রানি এলিজাবেথের প্রধানমন্ত্রীরা
৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৪:৫৬ | আপডেট: ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৪:১২
হাউজ অব কমনসের সংখ্যাধিক্যের আস্থার ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের প্রকৃত ক্ষমতা পার্লামেন্টের। তবে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের চূড়ান্ত ক্ষমতা ব্রিটেনের রানির হাতে। তার অনুমতি নিয়েই প্রধানমন্ত্রী সরকার গঠন করেন।
রীতি অনুযায়ী হাউজ অব কমনসে সমর্থনপ্রাপ্ত নেতা সরকার গঠনের জন্য রানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তার প্রাসাদে যান। এর আগে অবশ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী রানির কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। সাধারণত এসময় রানি বাকিংহাম প্যালেসে অবস্থান করেন। যদিও এবার লিজ ট্রাস রানির সঙ্গে স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্যালেসে সাক্ষাৎ করেছেন।
হাউজ অব কমন্সের নতুন নেতাকে রানি সরকার গঠন করতে বলেন। তখন নতুন প্রধানমন্ত্রী রানির হাতে চুম্বনের রেওয়াজ রয়েছে। রানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার অনুমতি নিয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী সরাসরি ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট অর্থাৎ, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে যান। নতুন প্রধানমন্ত্রী রানির নামেই শপথ গ্রহণ করেন।
ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় সিংহাসনে ছিলেন সদ্য প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তার ৭০ বছরের রাজত্বে ১৫ জন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের প্রত্যেকেই রানির আনুগত্য মেনে দেশ শাসন করেছেন। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন উইনস্টন চার্চিল এবং সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী সদ্য দায়িত্ব নেওয়া লিজ ট্রাস।
১৯৫২ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রধানমন্ত্রীরা
উইনস্টন চার্চিল
১৯৫১-১৯৫৫ পর্যন্ত উইনস্টন চার্চিল প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তখন চার্চিলের বয়স ৭৭। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ী মিত্রশক্তির অন্যতম নেতা তিনি। শুরুতে চার্চিলের তরফ থেকে অবজ্ঞাসূচক আচরণ পেয়েছিলেন রানি এলিজাবেথ। চার্চিল ২৫ বছর বয়সী রানিকে ‘কেবল একটি শিশু’ বলে মন্তব্যও করেছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পরই চার্চিলের সুর বদলে যায়। তিনি রানি এলিজাবেথ সম্পর্কে বলেন, ‘গোটা পৃথিবী তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও এই দায়িত্ব পালনের জন্য তার চেয়ে উপযুক্ত কাউকে পাওয়া যাবে না।’
একসময় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক বিরাজ করে।
অ্যান্টনি এডেন
রানির আমলে দুই বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন অ্যান্টনি এডেন। ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৫৬ সালে সুয়েজ খাল সংকটে অ্যান্টনি এডেন পদত্যাগে বাধ্য হন। তিনি কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ছিলেন।
হ্যারোল্ড ম্যাকমিলান
১৯৫৭ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হ্যারোল্ড ম্যাকমিলান। একবার ম্যাকমিলান রানি সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘এলিজাবেথ একজন রানি, তিনি কোনো পুতুল নন।’ ম্যাকমিলান অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর ছিলেন।
ডগলাস হোম
১৯৬৩ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ডগলাস হোম। তিনি রানির পারিবারিক বন্ধুও ছিলেন। তবে ডগলাস হোম এক বছরেরও কম সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
হ্যারোল্ড উইলসন
১৯৬৪ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এবং পরে দ্বিতীয় মেয়াদে ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন লেবার পার্টির নেতা হ্যারোল্ড উইলসন। রানির সঙ্গে তার বোঝাপড়া চমৎকার ছিল বলে মনে করা হয়।
এডওয়ার্ড হিথ
এডওয়ার্ড হিথ ১৯৭০ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কনজারভেটিভ পার্টির এই নেতা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পূর্বসূরি সংস্থা ইউরোপিয়ান ইকোনোমিক কমিউনিটিতে ব্রিটেনকে যুক্ত করেছিলেন।
জেমস কালাহান
১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত জেমস জেমস কালাহান ছিলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী। তার সময়ে যুক্তরাজ্যে ব্যাপক অর্থনৈতিক মন্দা এবং শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে সরকারের বিবাদ লেগে ছিল।
মার্গারেট থ্যাচার
ব্রিটেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মার্গারেট থ্যাচার। এলিজাবেথের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন তিনি। ১৯৭৯ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন থ্যাচার। তবে এলিজাবেথ-থ্যাচারের সম্পর্ক ছিল অম্লমধুর।
জন মেজর
১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত জন মেজর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি রানি সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘রানির সঙ্গে যে কোনো বিষয়ে কথা বলা যায়। এমন কোনো বিষয় যা হয়ত আপনি আপনার মন্ত্রিসভার সঙ্গে আলোচনা করতে ইচ্ছুক নন, সেসব বিষয়েও রানির সঙ্গে নিশ্চিন্তে আলোচনা করা যায়।’
টনি ব্লেয়ার
১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন টনি ব্লেয়ার। তিনি প্রথম ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যার জন্ম রানির শাসনামলে হয়েছিল। রানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ব্লেয়ারের প্রথম সাক্ষাতেই এ বিষয়টি নিয়ে রানি এলিজাবেথ কথা বলেছিলেন বলে জানা যায়। রানি টনি ব্লেয়ারকে বলেছিলেন, ‘তুমি আমার ১০ম প্রধানমন্ত্রী। প্রথমজন ছিলেন উইনস্টন চার্চিল। এটি অবশ্য তোমার জন্মের আগের কথা।’
গর্ডন ব্রাউন
২০০৭ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ছিলেন গর্ডন ব্রাউন। ২০১০ সালের নির্বাচনে লেবার পার্টির ভরাডুবির মাধ্যমে বিদায় নেন তিনি। এর পরে এখন পর্যন্ত ব্রিটেনের ক্ষমতায় যেতে পারেনি লেবার পার্টি।
ডেভিড ক্যামেরন
ডেভিড ক্যামেরন ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এলিজাবেথের শাসনামলে ক্যামেরন ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। তিনি রানির ছেলে প্রিন্স এডওয়ার্ডের সঙ্গে হিদারডাউন স্কুকে পড়াশোনা করেছিলেন। ব্রেক্সিট গণভোটের পর পদত্যাগ করেছিলেন তিনি।
থেরেসা মে
২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তিন বছর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন থেরেসা মে। তার সময় পুরোটাই ছিলো ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। থেরেসা মে ব্রেক্সিট চুক্তি পার্লামেন্ট অনুমোদনের জন্য তিন বার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে পদত্যাগ করেছিলেন।
বরিস জনসন
২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন বরিস জনসন। ব্রেক্সিট আন্দোলনের শীর্ষ নেতা ছিলেন তিনি। তিনি ব্রেক্সিট চুক্তি সম্পন্ন ও বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হলেও তার সময়ে করোনাভাইরাস মহামারি ছিল বড় সংকট। এছাড়া তিনি পার্টিগেট কেলেঙ্কারির কারণে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন। সম্প্রতি তিনি পদত্যাগ করেন।
লিজ ট্রাস
মৃত্যুর আগে সর্বশেষ রাজকীয় দায়িত্ব হিসেবে লিজ ট্রাসকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। গত ৬ সেপ্টেম্বর স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে লিজ ট্রাসকে মন্ত্রিসভা গঠনের নির্দেশ দেন রানি।
এর দুই দিন পরই রানি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সারাবাংলা/আইই