লীগ নেতা, মন্ত্রীপরিষদের সদস্যসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এনআর/একে

আওয়ামী লীগ টপ নিউজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর