Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘স্বনামধন্যদেরও অর্থপাচারের তথ্য আছে, লিখবেন কি না দেখব’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:৫৩ | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০০:১৬

ঢাকা: কারও নাম উল্লেখ না করে সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেকেরই অর্থপাচারের তথ্য আছে। ওটি আপনারা লিখবেন কি না আমার সন্দেহ আছে। বহু তথ্য আমার কাছে আছে, অনেক স্বনামধন্যদের ব্যাপারেও আছে। দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ব্যাংক থেকে ওটির বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সামনে আসবে একদিন কিন্তু আপনারা লিখবেন কি না আমি সেটি দেখব।’

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২) বিকেল ৪টার পর ভারত সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ভারত সফরের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

বিজ্ঞাপন

পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতের নয়াদিল্লির উদ্দেশে রওনা হন। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইটে সকালে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। সফর শেষে ৮ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরেন প্রধানমন্ত্রী।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার হচ্ছে, এ বিষয়ে মনিটরিং বাড়ানো হবে কি না? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই; এটি নজরদারিতে আনা হয়েছে বলেই আপনারা জানতে পারলেন। আপনারা খুঁজে বের করেননি তো? সাংবাদিকরা বের করেননি। আবার এমন এমন অনেকেরই অর্থ পাচারের তথ্য আছে ওটি আপনারা লিখবেন কি না আমার সন্দেহ আছে? আমি সোজা কথা বলি। বহু তথ্য আমার আছে, অনেক স্বনামধন্যদের ব্যাপারেও আছে। তবে হ্যাঁ এটি দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ব্যাংক থেকে ওটার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। আসবে, সামনে একদিন আসবে। কিন্তু সেটি আপনারা লিখবেন কি না দেখব, এটি হলো আমার কথা।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘সুইস ব্যাংকে কিন্তু বহু আগেই আমরা ডিমান্ড পাঠিয়েছিলাম, আমরা তালিকা চেয়েছিলাম। কিন্তু কোনো তালিকা আসেনি। কেউ বলতে পারেনি। সবাই হাওয়ায় কথা বলে যায় কিন্তু সঠিক তথ্য দিতে পারে না।’

মানিলন্ডারিংয়ের ব্যাপারে যথেষ্টভাবে এটি বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডলার সংকটের কথা এই সংকট তো তো বাংলাদেশের একার না। এটি বিশ্বব্যাপী এখন সংকট দেখা দিয়েছে। সেটি আপনারা ভালো করেই জানেন। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে আমেরিকা যে স্যাংশন দিলো, স্যাংশন দেওয়ার পরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে গেল। সেখানে সংকট আরও বেশি দেখা দিয়েছে। তারপরও আমি বলব, আমার যখন ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করেছিলাম, তখন আমাদের রিজার্ভ কত ছিল? আর এরপরে দ্বিতীয়বারে যখন আসি। তারপর করোনার সময় খরচ ছিল না আমাদের রিজার্ভ বেড়েছে। এরপরে যখন আমাদের ক্যাপিটাল মেশিনারিজ থেকে আমদানি যখন শুরু হয়েছে তখন তো কিছু কমেছে। আরেকটি বিষয় বাংলাদেশ কিন্তু সবসময় যেখান থেকে যত ঋণ নেয় ঠিক সময়মতো ঋণটা পরিশোধ করে। এখানে আমরা কিন্তু কোনোদিন ডিফল্ডার হইনি। সেটি করতে গিয়ে রিজার্ভ একটু টান পড়ে। এটিও বাস্তবতা বলে’— যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

‘ডলার নিয়ে কিছুটা খেলা কিছু শ্রেণি তো খেলতে শুরু করেছিল। সেটি ভালোভাবে মনিটরিং করা হয়েছে। দেখেই আজকে একটা স্থিতিশীল পরিবেশ আমরা আনতে পেরেছি’ বলে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কিন্তু এই সংকট সৃষ্টি এটা তো আন্তর্জাতিক বিষয় থেকে এসেছে।’

এখানে আমাদের নিজস্ব কতটুকু দায়িত্ব আছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ না, এই সংকট এখন যেটি দেখছেন হয়ত সামনের বছর আরও বেশি সংকট দেখা দেবে, এটি সারা বিশ্বব্যাপী এবং আমার তো একটা শংঙ্কা হচ্ছে যে, সারাবিশ্বেই দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে, সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক চরম দুরাবস্থা দেখা দিতে পারে?’

‘আমি কিন্তু আগে থেকেই সবাইকে বলে রাখছি, আমাদের মাটি আছে, মানুষ আছে, ফসল ফলান, নিজের ব্যবস্থা নিজেরা করে রাখি, যাতে কারও মুখাপেক্ষী না হতে হয়। বাংলাদেশে তবু তো আমরা চালাচ্ছি। আপনারা ইউরোপ আমেরিকা বা ইংল্যান্ডের যে অবস্থাটা, সেটি একবার চিন্তা করে দেখেন? সেখানে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে’– বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

আমাদের সাশ্রয় এবং সঞ্চয় আগে থেকেই রাখতে হবে নইলে বিশ্বব্যাপী একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, যদি এই যুদ্ধ বন্ধ না হয়, এই স্যাংশন প্রত্যাহার না হয় তাহলে কিন্তু আরও খারাপ অবস্থা হবে বলেও দেশবাসীকে আগাম সতর্কতা উচ্চারণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, ‘তারপর প্রকৃতির যে খেলা, এবার আপনারা দেখেছেন কীভাবে সমস্ত বনে আগুন লাগল। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমেরিকায় সমস্ত জায়গায় একটা অদ্ভুত ব্যাপার। লন্ডনের মতো জায়গায় কথায় কথায় ঘাসে আগুন লেগে যাচ্ছে, তার পরে অনেক দেশে তো ক্ষেতের ফসল খেতে পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। ইউরোপের বহু দেশে হয়েছে। এজন্য আমাদের আগে থেকে ব্যবস্থা থাকতে হবে।’

‘আমি তো এটা সব সময় বলি,আজকেও বলছি। অন্ততপক্ষে আমাদের নিজের যে মাটি আছে, যার যেটুকু আছে, সে সেভাবে পারেন অন্তত নিজের খাবারের জোগাড় নিজেরা করে রাখেন। আর নিজেদের সঞ্চয়টা করে রাখেন। নইলে এত খারাপ অবস্থা সারা বিশ্বে হতে পারে, এখন যা কল্পনাও করা যাচ্ছে না—’ বলেন শেখ হাসিনা।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর দুই পাশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বসা ছিলেন।

আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এনআর/একে

টপ নিউজ প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

রিশাদ-জাহানদাদে কুপোকাত সিলেট
৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:২১

আরো

সম্পর্কিত খবর